কিশোর অপরাধ কি? কিশোর অপরাধের কারণ গুলো আলোচনা কর। 

কিশোর অপরাধ কি? কিশোর অপরাধের কারণ গুলো আলোচনা কর। 

ভূমিকা: কিশোর অপরাধ বর্তমান সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিল্পায়ন, নগরায়ন, এবং সামাজিক পরিবর্তনের ফলে কিশোর অপরাধের প্রকোপ বাড়ছে। কিশোর অপরাধ বলতে সাধারণত অপ্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারা সংঘটিত আইনবিরোধী বা সমাজবিরোধী কার্যকলাপকে বোঝায়। এ অপরাধের কারণসমূহ বহু রকমের এবং এগুলো কিশোরদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, এবং সামাজিক জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।

কিশোর অপরাধের সংজ্ঞা:

কিশোর অপরাধ হলো এমন একটি সামাজিক সমস্যা যেখানে অপ্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারা সমাজের প্রচলিত আইন ও নিয়মকানুন লঙ্ঘিত হয়। সাধারণত ৭-১৬ বছর বয়সের কিশোররা এ ধরনের অপরাধে জড়িত হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে:

  • বিসলার: “কিশোর অপরাধ হলো সমাজের নিয়মকানুনের ওপর অপ্রাপ্ত বয়স্কদের অবৈধ হস্তক্ষেপ।”
  • বার্ট: “কোন শিশুকে তখনই অপরাধী বলা যেতে পারে, যখন তার অপরাধের জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন হয়।”

বাংলাদেশের কিশোর অপরাধের কারণসমূহ:

১. পারিবারিক সমস্যা: কিশোর অপরাধের অন্যতম প্রধান কারণ হলো পারিবারিক সমস্যা। পিতা-মাতা বা অভিভাবকের বিচ্ছেদ, দাম্পত্য কলহ, আর্থিক সংকট, এবং অযত্নের কারণে কিশোররা অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এছাড়া পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি ও পিতামাতার সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে কিশোররা সহজেই বিপথগামী হয়।

আরো পড়ুনঃ সমাজ সংস্কার কাকে বলে?

২. শিক্ষার অভাব: শিক্ষার অভাব বা মানসম্মত শিক্ষার অভাবে কিশোররা অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়ে। স্কুলছুট শিশুদের মধ্যেই অপরাধের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। অপর্যাপ্ত শিক্ষা ব্যবস্থা এবং বেসিক শিক্ষার অভাবে কিশোররা সহজেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।

৩. দারিদ্র্য: বাংলাদেশের একটি বড় অংশ কিশোর অপরাধের শিকার হয় দারিদ্র্যের কারণে। দরিদ্র পরিবারের কিশোররা প্রায়ই অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, যেমন চুরি, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা ইত্যাদি, কারণ তারা অর্থের প্রয়োজন মেটাতে বাধ্য হয়।

৪. বন্ধুদের প্রভাব: সমবয়সীদের প্রভাব কিশোর অপরাধে বড় ভূমিকা রাখে। অসৎ সঙ্গ এবং অপরাধী বন্ধুদের সংস্পর্শে এসে অনেক কিশোর অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তারা প্রায়ই অপরাধমূলক কাজের প্রতি আকৃষ্ট হয় শুধুমাত্র বন্ধুত্বের কারণে।

৫. মাদকের ব্যবহার: মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা এবং এর ব্যবহার কিশোর অপরাধের একটি প্রধান কারণ। মাদকাসক্ত কিশোররা প্রায়ই মাদক কেনার জন্য অর্থ জোগাড় করতে অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হয়। মাদকের প্রতি আসক্তি তাদের মানসিক অবস্থা দুর্বল করে এবং তারা সহজেই অপরাধ করে বসে।

আরো পড়ুনঃ মানব ইতিহাসে শিল্প বিপ্লবের প্রভাব

৬. বস্তি ও নিম্নমানের বাসস্থান: বস্তি ও নিম্নমানের বাসস্থানে বেড়ে ওঠা কিশোরদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এসব এলাকায় অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ী, এবং অন্যান্য অসামাজিক কার্যকলাপ সহজেই ঘটে। ফলে বস্তির শিশুরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সহজেই জড়িয়ে পড়ে।

৭. ইলেকট্রনিক মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাব: কিছু টেলিভিশন প্রোগ্রাম, সিনেমা, এবং ভিডিও গেমস কিশোরদের মানসিকতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সহিংসতা, যৌনতা, এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপের প্রদর্শন কিশোরদের মানসিকতাকে বিকৃত করে এবং তারা এসব কাজকে সহজভাবে নিতে শুরু করে।

৮. প্রযুক্তি ও সামাজিক মাধ্যমের অপব্যবহার: সামাজিক মাধ্যম এবং ইন্টারনেটের অতিরিক্ত এবং অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার কিশোর অপরাধের আরেকটি কারণ। সামাজিক মাধ্যমে অপরাধীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তারা অপরাধে উদ্বুদ্ধ হতে পারে। এছাড়া সাইবার অপরাধও কিশোর অপরাধের একটি আধুনিক রূপ।

৯. রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা: রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অপরাধমূলক কাজে রাজনৈতিক সুরক্ষা পাওয়া কিশোরদের অপরাধের প্রতি আকৃষ্ট করে। কিশোরদের অনেক সময় রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হয়, যেমন মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নেওয়া, এবং এর মাধ্যমে তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়।

১০. সুষ্ঠু বিনোদনের অভাব: কিশোরদের জন্য পর্যাপ্ত বিনোদনমূলক কার্যক্রমের অভাব তাদের অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়। তারা অবসর সময়ে সঠিক বিনোদন না পেয়ে অসৎ সঙ্গীদের সাথে মেলামেশা শুরু করে এবং অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

আরো পড়ুনঃ সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি কি?

উপসংহার: কিশোর অপরাধ একটি জটিল সামাজিক সমস্যা যা বিভিন্ন সামাজিক, পারিবারিক, এবং অর্থনৈতিক কারণে সৃষ্টি হয়। এটি রোধ করতে হলে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কিশোরদের সঠিক দিক নির্দেশনা, শিক্ষা, এবং সুশৃঙ্খল সামাজিকীকরণের মাধ্যমে এ সমস্যা অনেকাংশে সমাধান করা সম্ভব।

Shihabur Rahaman
Shihabur Rahaman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 263