বিচ্যুতির সংজ্ঞা
ভূমিকা: সামাজিক জীবনে মানুষকে সামাজিক আচার-আচরণ, মূল্যবোধ এবং প্রথার শৃঙ্খলে চলতে হয়। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ সামাজিক বিধিমালা থেকে সরে আসতে শুরু করে। এই সরে আসার প্রক্রিয়া বা সামাজিক আচরণের পরিবর্তনই হলো সামাজিক বিচ্যুতি। শিল্প, দর্শন, অর্থনীতি, এবং বিশ্বায়নের প্রভাব এই বিচ্যুতির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিচ্যুতি: ইংরেজি শব্দ “Deviance” এর বাংলা প্রতিশব্দ হলো “বিচ্যুতি”, যার আভিধানিক অর্থ হলো কোনো কিছু থেকে সরে যাওয়া বা দূরে সরে যাওয়া। সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচ্যুতি বলতে সেই আচরণকে বোঝায় যা সমাজের গৃহীত ও প্রতিষ্ঠিত শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে যায়। যখন কোনো ব্যক্তি সমাজের সাধারণ ও গ্রহণযোগ্য আচরণের পথে না চলে, বরং বিপরীতভাবে কাজ করে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা ও সংহতি বিঘ্নিত করে, তখন সেটাই সামাজিক বিচ্যুতি বলে গণ্য হয়।
আরো পড়ুনঃ শিল্প বিপ্লব কাকে বলে?
সামাজিক বিচ্যুতির প্রামাণ্য সংজ্ঞা: বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী এবং নৃতাত্ত্বিক বিচ্যুতির সংজ্ঞা দিয়েছেন, যেগুলি থেকে এর প্রকৃতি ও গুরুত্ব বোঝা যায়। কিছু প্রামাণ্য সংজ্ঞা হলো:
জেরি ডি. রস (Jerry D. Ross): “বিচ্যুতি হলো সেই আচরণ যা সমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মেলে না এবং তা অনুমোদিত হয় না।”
আর.টি. স্কেফার (R.T. Schaefer): “বিচ্যুতি হচ্ছে এমন একটি আচরণ, যা কোনো গোষ্ঠী বা সমাজের সাধারণ মান বা নিয়মকে লঙ্ঘন করে।”
মেটা স্পেন্সার (Meta Spencer): “যে কোনো আচরণ যা সমাজের নির্ধারিত আদর্শ বা মানকে ভঙ্গ করে, সেটাই বিচ্যুতি।”
এমিল ডুরখেইম (Emil Durkheim): “যখন সমাজের একটি বড় অংশ নৈতিকতা ও ন্যায়পরায়ণতা হারিয়ে ফেলে এবং মূল্যবোধহীনতার মধ্যে বসবাস করতে শুরু করে, তখনই সেই অবস্থাকে সামাজিক বিচ্যুতি বলা হয়।”
ডেভিড ড্রেসলার: তিনি বিচ্যুতি বলতে সামাজিক আদর্শ থেকে সরে গিয়ে নেতিবাচক বা ভিন্নতর আচরণকে বোঝান, যা সমাজে অস্বাভাবিক বলে গণ্য হয়।
আরো পড়ুনঃ সমাজ সংস্কার কাকে বলে?
উপসংহার: বিচ্যুতি একটি সামাজিক বাস্তবতা, যা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আচরণে সমাজের প্রতিষ্ঠিত আদর্শ ও শৃঙ্খলা লঙ্ঘিত হয়। যদিও সামাজিক বিচ্যুতি সাধারণত অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অবাঞ্ছিত, তবুও কখনো কখনো প্রথাগত আচরণ থেকে বিচ্যুতি সমাজের বিকাশ ও প্রগতির জন্য সহায়ক হতে পারে।