রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যকার সম্পর্ক
ভূমিকা: মানব সমাজের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করতে চেয়েছে। এই উদ্দেশ্যে মানুষ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে, যার মধ্যে রাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়ই মানুষের সেবায় নিবেদিত দুটি প্রতিষ্ঠিত কাঠামো, যারা বিভিন্নভাবে মানবজীবন পরিচালনা করে। রাষ্ট্রের মূল কাজ মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা, আর সমাজের মূল কাজ হলো মানুষের আচার-আচরণ ও সম্পর্কের নিয়মাবলী নির্ধারণ করা। সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ ও পরস্পর পরিপূরক।
রাষ্ট্র ও সমাজের সম্পর্ক:
১. উদ্দেশ্যগত সম্পর্ক: রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়ই মানুষের প্রয়োজনের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। আধুনিক রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হল মানুষের কল্যাণময় জীবন প্রতিষ্ঠা করা, যা আইন প্রণয়ন এবং শাসনের মাধ্যমে করা হয়। একইভাবে, সমাজও মানুষের জীবনের শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে বিভিন্ন নিয়ম-নীতির প্রবর্তন করে। সুতরাং, উভয়ের উদ্দেশ্যই মানুষের সুন্দর জীবনযাপন নিশ্চিত করা।
২. মানবকল্যাণ সাধন: মানবকল্যাণের প্রশ্নে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। উভয় প্রতিষ্ঠানেরই লক্ষ্য হলো মানুষের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। রাষ্ট্র বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করে এবং সমাজ তার সামাজিক বিধিবিধান দিয়ে মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করে।
আরো পড়ুনঃ রাষ্ট্রের উপাদানসমূহ আলোচনা
৩. সমাজ ও রাষ্ট্র পরস্পরের নিয়ন্ত্রক: রাষ্ট্র সমাজকে শাসন করে, কিন্তু সমাজও রাষ্ট্রকে প্রভাবিত করে। রাষ্ট্র আইনের মাধ্যমে সমাজকে শৃঙ্খলিত রাখে, আবার সমাজও রীতিনীতি এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ, সামাজিক মূল্যবোধ এবং রীতিনীতি রাষ্ট্রের আইন প্রণয়নে প্রভাব ফেলে।
৪. মানবসমাজের নিয়ন্ত্রক: রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়ই মানুষের কর্ম এবং জীবনের উপর প্রভাব বিস্তার করে। রাষ্ট্র আইনের মাধ্যমে সমাজের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে এবং সমাজ তার রীতিনীতি এবং সামাজিক প্রথার মাধ্যমে মানুষের আচরণকে শাসন করে। মানুষ রাষ্ট্রের আইন মান্য করে এবং সমাজের প্রচলিত রীতি অনুসরণ করে।
আরো পড়ুনঃ ম্যাকিয়াভেলীবাদ কি? ম্যাকিয়াভেলীকে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয় কেন?
৫. সমাজ রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করে: রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন করে এবং সমাজ তার রীতিনীতি তৈরি করে। তবে রাষ্ট্র তার আইনি কাঠামোর মধ্যে সামাজিক রীতি এবং প্রথাকে মান্য করে। সমাজের মৌলিক মূল্যবোধ উপেক্ষা করলে রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তাই সমাজও রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং উভয়ের মধ্যে এক গভীর সংযোগ থাকে।
উপসংহার: সমাজ ও রাষ্ট্র দুইটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠান হলেও তারা পরস্পর নির্ভরশীল। সমাজের ভিত্তির উপর রাষ্ট্র গঠিত হয় এবং সমাজের প্রভাবেই রাষ্ট্রের গঠন ও কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সমাজের সঠিক রূপ রাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিফলিত হয় এবং রাষ্ট্রের মাধ্যমে সমাজের শৃঙ্খলা বজায় থাকে। তাই রাষ্ট্র ও সমাজের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও অবিচ্ছেদ্য।