STD বা যৌনবাহিত রোগ

STD বা যৌনবাহিত রোগ

STD (Sexually Transmitted Disease) হলো এমন ধরনের সংক্রামক রোগ, যা সাধারণত যৌন সংস্পর্শের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ছড়ায়। STD বিভিন্ন ধরনের রোগের সমষ্টি এবং এটি যৌন রোগ হিসেবে পরিচিত। ১৯৮৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের দ্বারা “Venereal Disease” থেকে এর নাম পরিবর্তন করে STD করা হয়। নারী-পুরুষের অবাধ ও অনিরাপদ যৌন মিলনের ফলে এই রোগের সংক্রমণ ঘটে। STD-এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য রোগ হলো HIV/AIDS, সিফিলিস, গনোরিয়া, ক্ল্যামিডিয়া, জেনিটাল হারপিস, হেপাটাইটিস বি ইত্যাদি।

STD বা যৌনবাহিত রোগের কারণ:
STD সাধারণত যৌন সম্পর্কের সময় সংক্রমিত হয়। তবে এটি কয়েকটি বিশেষ উপায়েও ছড়াতে পারে। যেমন:

১. অনিরাপদ যৌন মিলন: কনডম ছাড়া যৌনমিলন হলে STD-এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

২. অপরিষ্কার ইনজেকশন ও সূচ ব্যবহার: যে সুচ অন্যরা ব্যবহার করেছে তা জীবাণুমুক্ত না করে পুনরায় ব্যবহৃত হলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।

আরো পড়ুনঃ বিচ্যুতির সংজ্ঞা

৩. রক্তের সংক্রমণ: আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত সুস্থ ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করলে সংক্রমণ ঘটতে পারে।

৪. গর্ভাবস্থা ও স্তন্যপান: আক্রান্ত মায়ের শরীরে থাকা সংক্রমণ শিশুর মধ্যে স্থানান্তরিত হতে পারে। এছাড়াও, মায়ের দুধ পান করলে শিশুর সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।

STD এর লক্ষণসমূহ:

STD-এর লক্ষণগুলো বিভিন্ন রকম হতে পারে, যেমন:

১. যোনি বা পুরুষাঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক স্রাব। ২. যৌনাঙ্গে ঘা, ফুসকুড়ি বা জ্বালাপোড়া। ৩. মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা। ৪. যৌনমিলনের সময় ব্যথা। ৫. তীব্র জ্বর ও দুর্বলতা।

STD প্রতিরোধের উপায়:

STD প্রতিরোধ করা সম্ভব কিছু সহজ ও সঠিক পদ্ধতির মাধ্যমে। নিম্নে এর প্রতিরোধের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় তুলে ধরা হলো:

১. কনডম ব্যবহার: যৌনমিলনের সময় নিয়মিত ও সঠিকভাবে কনডম ব্যবহার STD-এর ঝুঁকি কমায়। এটি সংক্রমণের থেকে প্রতিরোধের অন্যতম কার্যকর পদ্ধতি।

২. একাধিক সঙ্গীর সাথে যৌন সম্পর্ক এড়িয়ে চলা: অধিক সংখ্যক সঙ্গীর সাথে যৌন সম্পর্ক করলে STD-এর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তাই, নিরাপদ যৌন জীবনযাপন করা উচিত।

৩. পরিস্কার ইনজেকশন ও সুচ ব্যবহার: যে কোনো ইনজেকশন নেওয়ার আগে নিশ্চিত হতে হবে যে তা জীবাণুমুক্ত ও একবার ব্যবহারযোগ্য।

৪. রক্তদান ও রক্ত গ্রহণে সতর্কতা: রক্তদান বা রক্ত গ্রহণের সময় অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে রক্তটি সংক্রমণমুক্ত।

৫. ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া: STD-এর লক্ষণ দেখা দিলে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং সময়মত চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি।

আরো পড়ুনঃ মাদকাসক্তি কি? এ সমস্যার সমাধানে একজন সমাজকর্মীর ভূমিকা

৬. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: যৌনরোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষকে STD প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৭. ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিস ভাগাভাগি না করা: ব্রাশ, রেজর বা ব্লেড অন্য কারো সাথে ভাগাভাগি না করা উচিত। এগুলোর মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

৮. গর্ভাবস্থায় সাবধানতা: যৌনরোগে আক্রান্ত মহিলাদের গর্ভধারণ এড়িয়ে চলা উচিত। তাদের নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

উপসংহার: STD বা যৌনবাহিত রোগগুলো নারীদের ও পুরুষদের যৌন মিলনের সময় সরাসরি সংক্রমিত হয় এবং এটি সমাজের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। নিরাপদ যৌনমিলন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে STD প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই যৌনরোগ থেকে নিজেকে এবং সমাজকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

Shihabur Rahaman
Shihabur Rahaman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 252