সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি কি?
সমষ্টি উন্নয়ন হলো আধুনিক সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য কার্যকর একটি পদ্ধতি হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। এটি মূলত সমাজের পিছিয়ে পড়া এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অগ্রগতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে, বিশেষ করে বাংলাদেশে, সমষ্টি উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয় যা জনগণের আর্থিক ও সামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
সমষ্টি উন্নয়ন কি?
সমষ্টি উন্নয়ন বলতে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে বোঝায়, যার লক্ষ্য হলো তাদের জীবনের আর্থিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো। এই উন্নয়নের জন্য জনগণ ও সরকার একত্রে কাজ করে, যেখানে উভয় পক্ষের সহযোগিতায় এলাকার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়। সরকার ও জনগণের যৌথ উদ্যোগে গৃহীত পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি অঞ্চলের উন্নয়ন ঘটানোই সমষ্টি উন্নয়ন।
আরো পড়ুনঃ দারিদ্রের দুষ্টুচক্র কাকে বলে
সমষ্টি উন্নয়নের প্রামাণ্য সংজ্ঞা
সমষ্টি উন্নয়নকে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও সংস্থা বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিচে তাদের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো:
- জাতিসংঘের সামাজিক কার্যসংস্থা (UN Social Affairs) সমষ্টি উন্নয়নের সংজ্ঞায় বলেছে: সমষ্টি উন্নয়ন একটি প্রক্রিয়া, যা সমষ্টির জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবং তাদের নিজস্ব উদ্যোগের উপর নির্ভর করে একটি এলাকার আর্থসামাজিক উন্নতির উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে।
- ড. সালেহ-এল-দীন-আবাদ সমষ্টি উন্নয়নের সংজ্ঞায় উল্লেখ করেছেন: সমষ্টি উন্নয়ন এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে জনগণের প্রয়োজনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়ন সাধনের জন্য সরকার ও জনগণ একত্রিত হয়। তারা সম্পদের কার্যকর ব্যবহারের মাধ্যমে এই উন্নয়ন সাধন করে।
- ডব্লিউ বিডল ও এল. বিডল বলেন: সমষ্টি উন্নয়ন একটি সামাজিক প্রক্রিয়া, যা পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করার জন্য জনগণকে আরও যোগ্য করে গড়ে তোলে।
এই সংজ্ঞাগুলো থেকে স্পষ্ট যে, সমষ্টি উন্নয়ন হলো এক ধরণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে একটি অঞ্চলের জনগণ তাদের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
সমষ্টি উন্নয়নের বৈশিষ্ট্য
সমষ্টি উন্নয়নের মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ, সম্পদের যথাযথ ব্যবহার, এবং সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ করা। সমষ্টি উন্নয়নের কার্যক্রমগুলি সাধারণত জনগণের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এবং সেই সমস্যাগুলোর কার্যকর সমাধানের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। এতে সমষ্টির জনগণকে তাদের সমস্যার সমাধানে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করা হয়, যাতে তারা নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে পারে এবং তাদের জীবনের মান উন্নত করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ সমাজকর্ম গবেষণা কাকে বলে?
সমষ্টি উন্নয়নের উপাদান
সমষ্টি উন্নয়নের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে, যা এই প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। সেগুলো হলো:
- জনসমষ্টি: জনগণই সমষ্টি উন্নয়নের প্রধান ভিত্তি। তাদের অংশগ্রহণ ছাড়া উন্নয়নের কোনো পদক্ষেপ কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয়।
- সমষ্টির প্রয়োজন: একটি অঞ্চলের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য সমষ্টির চাহিদা ও সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হয়। সমস্যাগুলো চিহ্নিত না হলে সঠিকভাবে উন্নয়নের কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব নয়।
- স্থানীয় উদ্যোগ: স্থানীয় জনগণ ও স্থানীয় সংস্থাগুলোর উদ্যোগও উন্নয়নের একটি অপরিহার্য অংশ। তারা তাদের সমস্যার সমাধানে স্থানীয় পর্যায়ে কাজ করে এবং যখন তা যথেষ্ট হয় না, তখন সরকারের সাহায্য প্রয়োজন হয়।
- সমষ্টি সংগঠন কর্মী: একটি এলাকার উন্নয়নে দক্ষ সমাজকর্মীর ভূমিকা অপরিহার্য। তাদের নেতৃত্ব ও কৌশলগত পরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
- তথ্য সংগ্রহ ও সমস্যা চিহ্নিতকরণ: উন্নয়নের জন্য একটি এলাকার সমস্যাগুলো বিশ্লেষণ করা এবং সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা জরুরি। এর মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের উপায় নির্ধারণ করা হয়।
- যোগাযোগ: সঠিক উন্নয়নের জন্য জনগণ, সরকার, এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভালো যোগাযোগ থাকা অপরিহার্য। এর মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত হয়।
- মূল্যায়ন: উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার পর তার ফলাফল পর্যালোচনা করে সঠিক মূল্যায়ন করা হয়। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জন করা সম্ভব হয়।
আরো পড়ুনঃ সমাজকর্ম পদ্ধতি কাকে বলে?
উপসংহার সমষ্টি উন্নয়ন একটি কার্যকরী পদ্ধতি, যা আর্থসামাজিক উন্নয়নে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সরকারের সহযোগিতার মাধ্যমে একটি অঞ্চলের সার্বিক অগ্রগতি নিশ্চিত করে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। যথাযথ পদ্ধতি প্রয়োগ ও পরিকল্পনা অনুসরণ করলে সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতির মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব।