মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের একটি চিত্র

মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের একটি চিত্র আঁকো

ভূমিকা: বুদ্ধিজীবী হল কোন ব্যক্তি যিনি সমাজ সম্পর্কিত জটিল চিন্তা, গবেষণা ও বিভিন্ন বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে জড়িত থাকেন। বুদ্ধিজীবী হত্যা কান্ড বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে কালো অধ্যায়। ধারণা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের সময় পুরো নয় মাস ধরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মূল পরিকল্পনা করেছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ একজন কর্মকর্তা রাও ফরমান আলী. এবং তাকে সাহায্য করেছিল এদেশীয় পাকিস্তানি দোসররা. বাঙালি শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, দার্শনিক, চাকরিজীবী ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদরা এই পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হন।

১. বুদ্ধিজীবী হত্যা কী: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, “১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ৩১ জানুয়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত সময়কালে যেসব বাঙালি সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, রাজনীতিক, সমাজসেবী, সংস্কৃতিসেবী, চলচ্চিত্র, নাটক ও সঙ্গীতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং এর ফলে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী কিংবা তাদের সহযোগীদের হাতে শহীদ কিংবা ওই সময়ে চিরতরে নিখোঁজ হয়েছেন, তারা শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিবেচিত হবেন।”

আরো পড়ুনঃ সমাজ বিজ্ঞান পরিচিতি বিগত সালের প্রশ্ন

২. বুদ্ধিজীবী হত্যা কেন ঘটেছিলো: মুক্তিযুদ্ধ যখন প্রায় শেষ, চতুর্মুখী আক্রমণে টিকতে না পেরে পাকবাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পাকিস্তান যে আত্মসমর্পণের আগে মরণ কামড় বসিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল তা জানত না কেউ। পাকিস্তান ও তাদের এ দেশীয় দোসর ও রাজনৈতিক গোষ্ঠী বাংলাদেশের বুকে চূড়ান্ত আঘাতটি করেছিল ১৪ ডিসেম্বর। অর্থাৎ আমাদের বিজয় এবং তাদের চূড়ান্ত পরাজয়ের মাত্র দুদিন আগে। এদিন তারা এদেশ গঠনে যারা অগ্রণী ভুকিমা রেখেছিলো তাদের কে ধরে ধরে হত্যা করেছিল।

৩. কিভাবে শুরু হয়েছিল এই হত্যাকান্ড: মুক্তিযুদ্ধের ১৫ নভেম্বর সকালে ধানমণ্ডির হাতিরপুলের ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের বাসার সামনে থেকে আলবদরেরা তুলে নিয়ে যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী শল্যচিকিৎসক ডা. আজহারুল হক ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ডা. হুমায়ুন কবীরকে। পরদিন ১৬ নভেম্বর সকালে তাদের মরদেহ পাওয়া যায় নটরডেম কলেজের দক্ষিণপূর্ব কোণায় কালভার্টের নিচে। উদ্ধারের সময় তাদের হাত, পা ও চোখ বাঁধা ছিল। শরীরে ছিল আঘাতের চিহ্ন। এই ২ চিকিৎসকের শহীদ হওয়ার মধ্য দিয়েই মূলত সূচিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে সুপরিকল্পিত কায়দায় বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশার বাস্তবায়ন। 

৪. হত্যাকাণ্ডের বিবরণ: পাকিস্তানি বাহিনী যে নিসংস্র হত্যাকান্ড চালিয়েছিল তা বর্ণনাতীত। তারা আমাদের বুদ্দিজীবীদের চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যেত. তাদের সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মেরে ফেলতো। কখনো কখনো শরীরের অঙ্গ প্রতঙ্গ উপড়িয়ে ফেলতো। আবার কাউকে বা জীবিত কবর দিয়ে দিতো। তাদের এই ঘৃণিত কর্মের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জাতিকে মেধাশুন্য ও মেরুদন্ড হীন করে দেওয়া।

আরো পড়ুনঃ সমাজকর্ম পরিচিতি বিগত সালের কোশ্চেন 

৫. একটি নির্দিষ্ট চিত্র: একাত্তরের ২৫শে নভেম্বর রাজশাহী শহরের বাসা থেকে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর আব্দুল কাইয়ুমকে তুলে নিয়ে যায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। রাত নয়টার দিকে এক ব্যক্তি মি. কাইয়ুমের বাসা গিয়ে জানান যে, তাকে বাইরে একজন আর্মি অফিসার ডাকছে। মি. কাইয়ুম ওই আর্মি অফিসারের সাথে দেখা করার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে আর কখনো ফিরে আসেননি। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার দুইদিন পরে রাজশাহীর শহরের কাছে পদ্মার চরে একটি গণকবরে শিক্ষক মীর আব্দুল কাইয়ুমের মরদেহ পাওয়া যায়।

buddhijibi hotta kando

উপসংহার: বুদ্ধিজীবী হত্যা আমাদের জাতীয় জীবনে এক অপূরণীয় ক্ষতির নাম. বাংলাদেশ সরকার ওই সকল সূর্য সন্তানদের স্মৃতির স্মরণে ১৪ ই ডিসেম্বরকে বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস ঘোষণা করেছে। আমরা এই হত্যা কাণ্ডের শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে আমাদের দেশকে সোনার বাংলাদেশে রূপান্তরিত করতে সচেষ্ট থাকবো।

Shihabur Rahaman
Shihabur Rahaman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 252