মরণশীলতা কী?
মরণশীলতা (Mortality) বলতে জীবনের সমাপ্তি বা মৃত্যুর প্রকৃতি বোঝায়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা জনসংখ্যা গবেষণায়, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞানে গভীরভাবে আলোচিত হয়। মরণশীলতা মূলত মৃত্যুর হারকে নির্দেশ করে এবং এটি নির্ভর করে একটি দেশের জীবনযাত্রার মান, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক পরিস্থিতি এবং ভৌগোলিক অবস্থার উপর।
মরণশীলতার সংজ্ঞা:
মরণশীলতা বলতে এমন এক অবস্থা বোঝায় যেখানে জীবের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তিক কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। মরণশীলতার ধারণাটি মৃত্যু (Death) প্রত্যয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। যখন জীবনের সব লক্ষণ শেষ হয়ে যায়, তখন তাকে মৃত্যু বলা হয়। World Health Organization (WHO) এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, “Death is the permanent disappearance of evidence of life at any time after birth has taken place, cessation of vital functions without capacity of resuscitation.” অর্থাৎ জন্মের পরে জীবনের সব চিহ্ন যখন স্থায়ীভাবে বিলীন হয়ে যায় এবং শরীরের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়াকলাপ পুনরায় শুরু করা সম্ভব হয় না, তখন তাকে মৃত্যু বলে চিহ্নিত করা হয়।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ উদ্ভবের ঐতিহাসিক পটভূমি
মরণশীলতা এবং জনসংখ্যা গবেষণা:
জনসংখ্যা গবেষণায় মরণশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। একটি দেশের মৃত্যুহার সেই দেশের জীবনযাত্রার মান, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, উন্নত দেশগুলিতে সাধারণত মরণশীলতার হার কম হয় কারণ সেখানে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং খাদ্যনিরাপত্তা বিদ্যমান থাকে। অন্যদিকে, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে মরণশীলতার হার তুলনামূলকভাবে বেশি হয়, কারণ সেখানে স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা সীমিত এবং দরিদ্রতা এবং অপুষ্টি বেশি দেখা যায়।
মরণশীলতার হার দেশভেদে এবং অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়। যেমন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ, মহামারী এবং সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে মরণশীলতার হার বেড়ে যেতে পারে। এর পাশাপাশি, উন্নত প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে মরণশীলতার হার কমে যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতিতে নগরায়ন ও শিল্পায়নের প্রভাব
মরণশীলতার প্রভাব:
মরণশীলতা জনসংখ্যার আকার এবং তার গঠনকে প্রভাবিত করে। একটি দেশের মরণশীলতার হার বেশি হলে, সেই দেশের জনসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পায় এবং এর ফলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট দেখা দিতে পারে। যেমন, কর্মীশক্তির অভাব, উৎপাদনশীলতার হ্রাস, এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। অপরপক্ষে, কম মরণশীলতার হার সাধারণত একটি দেশের জনসংখ্যার আকার বৃদ্ধি করে, যা দেশের অর্থনীতি এবং উৎপাদনশীলতায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আরো পড়ুনঃ মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের একটি চিত্র
উপসংহার:
সবশেষে বলা যায়, মরণশীলতা হল একটি প্রাকৃতিক এবং অবশ্যম্ভাবী প্রক্রিয়া, যা প্রত্যেক জীবের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘটে। এটি শুধুমাত্র শারীরবৃত্তিক নয়, বরং একটি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাবও ফেলে। জনসংখ্যা গবেষণা, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান এবং সামাজিক উন্নয়নে মরণশীলতার হার এবং তার কারণগুলোকে বিশ্লেষণ করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ।