পর্যায় সারণি কাকে বলে?
যে সারণিতে সব পরিচিত মৌলগুলোকে তাদের পারমাণবিক সংখ্যা, ইলেকট্রন বিন্যাস ও রাসায়নিক ধর্মের সাদৃশ্য অনুযায়ী সাজানো থাকে, তাকে পর্যায় সারণি বলে। অর্থাৎ, পর্যায় সারণি হলো একটি সুসংগঠিত টেবিল, যেখানে মৌলগুলোকে এমনভাবে ক্রমবিন্যাস করা হয়, যাতে একই রকম বৈশিষ্ট্যযুক্ত মৌলগুলো একই গ্রুপে পড়ে এবং মৌলের ধর্মে যে নিয়মিত পরিবর্তন ঘটে, তা সহজে বোঝা যায়। আধুনিক পর্যায় সারণিতে মৌলগুলো ক্রমান্বয়ে পারমাণবিক সংখ্যা (Atomic Number) অনুসারে সাজানো থাকে।
নিচে পর্যায় সারণি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকগুলো তালিকাভুক্তভাবে তুলে ধরা হলো—
-
পর্যায় সারণির সংজ্ঞা:
পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধি অনুযায়ী মৌলগুলোকে নির্দিষ্ট সারি (পর্যায়) ও স্তম্ভে (দল বা গ্রুপে) সাজিয়ে যেই সারণি তৈরি করা হয়, তাকে পর্যায় সারণি বলে। -
সারি ও স্তম্ভ (পর্যায় ও গ্রুপ):
-
অনুভূমিক সারিগুলোকে বলে পর্যায় (Period)।
-
উল্লম্ব স্তম্ভগুলোকে বলে দল বা গ্রুপ (Group)।
-
একই গ্রুপের মৌলগুলোর রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য অনেকটা সাদৃশ্যপূর্ণ হয়।
-
-
আধুনিক পর্যায় সারণির ভিত্তি:
-
আধুনিক পর্যায় সারণিতে মৌলগুলোকে পারমাণবিক সংখ্যা অনুযায়ী সাজানো হয়েছে।
-
আগের দিনে (মেন্ডেলিফ) মূলত পারমাণবিক ভর ভিত্তি ধরে সারণি করেছিলেন; পরে তা সংশোধন হয়ে আধুনিক রূপ নিয়েছে।
-
-
মৌলের শ্রেণিবিন্যাস:
পর্যায় সারণিতে মৌলগুলোকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়—-
ধাতু (Metals)
-
অধাতু (Non-metals)
-
ধাতুমধ্য (Metalloids) – যাদের মধ্যে ধাতু ও অধাতু—দুই রকম ধর্মের বৈশিষ্ট্য কিছুটা থাকে।
-
-
পর্যায় সারণির সুবিধা ও গুরুত্ব:
-
সব মৌল এক জায়গায় সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো, তাই তথ্য মনে রাখা ও বোঝা সহজ হয়।
-
কোনো মৌল সারণিতে কোথায় আছে, সেটি দেখেই তার
-
পারমাণবিক সংখ্যা
-
ইলেকট্রন বিন্যাস
-
ধাতু না অধাতু
-
প্রায় অনেক রাসায়নিক ধর্ম সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
-
-
নতুন মৌল আবিষ্কৃত হলে সেগুলোকে উপযুক্ত স্থানে বসানো যায়।
-
যারা রসায়ন অধ্যয়ন করে, তাদের জন্য পর্যায় সারণি হলো একটি ‘ম্যাপ’ বা মানচিত্রের মতো—যার সাহায্যে মৌলের গঠন ও ধর্ম সহজে বোঝা যায়।
-
-
পর্যায়বিধি (Periodic Law) – সংক্ষেপে:
আধুনিক পর্যায়বিধি অনুযায়ী—মৌলগুলোর রাসায়নিক ও ভৌত ধর্ম তাদের পারমাণবিক সংখ্যার পর্যায়িক ফাংশন।
অর্থাৎ, পারমাণবিক সংখ্যা নিয়মিতভাবে বাড়তে থাকলে মৌলের ধর্মেও একটি পুনরাবৃত্ত (পর্যায়িক) পরিবর্তন দেখা যায়। -
কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্লক (Block):
ইলেকট্রন বিন্যাসের ভিত্তিতে পর্যায় সারণির মৌলগুলোকে—-
s-ব্লক, p-ব্লক, d-ব্লক ও f-ব্লক–এ ভাগ করা হয়।
-
এর মাধ্যমে জানা যায় মৌলের বাহ্যিক খোলের ইলেকট্রন কোন অরবিটালে বেশি থাকে এবং সে অনুযায়ী তাদের রাসায়নিক ধর্ম কেমন হবে।
-
সব মিলিয়ে, পর্যায় সারণি হলো রসায়নের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক টুল, যার মাধ্যমে সব মৌলকে একটি সুসংগঠিত কাঠামোর মধ্যে রেখে তাদের গঠন, ধর্ম ও পারস্পরিক সম্পর্ক সহজে বোঝা যায়।
আরো পড়ুনঃ যৌগিক একক কাকে বলে?