দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ধাপ সমূহ আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই কম বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হয়ে থাকে। যথা: বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, হারিকেন, টাইফুন, সুনামী, সিডর, আগ্নেয়গিরির উদগীরণ প্রভৃতি। এসব প্রাকৃতিক ঘটনার ফলে মানুষ মারা যায়। পশু-পাখি জীবজন্তু মারা যায়, গাছ পালা ভেঙ্গে যায়, অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়ে প্রভৃতি ক্ষতি সাধন হয়। এসব ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
দুর্যোগের অর্থঃ Disester ইংরেজি শব্দের প্রতিশব্দ হলো দুর্যোগ আর disaster ইংরেজি শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ Desaster থেকে। অনেকে ইসলামী শব্দ Diastno থেকে এসেছে। আবার কেউ মনে করে গ্রীক শব্দ Diasmo শব্দ থেকে এসছে গ্রিক Dis অর্থ মন্দ বা খরাপ এবং ৯৬ অর্থ তারা গ্রিক রেভাতির্বিদরা মনে করতেন কোনো তারা খারাপ অবস্থায় থাকলে খারাপ ঘটনা ঘটবে। উৎপত্তিগত অর্থে দুর্যোগ বলতে বুঝায়, যা মানুষকে মন্দ বা অকল্যাণকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করে।
আরো পড়ুনঃ মানব ইতিহাসে শিল্প বিপ্লবের প্রভাব
দুর্যোগের সংজ্ঞা: পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই যেখানে প্রকৃতিক দুর্যোগ নেই। সাধারণত মানব জীবনে ভারসাম্যহীনতা এবং পরিবেশের ব্যাপক ধ্বংস সাধনের সমন্বয়ই হলো দুর্যোগ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা: দুর্যোগ সম্বন্ধে বিভিন্ন তাত্ত্বিক তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন নিম্নে তা বর্ণিত হলো:
(i) Quarajnhtelli and Dynes এর মতে, “The more appropriate definition assumes that disaster is primarily a social phenomenon and is this identity in social terms.
(ii) Burton বলেন, “Sudden and violent change in the physical. Environment threatening 60 life and property.”
(iii) স্যামুয়েল বলেছেন, “এসব কোনো চরম ঘটনা বা পরিস্থিতি যা মানুষ ও তার পরিপার্শ্বিকতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং স্বাভাবিক জীবনধারাকে বিপর্যস্ত করে এমন পর্যায়ে নিয়ে যায় যা ঐ আক্রান্ত সমাজের পক্ষে মোকাবিলা করা কষ্টসাধ্য বা ক্ষেত্র বিশেষে অসম্ভব হয়ে পড়ে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় গৃহীত ধাপ/পদক্ষেপসমূহ: দুর্যোগের ফলে মানবজাতি যে ক্ষতির সম্মুখীন হয় তা থেকে রক্ষা পেতে ও ক্ষতির পরিমাণ কমাতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হয়। নিম্নে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বর্ণনা করা হলো-
১. দুর্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রবেশঃ দুর্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রবেশে করণীয় বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো-
- দুর্যোগ যদি মারাত্মক হয় তবে তাদের জীবন রক্ষায় ত্রাণসামগ্রী ও নগদ অর্থসহ দল প্রেরণ করা হয়ে থাকে।
- দুর্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আগে থেকেই যদি কোনো প্রকল্প থেকে থাকে তবে তৎপরতা শুরুর কাজে প্রকল্পের কার্মচারীদের ব্যবহার করা।
- প্রশাসন ও স্থানীয় NGO এর মাধ্যমে জরিপ দল প্রেরণ করা।
- কবলিত এলাকার জনগণের সহায়তা নেওয়া।
২. স্থানীয় জনসাধারণের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করাঃ দুর্যোগপ্রবণ এলকায় জনসাধারণের সাথে অন্য জনগণের যোগসূত্র স্থাপন করা। নিম্নে প্রক্রিয়া দেওয়া হলো-
- অর্থ চুরি যাওয়া, ত্রাণসামগ্রী লুট হওয়া অথবা ত্রাণ কর্মীদের উপর আক্রমণ হওয়ার মতো ঘটনার মোকাবেলা জনগণের সাথে যোগসূত্র করা।
- নির্ভরশীলযোগ্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে যোগসূত্র করা।
- কোনো সংস্থা বা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জনসাধারণের যোগসূত্র তৈরি করা।
৩. নিরাপত্তা জোরদার ও প্রতিরোধ: দুর্যোগ কবলিত জনগণের নিরাপত্তা ও ত্রাণসামগ্রী রক্ষার্থে পদক্ষেপসমূহ-
- অর্থ চুরি হওয়া, ত্রাণ সামগ্রী লুট হওয়া অথবা ত্রাণ কর্মীদলের উপর আক্রমণ হওয়ার মতো ঘটনার মোকাবিলা করা।
- লুট হওয়া বা আক্রমণের ঘটনা এড়াতে স্থানীয় প্রশাসনের শরণাপন্ন হওয়া।
- পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রহরীর ব্যবস্থা করা।
৪. উদ্ধার তৎপরতা: পদক্ষেপসমূহ:
- প্রয়োজনীয়, সরঞ্জাম একত্রিত করা;
- প্রশিক্ষিত ও সংগঠিত উদ্ধার দল নিশ্চিত করা;
- যানবাহন ও স্বেচ্ছাসেবকদের সংগঠিত করা;
- চিকিৎসা দল গঠন করা।
- প্রাথমিক চিকিৎসা
৫. প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা: সম্পর্কিত পদক্ষেপসমূহ-
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশে সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহ
(i) পর্যাপ্ত প্রাথমিক চিকিৎসা ফিট ব্যাগ তৈরি করা;
(ii) প্রাথমিক চিকিৎসকের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা;
(iii) পর্যাপ্ত ঔষধপত্রের ব্যবস্থা করা;
(iv) পর্যাপ্ত চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা।
৬. মানুষ ও পশুপাখির মৃতদেহ সমাহিত করা: দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় মানুষ ও পশুপাখির মৃতদেহ সমাহিত করার কার্যক্রম নিম্নরূপ হবে।
(i) দল তৈরি করে মৃতদেহ এবং মৃত পশুপাখি সমাহিত
করার ব্যবস্থা করা।
(ii) কিছু মৃত পশুপাখি নদী-সাগরে নিক্ষেপ করা;
iii) জায়গার অভাব হলে গণ কবরের ব্যবস্থা করা;
(iv) সমাহিত কাজে আত্মীয়স্বজনের সাহায্য নেওয়া;
(v) টাকার বিনিময়ে সুইপার ভাড়া করা।
৭. খাদ্য বিতরণ করা দুর্যোগকবলিত এলাকায় খাদ্য
বিতরণের পদক্ষেপ আলোচনা করা হলো-
(i) ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় (ii)
অবস্থিত NGO গুলো বিবেচনা করা;
নিরাপদ স্কুল, সামাজিক ও ক্লাবকে চিহ্নিত করা;
(iii) অস্থায়ী ত্রাণ শিবির ও বিবেচনা করা;
(iv) গ্রামভিত্তিক বিতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা;
(v) প্রয়োজনে বাড়ি গিয়ে খাদ্য বিতরণ করা।
৮. নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থা করা দুর্যোগ কবলিত
এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহের জন্য পদক্ষেপসমূহ-
(i) দুর্যোগের সময় আমরা পরবর্তীতে এলাকায় বিশুদ্ধ পানির
ব্যবস্থা করা;
(ii) যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রেখে গভীর নলকূপের ব্যবস্থা করা;
(iii) পুকুর ও দীঘির পানিকে প্রক্রিয়াকরণ করে খাবারযোগ্য করা: (iv) ফিটকিরি অথবা বিশুদ্ধকরণ ঔষধ দেয়ার মাধ্যমে পানিকে বিশুদ্ধ করা।
আরো পড়ুনঃ পেশা কাকে বলে?
৯. চিকিৎসা সাহায্যে: দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। মারাত্মক আঘাতে হাড় ভাঙ্গন, প্রসব বিষয়ক জটিলতা, মাপে কাঁটা, ডাইরিয়া, কলেরা, জ্বর, টাইফয়েড রোগ থেকে রক্ষার জন্য চিকিৎসা সাহায্য করা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হয়ে থাকে। এসব দুর্যোগ থেকে রক্ষা উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, প্রতিটি দেশেই ও দ্রুত ক্ষতির পরিমাণ প্রশমন করতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ গ্রহণের ফলে দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষতির পরিমাণ ও ক্ষতির অতীব জরুরি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উপরিউক্ত পদক্ষেপগুলো আশঙ্কা অনেকাংশে কমানো সম্ভব।