সমাজসেবা কাকে বলে? সমাজসেবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
ভূমিকা: সমাজসেবা হলো মানব কল্যাণের জন্য পরিচালিত একটি সুসংগঠিত প্রচেষ্টা। এটি সমাজের অস্বচ্ছল, অসহায়, ও দুস্থ মানুষের সাহায্যার্থে পরিচালিত হয়। সমাজসেবা সমাজের উন্নয়ন ও শৃঙ্খলা রক্ষার একটি অপরিহার্য অঙ্গ। আধুনিক সমাজকল্যাণ ব্যবস্থায় সমাজসেবার গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ এটি ব্যক্তি ও সমাজের উন্নতি সাধন করে। সমাজসেবা বিশেষ করে আর্থিকভাবে অসচ্ছল, শারীরিক বা মানসিকভাবে দুর্বল এবং বিভিন্ন সামাজিক সমস্যায় আক্রান্ত মানুষদের সহায়তা করে।
সমাজসেবা:
সাধারণ অর্থে, সমাজসেবা বলতে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য গৃহীত সাহায্য কার্যক্রম বোঝায়। এই কার্যক্রমগুলি মানুষের জীবনমান উন্নত করতে এবং সামাজিক সমস্যা সমাধানে সহায়ক হয়। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোও সমাজসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে।
সমাজসেবার প্রামাণ্য সংজ্ঞা:
সমাজসেবার বিভিন্ন সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে প্রদান করা হয়েছে। নিম্নে কিছু সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো:
সোশ্যাল ওয়ার্ক ডিকশনারী অনুযায়ী, “সমাজসেবা হল সংগঠিত কার্যক্রম যা সমাজের মানুষের কল্যাণে পরিচালিত হয়। এর মাধ্যমে মানুষকে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করা হয় এবং পারিবারিক সম্পর্ক শক্তিশালী করে।”
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশে সমাজকর্ম পদ্ধতির গুরুত্ব
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন এর মতে, “সমাজসেবা হলো ব্যক্তি ও তার পরিবেশের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের উদ্দেশ্যে সংগঠিত কার্যক্রমের সমষ্টি।”
ম্যারি এম. ক্যাশডি বলেন, “সমাজসেবা হলো এমন কার্যক্রমের সমষ্টি যা মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সংরক্ষণে সহায়ক হয়।”
সমাজসেবার লক্ষ্য:
সমাজসেবার মূল লক্ষ্য হলো সমাজের সকল স্তরের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো এবং তাদের মৌলিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। সমাজসেবার লক্ষ্যগুলো নিম্নরূপ:
১. মৌলিক চাহিদা পূরণ: সমাজের সকল মানুষের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা।
২. অধিকার সুরক্ষা: সমাজের সকল স্তরের মানুষের অধিকার সুরক্ষা করা এবং তাদের আইনি, সামাজিক ও মানবিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা।
৩. সুন্দর জীবনের পরিবেশ তৈরি: সমাজে সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ গঠন করা, যেখানে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ সমাজকর্ম পদ্ধতি কাকে বলে?
৪. শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা: সমাজে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখা।
৫. পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি: সমাজের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
সমাজসেবার উদ্দেশ্য:
সমাজসেবার উদ্দেশ্য হলো মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা এবং সমাজকে আরো উন্নত, নিরাপদ ও সুখী করে তোলা। সমাজসেবার কিছু উল্লেখযোগ্য উদ্দেশ্য হলো:
১. সামাজিক সমস্যা সমাধান: দারিদ্র্য, বেকারত্ব, অশিক্ষা, অসুস্থতা, এবং অপরাধের মতো সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধান করা।
২. সচেতনতা বৃদ্ধি: সমাজের সকল মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা এবং তাদের মধ্যে নাগরিক দায়িত্ববোধ ও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা।
৩. ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি: সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন এবং তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
৪. সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা: সমাজে সকল মানুষের জন্য সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, যাতে তারা সমান সুযোগ ও সুবিধা লাভ করতে পারে।
৫. সামাজিক সংহতি সৃষ্টি: সমাজে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সংহতি বজায় রাখা, যাতে সমাজের সকল মানুষ একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতামূলক আচরণ করতে পারে।
সমাজসেবা দূরীকরণের উপায়:
সমাজসেবা কার্যক্রমগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজের সমস্যাগুলোর সমাধান এবং মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা। সমাজসেবা দূরীকরণের উপায়গুলো হলো:
- বৈষম্য দূরীকরণ: সমাজে বিদ্যমান অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত বৈষম্য দূর করা এবং সকলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা।
- শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি: শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করে মানুষের জীবনমান উন্নত করা এবং তাদের মধ্যে সামাজিক দায়িত্ববোধ ও মূল্যবোধ সৃষ্টির চেষ্টা করা।
- দারিদ্র্য বিমোচন: দারিদ্র্য দূরীকরণের মাধ্যমে সমাজে আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং সকলের জন্য জীবিকার উপায় সৃষ্টি করা।
- স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন: স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্যতা বাড়িয়ে মানুষকে সুস্থ, কর্মক্ষম ও উৎপাদনশীল জীবনযাপন করতে সহায়তা করা।
- আইনগত সহায়তা প্রদান: মানুষের আইনগত অধিকার রক্ষার্থে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান এবং সমাজের দুর্বল ও অবহেলিত শ্রেণীর মানুষের প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করা।
আরো পড়ুনঃ নগরায়নের প্রভাবসমূহ
উপসংহার: সমাজসেবা একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক উদ্যোগ, যা মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা ও সমতা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সমাজসেবার মাধ্যমে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব এবং এটি একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য অপরিহার্য।