অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক
ভূমিকা: অধিকার ও কর্তব্য একটি সমাজ বা রাষ্ট্রের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা নাগরিকদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সুশৃঙ্খলভাবে জীবনযাপন করতে সহায়তা করে। আধুনিক রাষ্ট্র নাগরিকদের বিভিন্ন অধিকার প্রদান করে, যার মাধ্যমে তারা তাদের জীবন উন্নত করে। তবে অধিকারের পাশাপাশি নাগরিকদের কর্তব্যও পালন করতে হয়। অধ্যাপক লাস্কির কথায়, “অধিকার এবং কর্তব্য একই সত্তার দুটি দিক।” অর্থাৎ, একজন নাগরিক তার অধিকারের পাশাপাশি কর্তব্যও পালনে বাধ্য।
অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক:
উৎপত্তিগত সম্পর্ক: অধিকার ও কর্তব্যের উৎপত্তি সমাজ থেকেই। সমাজের উন্নতির জন্য নাগরিকদের অধিকার দেওয়া হয়, আর সেই অধিকার অর্জনের বিনিময়ে তারা কর্তব্য পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, একজন শিক্ষক শিক্ষাদানের অধিকার পেয়ে সমাজের কল্যাণে শিক্ষা প্রদান করে তার কর্তব্য পালন করে।
একই বস্তুর দুটি দিক: অধিকার ও কর্তব্য একই মুদ্রার দুই পিঠ। একটি ছাড়া অন্যটির অস্তিত্ব নেই। অধিকার উপভোগ করতে হলে তার সাথে সম্পর্কিত কর্তব্যও পালন করতে হয়। যেমন, একজন নাগরিকের শিক্ষার অধিকার থাকলে তার সন্তানদের শিক্ষিত করা কর্তব্য।
আরো পড়ুনঃ রাষ্ট্রের উপাদানসমূহ আলোচনা
কর্তব্য পালনের জন্য অধিকার প্রয়োজন: কর্তব্য পালন করতে হলে নাগরিকদের অধিকার থাকা আবশ্যক। যেমন, রাষ্ট্রীয় আইন মান্য করা বা কর প্রদান করা নাগরিকদের কর্তব্য। কিন্তু এই কর্তব্য পালনের জন্য নাগরিকদের স্বাধীনভাবে জীবিকা নির্বাহের অধিকার প্রয়োজন।
একজনের অধিকার অন্যজনের কর্তব্য: কেউ যদি একটি অধিকার উপভোগ করে, তবে অন্যের দায়িত্ব হয় সেই অধিকারকে সম্মান করা। উদাহরণস্বরূপ, রাস্তায় চলার স্বাধীনতা আমার অধিকার, কিন্তু অন্যের দায়িত্ব হলো আমাকে সেই স্বাধীনতা ভোগ করতে দেওয়া।
নৈতিক অধিকার ও কর্তব্য: নীতিগতভাবে অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। যেমন, পিতামাতার সন্তানদের লালন-পালন করা নৈতিক কর্তব্য। আবার পিতামাতার বৃদ্ধ বয়সে তাদের যত্ন নেওয়া সন্তানদের নৈতিক কর্তব্য। এটি পিতামাতার অধিকার এবং সন্তানের কর্তব্য।
আরো পড়ুনঃ ম্যাকিয়াভেলীবাদ কি? ম্যাকিয়াভেলীকে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয় কেন?
উপসংহার: অধিকার ও কর্তব্য পরস্পরের পরিপূরক এবং নিবিড় সম্পর্কযুক্ত। একটি ছাড়া অপরটি অসম্পূর্ণ। অধিকারের সাথে কর্তব্য সম্পর্কিত না থাকলে সমাজে শৃঙ্খলা ও সমতা বজায় রাখা সম্ভব নয়। সুতরাং, অধিকার ভোগ করতে হলে কর্তব্যও পালনে সচেতন হতে হবে।