১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের যে কোনো দুটো সেক্টর সম্পর্কে লিখ।
ভূমিকা: মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন। ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে অধরা বিজয় বাঙালিদের নাগালে আসে. এই বিজয় আপনা আপনি আসেনি. শৃংখলাবদ্ধ বাঙালির সাথে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর যৌথ আক্রমণের মুখে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয়. আর পুরো জাতিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত মুজিবনগর সরকার পুরো দেশকে ১১ টি সেক্টরে বিভক্ত করে. এখানে আমরা দুইটি সেক্টর সম্পর্কে জানবো।
সেক্টর নং ২:
এরিয়া: ঢাকা, কুমিল্লা, আখাউড়া–ভৈরব, নোয়াখালী ও ফরিদপুরের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল ‘সেক্টর নং ২’। ৪- ইস্টবেঙ্গল, কুমিল্লা ও নোয়াখালীর ইপিআর বাহিনী নিয়ে গঠিত হয় এ সেক্টরটি। সদরদপ্তর ছিলো আগরতলার ২০ মাইল দক্ষিণে মেলাঘরে।
কমান্ডার সমূহ: মেজর খালেদ মোশাররফ ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার পদে নিযুক্ত ছিলেন। মেজর এ.টি.এম. হায়দার ছিলেন ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ হতে ৬ই এপ্ৰিল, ১৯৭২ পর্যন্ত।
সাব কমান্ডার সমূহ: বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক সাব-কমান্ডার ছিলেন। উল্লেখযোগ্য জনেরা হলেন: লেফটেন্যান্ট ফারুক, লেফটেন্যান্ট হুমায়ুন কবির, ক্যাপ্টেন গফর, মাহমুদ হাসান, লেফটেন্যান্ট দিদারুল আলম, ক্যাপ্টেন আকবর, লেফটেন্যান্ট মাহবুব, ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম, ক্যাপ্টেন শহীদ, লেফটেন্যান্ট ইমামুজ্জামান।
আরো পড়ুনঃ অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের উদ্যোগ
যুদ্ধ এবং যোদ্ধার সংখ্যা: এ সেক্টরের অধীনে প্রায় ৩৫,০০০ এর মতো গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে। এ সেক্টরে নিয়মিত বাহিনীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৪,০০০ জন এবং ৩,০০০ এর মতো গণবাহিনী বা গেরিলা ছিল।
সেক্টর নং ৭:
এরিয়া: রাজশাহী, পাবনা, ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরবর্তী এলাকা ব্যতীত সমগ্র বগুড়া, দিনাজপুরের দক্ষিণ অঞ্চল এবং রংপুরের কিছু অংশ ছিল ‘সেক্টর নং ৭’ এর অন্তর্ভুক্ত। বালুরঘাটের নিকটবর্তী তরঙ্গপুরে এ সেক্টরের হেডকোয়ার্টার অবস্থিত ছিলো ।
কমান্ডার সমূহ: এই সেক্টরে মোট তিনজন কমান্ডার যুদ্ধ পরিচালনা করে. ৭ নম্বর সেক্টর কমান্ডার হিসেবে শুরুতে ছিলেন মেজর নাজমুল হক। তিনি একাত্তরের ১০ এপ্রিল থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নেতৃত্ব দেন। সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যুর পরে মেজর কাজী নূরুজ্জামান ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। আরেকজন ছিলেন সুবেদার মেজর এ রব.
সাব কমান্ডার সমূহ: এই সেক্টরে ছিল ৯টি সাব-সেক্টর যার নেতৃত্বে ছিলেন কিছু সাব কমান্ডার তারা হলেন: ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গির, মেজর নাজমুল হক, সুবেদার ইলিয়াস, ক্যাপ্টেন ইদ্রিস, মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম (বকুল) ও মুক্তিযোদ্ধা মো:নুরুজ্জামান বিশ্বাস (মুজিব বাহিনী), ক্যাপ্টেন রশিদ, সুবেদার মুয়াজ্জেম, মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম ও ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী।
যুদ্ধ এবং যোদ্ধার সংখ্যা: এই সেক্টরের অধীনে ২৩১০ নিয়মিত সৈন্য এবং ১২৫০০ গণবাহিনীর যোদ্ধা সহ মোট ১৪৮১০ জন কাজ করেছিল.
আরো পড়ুনঃ সমাজ বিজ্ঞান পরিচিতি বিগত সালের প্রশ্ন
সবশেষে বলা যায় মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে পুরো দেশকে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করে দেওয়ার গুরুত্ব সর্ব প্রধান। কারণ পুরো দেশকে একসাথে যুদ্ধ পরিচালনা করা তৎকালীন সরকারের পক্ষে কঠিন হয়ে যেত. তাই আমরা বলতে পারি এই সেক্টর গুলো বিভিন্ন কমান্ডারের নেতৃত্বে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের পথ সহজ করে দিয়েছে।