যৌগিক একক কাকে বলে?
যৌগিক একক বুঝতে হলে প্রথমে জানা দরকার মাপজোকের একক কীভাবে গঠিত হয়। কোনো বস্তু বা পরিমাপের ধরন যদি এমন হয় যেখানে একটির বেশি মৌলিক একক একসঙ্গে ব্যবহার করতে হয়, তখন সেই পরিমাপকে প্রকাশ করতে যে একক লাগে তাকে বলা হয় যৌগিক একক। অর্থাৎ এ ধরনের একক কখনোই একা কোনো মৌলিক এককের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় না; বরং দুটি বা তার বেশি মৌলিক এককের গুণফল বা অনুপাতের মাধ্যমে এগুলো গঠিত হয়। দৈনন্দিন জীবন থেকে বিজ্ঞান—সব ক্ষেত্রে যৌগিক এককের ব্যবহার আমাদের কাজকে আরও নির্ভুল ও স্পষ্ট করে তোলে।
নিচে যৌগিক একক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো তালিকা আকারে সহজভাবে উপস্থাপন করা হলো:
-
যৌগিক এককের মূল ধারণা হলো একাধিক মৌলিক এককের সংমিশ্রণ। যেমন দৈর্ঘ্য, ভর, সময় ইত্যাদি মৌলিক একক আলাদাভাবে ব্যবহৃত হলেও যখন এদের গুণ বা ভাগ করা হয়, তখন তা যৌগিক একক তৈরি করে। উদাহরণ হিসেবে ঘনমিটার, বর্গমিটার বা মিটার/সেকেন্ডকে ধরা যায়।
-
আয়তনের একক ঘনমিটার (m³) একটি গুরুত্বপূর্ণ যৌগিক একক, কারণ এটি তিনটি মৌলিক একক—দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতার গুণফল। প্রতিটি মাপের একক হলো মিটার, এবং তিনটি মাত্রা যোগ হলে তা ঘনমিটার রূপে প্রকাশ পায়। তাই আয়তন কখনোই একক মিটারে প্রকাশ করা সম্ভব নয়; বরং মিটারের তিনটি মাত্রার সমন্বয়ে এটি গঠিত হয়।
-
বেগের একক মিটার/সেকেন্ড (m/s) আরেকটি প্রচলিত যৌগিক একক। বেগ নির্ণয় করতে দূরত্বকে (মিটার) সময় (সেকেন্ড) দ্বারা ভাগ করতে হয়। এই ভাগফলটি কখনোই কোনো পৃথক মৌলিক একক দ্বারা প্রকাশ করা যায় না; তাই বেগ যৌগিক একক হিসেবে পরিচিত।
-
ঘনত্বের একক কিলোগ্রাম/ঘনমিটার (kg/m³) একটি তুলনামূলক জটিল যৌগিক একক। এখানে ভরের মৌলিক একক কিলোগ্রামকে ভাগ করা হয় আয়তনের যৌগিক একক ঘনমিটারে। ফলে ঘনত্ব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে দুটি ধরনের একক মিলিত হয়ে একটি যৌগিক একক তৈরি করে।
-
চাপের একক নিউটন/বর্গমিটার (N/m²), যাকে পাস্কালও বলা হয়, যৌগিক এককের আরেকটি চমৎকার উদাহরণ। এখানে বল প্রকাশ পায় নিউটনে, আর ক্ষেত্রফল প্রকাশ পায় বর্গমিটারে। ফলে এটি মৌলিক এককের সংমিশ্রণে তৈরি।
-
বিদ্যুতের এককগুলোতেও যৌগিক এককের উপস্থিতি দেখা যায়, যেমন ভোল্ট (জুল/কুলম্ব), ওহম (ভোল্ট/অ্যাম্পিয়ার) ইত্যাদি। এগুলো সবই বিভিন্ন মৌলিক এককের গুণ বা ভাগ থেকে তৈরি।
-
যৌগিক একক ব্যবহার করার মূল উদ্দেশ্য হলো যেসব রাশি মৌলিক এককে বর্ণনা করা যায় না, সেগুলোকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা। যেমন বেগ, ত্বরণ, ঘনত্ব—এসব পরিমাপ মৌলিক এককে একক মানে প্রকাশ অসম্ভব, তাই যৌগিক এককের প্রয়োজন হয়।
-
বিজ্ঞান, প্রকৌশল, গণিত ও দৈনন্দিন জীবনের হিসাব-নিকাশে যৌগিক একক অপরিহার্য। এগুলো ছাড়া অনেক রাশির মাপ নির্ণয় অসম্পূর্ণ বা বিভ্রান্তিকর হয়ে পড়ে।
-
সব যৌগিক এককই SI পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে গঠিত হয়, যা আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করে এবং পরিমাপের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী সমন্বয় তৈরি করে।
উপরের সব তথ্য বিবেচনা করলে বোঝা যায়—যেসব একক একাধিক মৌলিক এককের সমন্বয়ে তৈরি হয়, তাদেরই যৌগিক একক বলা হয়। দৈনন্দিন ব্যবহার থেকে উন্নত বিজ্ঞানের গবেষণা—সবক্ষেত্রেই যৌগিক একক নির্ভুলতা, স্পষ্টতা ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।