পরাগায়ন কাকে বলে?
পুষ্পধারী উদ্ভিদে পুংকেশরের পরাগধানী থেকে উৎপন্ন পরাগরেণু যখন একই ফুলের অথবা অন্য ফুলের স্ত্রিকেশরের রেখাবৃত বা গর্ভমুন্ডে পৌঁছে, তখন তাকে পরাগায়ন বলে। অর্থাৎ, পরাগায়ন হলো সেই প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ফুলের পুরুষ অংশ (পুংকেশর) থেকে নারী অংশে (স্ত্রীকেশর) পরাগরেণু সঞ্চারিত হয় এবং পরবর্তী ধাপে নিষেক ও বীজ গঠনের পথ তৈরি হয়।
নিচে পরাগায়ন সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকগুলো তালিকাভুক্তভাবে তুলে ধরা হলো—
-
পরাগায়নের সংজ্ঞা:
পুষ্পধারী উদ্ভিদের পুংকেশরের পরাগধানী থেকে পরাগরেণু স্ত্রিকেশরের রেখাবৃত বা গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াকেই পরাগায়ন বলে। -
পরাগায়নের গুরুত্ব:
-
পরাগায়ন ছাড়া অধিকাংশ পুষ্পধারী উদ্ভিদে নিষেক হতে পারে না।
-
নিষেক না হলে বীজ ও ফল গঠন হয় না।
-
তাই উদ্ভিদের বংশবিস্তার, ফলন ও কৃষি উৎপাদনের জন্য পরাগায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
-
-
পরাগায়নের প্রধান দুই ধরনের ধরন:
১. সমপরাগায়ন (Self-pollination):-
একই ফুলের বা একই গাছের অন্য ফুলের পুংকেশর থেকে সেই একই ফুলের বা একই গাছের ফুলের স্ত্রিকেশরে পরাগরেণু স্থানান্তরিত হলে তাকে সমপরাগায়ন বলে।
-
এতে জেনেটিক বৈচিত্র্য কম থাকে, কিন্তু প্রজনন তুলনামূলকভাবে নিশ্চিত হয়।
২. পরপরাগায়ন (Cross-pollination):
-
এক গাছের ফুলের পুংকেশর থেকে অন্য গাছের (কিন্তু একই প্রজাতির) ফুলের স্ত্রিকেশরে পরাগরেণু পৌঁছালে তাকে পরপরাগায়ন বলে।
-
এতে জেনেটিক বৈচিত্র্য বেশি হয়, ফলে উদ্ভিদের নতুন বৈশিষ্ট্য, শক্তি ও অভিযোজন ক্ষমতা বাড়ে।
-
-
পরাগায়নের মাধ্যম (Agent) বা বাহক:
পরাগরেণু এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার সময় বিভিন্ন বাহক বা মাধ্যম সাহায্য করে, যেমন—-
পোকামাকড়: মৌমাছি, প্রজাপতি, মাছি ইত্যাদি
-
বায়ু: হালকা ও শুকনা পরাগরেণু বায়ুর মাধ্যমে উড়ে যায়
-
পানি: জলজ উদ্ভিদের ক্ষেত্রে
-
পাখি ও বাদুড়: কিছু ফুলে বড় পাখি বা বাদুড় পরাগায়নে ভূমিকা রাখে
-
কখনও মানুষের সাহায্যেও কৃত্রিম পরাগায়ন করানো হয় (যেমন: ফলের বাগানে)।
-
-
পরাগায়ন ও ফুলের গঠনের সম্পর্ক:
-
উজ্জ্বল রঙ, সুগন্ধ, মধু, বিশেষ আকৃতির পাপড়ি ইত্যাদি মূলত পোকামাকড় বা অন্যান্য বাহককে ফুলে আকৃষ্ট করার জন্য।
-
অনেক ফুলের গঠন এমন হয়, যাতে নির্দিষ্ট বাহক সহজে পরাগরেণু বয়ে নিয়ে যেতে পারে।
-
-
পরাগায়ন থেকে পরবর্তী ধাপ – নিষেক:
-
পরাগায়নের মাধ্যমে পরাগরেণু রেখাবৃত বা গর্ভমুণ্ডে পৌঁছায়।
-
পরে পরাগনল গঠন হয়ে পুরুষ গ্যামেট গর্ভাশয়ে থাকা ডিম্বক পর্যন্ত গিয়ে ডিম্বানুর সঙ্গে মিলিত হয়—এটিই নিষেক।
-
নিষেকের ফলে বীজ ও ফল গঠিত হয়।
-
-
কৃষিতে পরাগায়নের ভূমিকা:
-
ধান, গম, ফল, সবজি—বেশিরভাগ ফসলেই সঠিক পরাগায়ন না হলে ফলন কম হয়।
-
মৌমাছি পালন (Bee keeping) অনেক সময় ফসলের পরাগায়ন বাড়াতে ব্যবহার করা হয়।
-
সব মিলিয়ে, পরাগায়ন হলো পুষ্পধারী উদ্ভিদের এমন এক মৌলিক প্রজনন ধাপ, যার মাধ্যমে পরাগরেণু পুরুষ অংশ থেকে নারী অংশে পৌঁছে পরবর্তী নিষেক, বীজ ও ফল তৈরির পথ সুগম করে।