AIDS রোগের লক্ষণ গুলো কি কি?
ভূমিকা: এইডস (AIDS) বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অন্যতম মারাত্মক ও বিপজ্জনক রোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি মূলত যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায় এবং এর ফলে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এইডস রোগটি মূলত এক ধরনের ভাইরাস (HIV) দ্বারা সৃষ্ট, যা ধীরে ধীরে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। ১৯৮১ সালে এই রোগের প্রথম সনাক্তকরণের পর থেকে এটি ক্রমশ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। মাত্র ২৫ বছরে এ রোগটি প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষকে আক্রান্ত করেছে। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক, ও সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হয়।
এইডস (AIDS) এর পরিচয়ঃ
এইডস বা AIDS বলতে বুঝায় “Acquired Immune Deficiency Syndrome”। এটি মূলত HIV (Human Immunodeficiency Virus) নামক ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট হয়। এই ভাইরাসটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়, ফলে বিভিন্ন সাধারণ রোগও মারাত্মক রূপ নিতে পারে। HIV ভাইরাস একবার দেহে প্রবেশ করলে তা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে ভাইরাসের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
AIDS শব্দের পূর্ণরূপ বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়:
- A = Acquired (অর্জিত)
- I = Immune (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা)
- D = Deficiency (অভাব)
- S = Syndrome (লক্ষণ, লক্ষণ সমষ্টি)
এইডস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং শরীরে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ ঘটতে থাকে।
এইডস রোগের লক্ষণসমূহঃ
HIV ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর এটি ধীরে ধীরে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। প্রথমে এ রোগের তেমন কোনও উপসর্গ দেখা দেয় না, তবে ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের ৬ মাস থেকে ২ বছরের মধ্যে ধীরে ধীরে উপসর্গ প্রকাশ পেতে শুরু করে। তবে HIV আক্রান্ত ব্যক্তি অনেক সময় ১০ বছরের মধ্যেও কোনও লক্ষণ প্রকাশ পায় না। ফলে এ রোগটি প্রায়শই অদৃশ্য থেকে যায় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যদেরও সংক্রমিত করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ সমাজকর্ম কি? সমাজকর্মের ধারণা ও পরিধি
নিম্নে এইডস রোগের কিছু সাধারণ লক্ষণ তুলে ধরা হলো:
১. দীর্ঘস্থায়ী জ্বর: এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে এক মাসের বেশি সময় ধরে জ্বর থাকতে পারে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে ঘটে এবং এটি রোগটির একটি প্রধান লক্ষণ।
২. দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া: এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিরা এক সপ্তাহ থেকে এক মাস বা তারও বেশি সময় ধরে ডায়রিয়া ভোগ করতে পারে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসের ফলস্বরূপ ঘটে।
৩. ক্লান্তি ও অবসাদ: কোনও ধরনের কাজ না করেও শরীরে ক্লান্তি এবং অবসাদ অনুভব হয়। এটি রোগটির একটি বড় লক্ষণ, কারণ দেহে শক্তির অভাব ঘটে এবং ব্যক্তি অকারণে দুর্বল অনুভব করে।
৪. ওজন হ্রাস: এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের ওজন দ্রুত কমে যায়। বিশেষ কোনও কারণ ছাড়াই ওজনের এই হ্রাস ঘটে, যা একটি গুরুতর লক্ষণ।
৫. শুকনো কাশি: শুকনো কাশি দীর্ঘদিন ধরে থেকে যায় এবং সাধারণ ওষুধেও এটি সারতে চায় না। এটি রোগটির একটি সাধারণ লক্ষণ।
৬. মাথাব্যথা ও স্মৃতি শক্তি হ্রাস: এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিরা মাথাব্যথা এবং স্মৃতি শক্তি হ্রাসের সমস্যায় ভুগতে পারে। এতে তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।
৭. ফুসকুড়ি ও চর্মরোগ: এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে নানা স্থানে ফুসকুড়ি, চর্মরোগ, এবং অস্বাভাবিক আচিল দেখা দিতে পারে। এটি রোগটির আরও একটি লক্ষণ।
৮. গলা খুশখুশ করা ও শ্বাসকষ্ট: এইডস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গলা খুশখুশ করে এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এ অবস্থায় ফুসফুসে সংক্রমণ হতে পারে, যা রোগীকে আরও দুর্বল করে দেয়।
৯. গলার গ্রন্থি ফোলাভাব: এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের গলার গ্রন্থি ফুলে যায় এবং বগলের কাছে ফোলাভাব দেখা দেয়। এটি রোগটির একটি শারীরিক লক্ষণ।
১০. মানসিক অবসাদ: এইডস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় রোগী মানসিক যন্ত্রণায় ভোগে এবং কখনও কখনও বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়।
এইডস প্রতিরোধের উপায়:
এইডস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিম্নোক্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন:
১. সচেতনতা বৃদ্ধি: এইডস রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। জনসাধারণের মধ্যে এ রোগের ব্যাপারে সঠিক তথ্য ছড়িয়ে দিতে হবে।
২. নিরাপদ যৌনমিলন: যৌনমিলনের সময় কনডম ব্যবহার করতে হবে এবং অনিরাপদ যৌনমিলন থেকে বিরত থাকতে হবে। একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌনসম্পর্ক এড়িয়ে চলতে হবে।
৩. রক্ত সঞ্চালনের সময় সতর্কতা: রক্ত দেওয়ার সময় বা গ্রহণ করার সময় নিশ্চিত হতে হবে যে রক্ত সম্পূর্ণভাবে পরীক্ষিত এবং সংক্রমণমুক্ত।
৪. সুচ ও ইনজেকশনের ব্যবহার: অপরের ব্যবহৃত সুচ বা ইনজেকশন কখনও ব্যবহার করা যাবে না। চিকিৎসার সময় জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ সমাজকর্ম পরিচিতি সাজেশন Exam-2024
৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে কোনও সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।
উপসংহার: এইডস একটি মরণব্যাধি, যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এ রোগের লক্ষণ প্রথমে তেমনভাবে প্রকাশ না পেলেও পরে এটি জীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। তাই এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা এই রোগ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারি।