বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনে একসময় বাথান বা চারণ ভূমি ছিল একটি সুপরিচিত চিত্র। বিস্তৃত তৃণভূমিতে গবাদি পশুর পাল উন্মুক্তভাবে বিচরণ করে ঘাস খায় এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এই বাথানেই অবস্থান করে। এই প্রাকৃতিক উপায়ে পশু পালনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল একটি স্বনির্ভর খামার জীবন ও দুগ্ধ উৎপাদনের ভিত্তি।
এককালে দেশের নানা প্রান্তেই বাথানভূমির দেখা মিললেও বর্তমানে তা সংকুচিত হয়ে এসেছে। বর্তমান সময়ে চলনবিল সংলগ্ন সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর, নাটোর, হাওরাঞ্চল এবং নদী ভাঙনের চরাঞ্চলেই মূলত কিছু অস্থায়ী বাথান টিকে আছে। বিশেষ করে শীতকালে সিলেট, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা এবং কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকায় এসব অস্থায়ী চারণভূমি গড়ে ওঠে, যা গবাদিপশুর মৌসুমি আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রায় ১,২০০ একর আয়তনের একটি বিশাল বাথানভূমি রয়েছে, যা দেশের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ ও সুপরিকল্পিত চারণভূমি। এখানকার প্রাকৃতিক অবস্থা এবং ঘাসের প্রাচুর্যের কারণে শাহজাদপুরে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও আধুনিক দুগ্ধশিল্প। এই অঞ্চলের দুগ্ধ উৎপাদন ও পশুপালন ব্যবস্থার সাফল্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেশের বৃহত্তম দুগ্ধপ্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা ‘মিল্ক ভিটা’, যা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
সুতরাং বলা যায়, শাহজাদপুরের ঐতিহ্যবাহী বাথানভূমি শুধু গবাদিপশুর চারণ ক্ষেত্র নয়, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষি-অর্থনৈতিক অবকাঠামোর অংশ, যা এখনও দেশের দুগ্ধশিল্পের অন্যতম প্রাণভোমি হিসেবে বিবেচিত হয়।
উৎস: সিরাজগঞ্জ জেলা ওয়েবসাইট এবং বাংলাপিডিয়া