সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্যসমূহ

সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্যসমূহ

ভূমিকা: সামরিক শাসন এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে সামরিক বাহিনী দেশের প্রশাসন ও রাজনীতি পরিচালনা করে। এটি সাধারণত বেসামরিক শাসনব্যবস্থা ব্যর্থ হলে, অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা, অভ্যুত্থান বা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সময় সামরিক বাহিনী কর্তৃক জারি হয়। সামরিক শাসনে সাধারণত গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীনতা সীমিত হয়ে যায়, এবং সামরিক আইন বা শাসনমতে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। সামরিক শাসন সাধারণত একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে দেখা হলেও, অনেক দেশে এটি দীর্ঘকাল ধরে টিকে থাকতে পারে।

সামরিক শাসনের সংজ্ঞা:

সামরিক শাসনের অর্থ হলো যখন কোনো রাষ্ট্রের বেসামরিক কার্যক্রম সামরিক বাহিনীর অধীনে চলে যায় এবং দেশের শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয় সামরিক আইনের মাধ্যমে। যখন সামরিক বাহিনী একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং বেসামরিক প্রশাসন ও শাসনব্যবস্থাকে স্থানচ্যুত করে, তখন তাকে সামরিক শাসন বলা হয়।

অধ্যাপক ফাইনার (Finner) এর মতে, “সামরিক বাহিনী যখন তাদের নিজস্ব নীতির বাস্তবায়নের জন্য বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে, তাকেই সামরিক শাসন বলে।”

সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য:

রাজনৈতিক শূন্যতা: সামরিক বাহিনী যখন ক্ষমতা দখল করে, তখন দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্বের শূন্যতা দেখা দেয়। সামরিক শাসনে বেসামরিক রাজনীতিবিদরা তাদের প্রভাব হারায়, এবং দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়।

আরো পড়ুনঃ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা কী? 

গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস: সামরিক শাসন ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্রের ধারনা নষ্ট হয়ে যায়। দেশে কোনো প্রকার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বা চর্চা থাকে না। সামরিক বাহিনীর একক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হয়, যা স্বৈরতন্ত্রের দিকে নিয়ে যায়।

সংবিধান বাতিল বা স্থগিত: সামরিক শাসন জারি হলে সংবিধান সাধারণত বাতিল করা হয় অথবা স্থগিত রাখা হয়। আইনসভা স্থগিত হয়ে যায় এবং দেশে সামরিক আইন কার্যকর হয়, যা জনগণের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা সীমিত করে।

মৌলিক অধিকার হ্রাস: সামরিক শাসনের অধীনে জনগণের চিন্তার স্বাধীনতা, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশের অধিকার ইত্যাদি মৌলিক অধিকার সীমিত হয়ে যায়।

শিক্ষা ও সংস্কৃতি ধ্বংস: সামরিক শাসনের সময় শিক্ষা এবং সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অবক্ষয় ঘটে। শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা জনগণ সাধারণত সামরিক শাসনের সমালোচনা করে, যার ফলে সামরিক বাহিনী তাদের কার্যক্রম সীমিত করতে সচেষ্ট হয়।

সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রের দ্বন্দ্ব: সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়, যা প্রশাসনিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। সামরিক শাসনে বেসামরিক আমলারা তাদের কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালনা করতে পারেন না।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হ্রাস: সামরিক শাসন চলাকালে বিচার বিভাগ সামরিক আদালত দ্বারা পরিচালিত হয়, এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়। ফলে সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়।

জাতীয় সংহতির সংকট: সামরিক শাসন চলাকালে জাতীয় সংহতির সংকট দেখা দেয়। সামরিক বাহিনী দেশের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটাতে ব্যর্থ হয়, যা দেশকে আরও অস্থিতিশীল করে তোলে।

রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ: সামরিক শাসনের সময় সাধারণত সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। মিছিল, মিটিং, এবং সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, ফলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাব এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা বাধাগ্রস্ত হয়।

বৈদেশিক শক্তির প্রভাব: সামরিক শাসনের সময় অনেক ক্ষেত্রে বৈদেশিক শক্তির প্রভাব বৃদ্ধি পায়। সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় এসে বৈদেশিক শক্তির সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করে, যা দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে।

আরো পড়ুনঃ ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব বা তাৎপর্য

উপসংহার: সামরিক শাসন একটি দেশের গণতান্ত্রিক ও সামাজিক কাঠামোকে ধ্বংস করে দেয় এবং দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করে। যদিও সামরিক শাসন সাধারণত অস্থায়ী সমাধান হিসেবে আরোপিত হয়, এটি দীর্ঘস্থায়ী হলে রাজনৈতিক শূন্যতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে।

Shihabur Rahaman
Shihabur Rahaman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 252