রাজা কোন অন্যায় করতে পারে না ব্যাখ্যা কর।
ভূমিকা: ব্রিটেনের প্রচলিত একটি ধারণা হলো “রাজা কোনো অন্যায় করতে পারে না”। এই ধারণাটি প্রায়ই বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে, কারণ কোনো মানুষই ন্যায়-অন্যায়ের ঊর্ধ্বে নয়। তবুও, এই প্রথাটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে এবং তা ব্যক্তিগত রাজার প্রতি নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক রাজতন্ত্রের প্রতি নির্দেশ করে। বর্তমানে ব্রিটেনে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র বিদ্যমান, যেখানে রাজার ভূমিকা প্রতীকী এবং প্রকৃত ক্ষমতা রাজনৈতিক নেতাদের হাতে থাকে।
রাজা কোনো অন্যায় করতে পারে না:
আরো পড়ুনঃ বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা কি?
“রাজা কোনো অন্যায় করতে পারে না” – এই ধারণাটি আইন ও শাসনব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। এটি মূলত সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের একটি বৈশিষ্ট্য যেখানে রাজা বা রানির নিজস্ব কোনো ক্ষমতা থাকে না এবং তারা সরকার পরিচালনায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেন না। ফলে, রাজার কোনো সরকারি কার্যক্রমে জবাবদিহি করতে হয় না, বরং মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের সেই দায়িত্ব পালন করতে হয়।
১. প্রাতিষ্ঠানিক রাজা ও ব্যক্তিগত রাজা: এই ধারণাটি রাজার ব্যক্তি নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক রাজার সম্বন্ধে বলা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রাজা সমস্ত সরকারি কাজের প্রতিনিধি হলেও, তিনি সেই কাজগুলোর দায়ভার বহন করেন না। মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রীগণই রাজার পক্ষ থেকে সরকারি কাজ পরিচালনা করেন এবং সেই কাজের জন্য জবাবদিহি করেন।
২. রাজার ক্ষমতা সীমিত: ব্রিটেনে রাজার নিজস্ব ক্ষমতা নেই। তার স্বাক্ষরিত কোনো সরকারি দলিল বা নির্দেশনা তখনই বৈধ হয় যখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এতে সহ-স্বাক্ষর করেন। রাজার কার্যক্রমে মন্ত্রীদের প্রতি-স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক, যা রাজার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করে এবং সরকারি কার্যক্রমে মন্ত্রীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করে।
৩. সরকারি দায়িত্ব মন্ত্রীর: যেকোনো সরকারি কাজে রাজার ভূমিকা শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক। মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রীরা সরাসরি ক্ষমতা প্রয়োগ করেন এবং তারাই দায়িত্বশীল। ১৯৪৭ সালের রাজকীয় কার্য আইনে বলা হয়েছে, রাজার নামে পরিচালিত যেকোনো কার্যক্রমের জন্য মন্ত্রীই দায়ী থাকবেন। ফলে, রাজাকে কোনো সরকারি সিদ্ধান্ত বা কার্যক্রমের জন্য আদালতে অভিযুক্ত করা যায় না।
আরো পড়ুনঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘Spoil system’ কী?
সমালোচনা এবং বাস্তবতা:
যদিও ধারণাটি হলো “রাজা কোনো অন্যায় করতে পারে না”, কিন্তু এর মূল কারণ হচ্ছে, রাজার ক্ষমতা প্রায় প্রতীকী এবং বাস্তব ক্ষমতা পুরোপুরি মন্ত্রিপরিষদের হাতে কেন্দ্রীভূত।
১. রাজার প্রতীকী ভূমিকা: ব্রিটেনের বর্তমান সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে রাজা বা রানির ভূমিকা শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক। তাদের কার্যক্রম মূলত মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়। ফলে, রাজা বা রানি সরাসরি সরকারি কাজের দায়িত্বে নেই এবং কোনো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেন না।
২. আদালতে রাজার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা সম্ভব নয়: ব্রিটিশ সংবিধান অনুযায়ী, রাজা বা রানির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের মামলা করা যায় না, কারণ তারা আইনত দায়িত্বে নেই। রাজার কাজের জন্য মন্ত্রীগণ জবাবদিহি করে থাকেন এবং এই ব্যবস্থায় রাজার ভূমিকা প্রতীকী হয়ে দাঁড়ায়।
আরো পড়ুনঃ সিনেটের সৌজন্য বিধি
উপসংহার: “রাজা কোনো অন্যায় করতে পারেন না” – এই ধারণাটি মূলত সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের প্রেক্ষিতে বিবেচিত। রাজার কোনো ক্ষমতা নেই এবং তিনি নিজে কোনো সরকারি কাজে দায়িত্ব পালন করেন না, ফলে তিনি কোনো অন্যায় করতে পারেন না। সরকারি কার্যক্রমের জন্য মন্ত্রীদের জবাবদিহি করতে হয়, এবং রাজার ভূমিকা মূলত প্রতীকী এবং আনুষ্ঠানিক। সিডনা লোর মতে, রাজা শুধু একটি অনুমোদনকারী ক্ষমতা হিসেবে কাজ করেন, তাই তিনি ব্যক্তিগতভাবে অন্যায় করতে পারেন না।