বাংলাদেশে সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহ

বাংলাদেশে সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহ আলোচনা করো। 

ভূমিকা: বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দূর্যোগপূর্ণ এলাকার একটি দেশ। প্রায় প্রতিবছর কোনো না কোনো দুর্যোগ হানা দেয়। আর এতে বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাছাড়া দূর্যোগের কারণে দেশের কাঠামোগত পরিবর্তন আসে। এসব দূর্যোগসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ভূমিকম্প। তবে এগুলো আমাদের দেশের উপর বেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

প্রাকৃতিক দূর্যোগ কিঃ বন্যা, ঘূর্নিঝড়, নদীভাঙ্গনের মত মানবসৃষ্ট নয় তেমন দুর্ঘটনা সমূহকে বলা হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সহজ কথায়, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট দুর্যোগসমূহ হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সাধারণত, ভৌগালিক কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা ছোট হোক কিংবা বড় এর ক্ষতিকর প্রভাব পরিবেশ ও মানবজীবনের উপর দীর্ঘদিন থেকে যায়।

আরো পড়ুনঃ মানব ইতিহাসে শিল্প বিপ্লবের প্রভাব

বাংলাদেশে সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহঃ নিম্নে যেসব প্রাকৃতিক দূর্যোগ আমাদের দেশে সাধারণত হয়ে থাকে তার বিবরণ দেয়া হলে:

১. বন্যাঃ প্রাকৃতিক দূর্যোগের মধ্যে বন্যা একটি অতি পরিচিত নাম। কারণ বাংলাদেশ নদীনালার দেশ। এদেশে ২৩০টিরও বেশি নদী আছে। বন্যার কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার লোক ঘরবাড়ি ছাড়ছে। বহু ফসলের জমি নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বন্যা কবলিত মানুষ। সাধারণত বন্যা হয়ে থাকে অতিবৃষ্টির কারণে নদীর নাব্যতার কারণে। বন্যার ফলে দেশে অনেক অভাব অনটন দেখা যায়। গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বন্যা হয়েছে ১৯৯৮ সালে। তাছাড়া ২০০৪ সালেও বন্যা বেশ ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল।

২. খরাঃ খরা বাংলাদেশের একটি অতি পরিচিত প্রাকৃতিক দূর্যোগগুলোর মধ্যে একটি। বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খরা ব্যাপক আকার দেখা দিয়েছে। খরার কারণে এদেশে বহু লোক মারা যায়। বিশেষত খরার কারণে ফসলের ফলন ভালো হয় না। বর্তমানে উত্তরবঙ্গে খরার কবলে পড়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে। কারণ সেখানে প্রায় মরুকরণ হয়ে গেছে সব।

৩. ঘূর্ণিঝড়ঃ  বাংলাদেশে প্রায় গ্রীষ্মকালীন সময়ে ঝড় হয়ে থাকে। তবে ঘূর্ণিঝড় খুব একটা দেখা না গেলেও এটি হলে তা প্রকট আকার ধারণ করে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়, মানুষসহ অনেক গবাদি পশুও গাছপালা নষ্ট হয়। বায়ু ঘূর্ণিঝড়ে চারদিকে ঘুরতে থাকে এবং নিচে চাপ তৈরী করে।

৪. নদীভাঙনঃ  বাংলাদেশ নদীনালার দেশ বলে প্রায় প্রতিবছর এদেশে নদীভাঙ্গনে অনেক লোক উদ্বাস্তু হয়ে যায়। বেশির ভাগ মেঘনা, যমুনা, পদ্মার পাশে যারা থাকে তাদের জীবন অনিশ্চিত। নদীভাঙ্গনের ফলে বসতবাড়ির পাশাপাশি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

৫. ভূমিকম্পঃ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা না হলেও প্রায় বছরে একবার করে ভূমিকম্প এদেশে সংঘটিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে বিশেষ করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি সিলেট এলাকায় ভূমিকম্প বাংলাদেশে জনমানুষ মারা যায় এবং বহু ঘরবাড়ি, দালানকোঠা ফেটে যায়।

আরো পড়ুনঃ সমাজকর্মের সাথে সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক নিরূপণ

৬. ভূমিধসঃ ভূমিধস বর্তমানে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ির মত পাহাড়ি অঞ্চলগুলোর জন্য হুমকিস্বরূপ। ২০১৭ সালের জুনে রাঙামাটিতে ভূমিধসে ১২০ জন প্রাণ হারায়৷ একই বছর চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানে পাহাড়ধসে অন্তত ১৬২ জনের মৃত্যু হয়। বিশেষকরে, বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে ভূমিধস বেড়ে যায়।

৭. জলোচ্ছ্বাসঃ জলোচ্ছ্বাস হলো পানির ফেপে উঠা সমুদ্রে বাতাসের চাপের আধিক্য থাকার কারণে সমুদ্রের পানি যখন ফেপে উঠে তখন সৃষ্টি হয় জলোচ্ছ্বাস। জলোচ্ছ্বাসের ফলে ফসলের জমি থেকে শুরু করে উপক্লীয় এলাকার প্রায় সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়।

৮. রোগ ও মহামারিঃ বর্তমানে বংলাদেশে ইনফ্লুয়েন্স ভাইরাস একটি অতি পরিচিত নাম। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বহু শুরু, ছাগল মারা যায়। তাছাড়া বার্ড। নিপা ভাইরাসের মত ভয়ংকর রোগ এদেশে বাসা বেঁধেছে। যদিও আজ এ রোগগুলো খুব একটা দেখা যায় না।

৯. মরুকরণ ও ভূমিক্ষয়: বর্তমানে বাংলাদেশে অনাবৃষ্টির কারণে ফসলের জমিগুলো মরুকরণ হয়ে যাচ্ছে। ফসলের জমির। উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। আবার ভূমিক্ষয় হলো এদেশের জন্য আরেকটি দূর্যোগ। কারণ অতিবৃষ্টি বা বন্যার কারণে ভূমিক্ষয় হচ্ছে এটি অত্যন্ত ক্ষতিকর।

১০. ফলাফলঃ প্রাকৃতিক দূর্যোগ এর ফলে বাংলাদেশে ব্যাপক সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারণ বাংলাদেশের তাপমাত্রা দিন দিন বেড়ে চলেছে। আর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হচ্ছে। পানির স্তর নিচে চলে যাচ্ছে। তাই মরুকরণ তৈরি হচ্ছে। মোট কথা প্রাকৃতিক দূর্যোগ এর ফলে বাংলাদেশে বহু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ সামাজিক সমস্যা কাকে বলে?

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাকৃতিক দূর্যোগ আমাদের দেশের জন্য একটি মারাত্মক ক্ষতিকর। প্রতিবছর অনেকন ক্ষয়ক্ষতি প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে হয়ে থাকে। তাই এসক প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আর বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়ে সবাইকে অবহিত করতে হবে। তবে এর ক্ষতির পরিমাণ হয়ত কিছুটা কমানো সম্ভব

Shihabur Rahaman
Shihabur Rahaman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 263