সমষ্টি সংগঠন কাকে বলে? 

সমষ্টি সংগঠন কাকে বলে? 

ভূমিকা: সমষ্টি সংগঠন সমাজকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, যার মাধ্যমে সমাজের জনগণের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের জন্য ঐ জনগোষ্ঠীকে একত্র করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে জনগণের নিজস্ব ক্ষমতা ও সম্পদের সঠিক ব্যবহার করে সমাজের উন্নয়ন ও কল্যাণ নিশ্চিত করা হয়। সমাজের কোন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বা গোষ্ঠীতে যখন একাধিক সমস্যা দেখা দেয়, তখন সমষ্টি সংগঠন পদ্ধতির মাধ্যমে জনগণের অংশগ্রহণে এসব সমস্যা সমাধান করা হয়।

সমষ্টি সংগঠন: 

সমষ্টি সংগঠন হল সমাজকর্মের এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে কোন নির্দিষ্ট এলাকার জনসমষ্টির সমস্যাবলি খুঁজে বের করে, তাদের সম্পদ ও শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সমস্যা মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এটি মূলত একটি সমন্বিত পদ্ধতি যা সমষ্টির প্রয়োজন ও সম্পদের মধ্যে সামঞ্জস্য স্থাপন করে।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশে সমাজকর্ম পদ্ধতির গুরুত্ব

প্রামাণ্য সংজ্ঞা:

Marry G. Ross বলেন, “সমষ্টি সংগঠন এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে সমষ্টির প্রয়োজন বা লক্ষ্য চিহ্নিত করে এবং সেসব প্রয়োজন পূরণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।”

W. A. Friedlander বলেন, “সমষ্টি সংগঠন এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে কোন নির্দিষ্ট এলাকার সমাজকল্যাণের প্রয়োজনসমূহ চিহ্নিত ও তা পূরণে প্রয়োজনীয় সম্পদের ব্যবহার করা হয়।”

C. F. McNail এর মতে, “সমষ্টি সংগঠন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমষ্টির সদস্যরা একত্র হয়ে সমাজকল্যাণের চাহিদা পূরণের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করে এবং প্রয়োজনীয় সম্পদ সংগ্রহ করে।”

সমষ্টি সংগঠনের উপাদানসমূহ:

১. জনসমষ্টি: জনসমষ্টি হলো সমষ্টি সংগঠনের প্রধান উপাদান। এটি ছাড়া কোন সমষ্টি সংগঠন কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। জনসমষ্টির সমস্যা ও প্রয়োজন চিহ্নিত করা এবং সমাধানের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

২. সমষ্টির প্রয়োজন: সমষ্টি সংগঠনের অন্যতম প্রধান উপাদান হল জনসমষ্টির প্রয়োজন ও সমস্যা। যদি কোন জনসমষ্টির প্রয়োজন বা সমস্যা না থাকে, তাহলে সমষ্টি সংগঠন কার্যক্রম চালানোর প্রয়োজন পড়ে না। সমস্যাগ্রস্ত জনগণই এই পদ্ধতির মূল লক্ষ্য।

৩. স্থানীয় উদ্যোগ: সমষ্টি সংগঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো স্থানীয় উদ্যোগ। সমস্যার সমাধানে জনসমষ্টির স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়। যদি স্থানীয় প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তখনই এজেন্সির সহযোগিতার প্রয়োজন হয়।

৪. সমষ্টি সংগঠনকর্মী: সমষ্টি সংগঠনকর্মী হলেন সমাজকর্মের দক্ষ পেশাদার। তার পেশাগত দক্ষতা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তিনি জনসমষ্টিকে সংগঠিত করে সমস্যার সমাধানে কাজ করেন।

৫. প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি: সমস্যার সমাধানের জন্য সঠিক প্রক্রিয়া বা পদ্ধতির প্রয়োজন। সমষ্টি সংগঠনের প্রক্রিয়া পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কার্যক্রম পরিচালনার সঠিক উপায় নির্ধারণ করে।

আরো পড়ুনঃ সমাজকর্ম পদ্ধতি কাকে বলে?

৬. তথ্য সংগ্রহ ও সমস্যা চিহ্নিতকরণ: সমষ্টি সংগঠনের মাধ্যমে জনসমষ্টির সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয় এবং তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এরপর এই তথ্য বিশ্লেষণ করে সঠিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

৭. যোগাযোগ: সঠিক যোগাযোগ ছাড়া সমষ্টি সংগঠন কার্যক্রম সফল হয় না। সমষ্টি সংগঠনের কর্মী জনসমষ্টি, এজেন্সি এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ স্থাপন করে। কার্যকর যোগাযোগের মাধ্যমেই সমষ্টি সংগঠন সফলভাবে পরিচালিত হয়।

৮. মূল্যায়ন: যে কোনো কার্যক্রম বাস্তবায়নের পর তার সঠিক মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। সমষ্টি সংগঠনের কার্যক্রমের ভুলত্রুটি চিহ্নিত করে পরবর্তীতে তা সংশোধন করা হয়, যাতে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো আরও কার্যকর হয়।

উপসংহার: সমষ্টি সংগঠন পদ্ধতি সমাজের জনসাধারণকে এমনভাবে সাহায্য করে, যাতে তারা নিজেদের সমস্যা চিহ্নিত করতে পারে এবং নিজেরাই সমাধানের পথে অগ্রসর হয়। এই পদ্ধতি সমস্যা সমাধানের জন্য জনসাধারণের সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে এবং সমাজের সার্বিক কল্যাণে কাজ করে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে সমষ্টি সংগঠন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, যা সমাজের সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক।

Shihabur Rahaman
Shihabur Rahaman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 252