শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়া রোধে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ

Avatar

Shihabur Rahman

Academic

শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়া রোধে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ আলোচনা কর। 


ভূমিকা: শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। একটি জাতির আর্থসামাজিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। বর্তমান বাংলাদেশের প্রায় শতভাগ শিশুরা প্রাথমিক বিদ্যালয় ভর্তি হয়ে থাকেন কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পূর্বেই তারা বিভিন্ন বাধা-বিপত্তিতে ঝরে পরে। শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ আলোচনা করার পূর্বে শিক্ষার্থী কেন ঝরে পড়ছে তা জানা আবশ্যক। এখানে পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণ এবং তা রোধ করতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ আলোচনা করা হলো:


শিক্ষার্থী ঝরে পরার কারণ

প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ঝরে পরার নানাবিধ কারণ রয়েছে নিম্নে তা ব্যাখ্যা করা হলো:


আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থার উপর ইসলাম ধর্মের প্রভাব


দারিদ্র: প্রাথমিকেই শিশুদের ঝরে পড়ার প্রধান কারণ হলো দারিদ্রতা। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করা শিশুগুলো তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতেই ব্যর্থ হয় এক্ষেত্রে শিক্ষা গ্রহণ তাদের কাছে আকাশ ছোঁয়ার মতো। 


শিশুশ্রম: আইনের খাতায় শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও এদেশের সর্বাঙ্গনে শিশুশ্রম পরিলক্ষিত।এদেশের সমাজব্যবস্থা অভাবে জর্জরিত তাই পিতা মাতা কিছু বেশী রোজগার এবং উন্নত জীবনের আশায় তাদের শিশুকে পাঠদানের পরিবর্তে পরিশ্রমে নিয়োগ করে। আর এভাবেই শিশুশ্রম শিক্ষার্থী ঝরেপড়া একটি অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


শিক্ষকদের আচরণ: প্রাথমিকের সিংহভাগ শিক্ষকই সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত নন এবং ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল নন। যার ফলশ্রুতিতে তারা ছোট্ট শিক্ষার্থীদের সামনে উপযুক্ত আচরণ প্রদর্শনে ব্যর্থ। তাই শিশুরা তাদের শিক্ষকদের আচরণকে রাগান্বিত ও অত্যাচারী চরিত্রের ধরে নেয় এবং অনেকে স্কুলবিমুখ হয়ে পরে।


অসচেতনতা: প্রাথমিক শিক্ষা একটি শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনে কিরূপ ফলাফল বয়ে আনতে পারে তার সম্পর্কে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবক এমনকি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সচেতন নয়। তাই তারা শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধ করতে তেমন কোনো ভূমিকা গ্রহণ করেন না। আর এভাবেই অসচেতনতার জন্য শিক্ষার্থী ঝরে পরার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।


অহেতুক ভয়: শিশুমন কৌতূহলপূর্ণ তাই তারা সর্বদা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে। তারা মনে করেশিক্ষকরা অনেক কঠোর চরিত্রের পড়া না পারলে শিক্ষকরা অনেক শাস্তি দেবেন। তাই তারা চিরতরে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।


প্রাকৃতিক বিপর্যয়: বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। এ দেশে প্রতিবছর বন্যা ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে গ্রাম অঞ্চল সহ বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পাঠদানের অযোগ্য হয়ে পড়ে বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এতে করে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের একটি বিরাট অংশের শিক্ষা থেমে যায়।


ভৌগলিক অবস্থান: আমাদের দেশের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি এবং অর্থনৈতিকভাবে আমরা পশ্চাৎপদ। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে আমাদের দেশে। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থানগত নৈকট্য না থাকা অথবা ভৌগোলিক দূরত্ব অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পরার কারণ।


আরো পড়ুনঃ গণতন্ত্রের সফলতার শর্তগুলো


শিক্ষার্থী ঝরে পড়া বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। প্রাথমিক স্তর থেকেই শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উঠে এই সমস্যা আরও তীব্র হয়। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার কারণ সমাজ-অর্থনৈতিক, পারিবারিক, মানসিক, শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি ইত্যাদি। এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

প্রাথমিক স্তরে:

  • প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও বিনামূল্যে করা
  • বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ
  • স্কুল পোশাক ও উপকরণ বিতরণ
  • মধ্যাহ্নভোজ কর্মসূচি
  • শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও মানসম্পন্ন শিক্ষাদান নিশ্চিত করা
  • স্কুল পরিবেশ উন্নত করা

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে:

  • মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বৃত্তি প্রদান
  • মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বৃত্তি
  • দুস্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য छात्रवृत्ति
  • স্কুল-কলেজে আধুনিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা
  • কারিগরি ও কৃষি শিক্ষার উপর গুরুত্ব প্রদান
  • শিক্ষার্থীদের জন্য কাউন্সেলিং ব্যবস্থা
  • স্কুল-কলেজে নিয়মিত মনিটরিং

উচ্চশিক্ষা স্তরে:

  • উচ্চশিক্ষায় সকলের জন্য সুযোগ বৃদ্ধি: উচ্চশিক্ষায় সকলের জন্য সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
  • মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি: মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরণের উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।
  • গবেষণায় বৃদ্ধি: উচ্চশিক্ষায় গবেষণার বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উচ্চতর জ্ঞান অর্জনের সুযোগ বৃদ্ধি করা হচ্ছে।


আরো পড়ুনঃ বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা কি?


উপসংহার: উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ অবস্থা প্রতীয়মান যে,  শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক অবস্থাতেই ঝরেপড়া রোধ করা না গেলে তারা দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। তাই দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে বিনা খরচে ভর্তির সুযোগ, বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, খাবারের ব্যবস্থা এবং বৃত্তিপ্রদান সহ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধ করতে হবে।

Get Our App

Download our app for a better experience.

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD