সামরিক শাসন বলতে কি বুঝ?
সামরিক শাসন বলতে একটি দেশের শাসন ব্যবস্থায় সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ বা পুরোপুরি সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত শাসন ব্যবস্থা বোঝানো হয়। এটি সাধারণত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বা বেসামরিক সরকারের পতনের পর সামরিক বাহিনী দ্বারা আরোপিত হয়। যখন একটি দেশ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অভ্যন্তরীণ সংঘাত, যুদ্ধ, অথবা অন্য কোনো সংকটের মুখোমুখি হয় এবং সাধারণ শাসনব্যবস্থা ব্যর্থ হয়, তখন সামরিক বাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং সরকার পরিচালনা করে।
সামরিক শাসনের সময় সাধারণত সংবিধান স্থগিত করা হয় এবং বেসামরিক অধিকারগুলো হ্রাস পায়। সামরিক আইন প্রয়োগ হয় এবং সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রশাসন সামরিক বাহিনীর অধীনে পরিচালিত হয়। সামরিক শাসনের আওতায় বিচার বিভাগও সামরিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে, যেখানে সামরিক কর্মকর্তা বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আরো পড়ুনঃ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা কী?
সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্যসমূহ:
বেসামরিক সরকারের উৎখাত: সামরিক শাসনের আরোপ সাধারণত গণতান্ত্রিক বা বেসামরিক সরকারের উৎখাতের মাধ্যমে হয়।
আইন স্থগিত করা: সামরিক শাসন প্রবর্তিত হলে সংবিধান স্থগিত হয়ে যায় এবং সামরিক আইন চালু হয়। ফলে বেসামরিক অধিকার হ্রাস পায়।
সংসদ স্থগিত: সামরিক শাসন চলাকালে সাধারণত সংসদ কার্যক্রম বন্ধ থাকে এবং সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রের শাসন পরিচালনা করে।
সাংবাদিকতা ও বাক স্বাধীনতার হ্রাস: সামরিক শাসনের সময় সাধারণত গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং বাকস্বাধীনতা হ্রাস পায়।
সামরিক আদালতের প্রচলন: সামরিক শাসনের অধীনে বিচার বিভাগেও সামরিক ট্রাইব্যুনাল চালু হয়, যা বেসামরিক আদালতগুলোর চেয়ে ভিন্নভাবে পরিচালিত হয়।
রাজনৈতিক দলের নিষেধাজ্ঞা: সামরিক শাসন চলাকালে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম বন্ধ থাকে বা সীমিত করা হয়।
সামরিক শাসনের প্রভাব:
সামরিক শাসন সাধারণত দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতায় বিরূপ প্রভাব ফেলে। এর ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, জনগণের মৌলিক অধিকার হ্রাস পায় এবং প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকে না। দীর্ঘস্থায়ী সামরিক শাসনের প্রভাব হিসেবে দেশে অস্থিরতা, গণআন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক সমালোচনা দেখা যায়।
আরো পড়ুনঃ ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব বা তাৎপর্য
উপসংহার: সামরিক শাসন কোনো দেশকে স্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে আরোপ করা হলেও তা প্রায়ই দীর্ঘমেয়াদে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি বেসামরিক অধিকার ও গণতন্ত্রের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে এবং জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা হ্রাস পায়।