মনোমার কাকে বলে?
যে সব ছোট, সরল গঠনবিশিষ্ট জৈব অণু পারস্পরিক রাসায়নিক বন্ধনের মাধ্যমে বারবার যুক্ত হয়ে বড় আকারের অণু বা পলিমার তৈরি করতে পারে, সেই প্রতিটি ছোট একক অণুকেই মনোমার বলে। সহজভাবে, বহু মনোমার একত্রে যুক্ত হয়ে যে বিশাল অণু (পলিমার) গঠন করে—মনোমার হলো সেই পলিমার অণুর পুনরাবৃত্ত একক।
নিচে মনোমার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকগুলো তালিকাভুক্তভাবে তুলে ধরা হলো—
-
মনোমারের সংজ্ঞা:
যে ছোট জৈব অণু রাসায়নিক বিক্রিয়ার (বিশেষ করে পলিমারাইজেশন) মাধ্যমে একই বা ভিন্ন ধরনের অনেক মনোমারের সাথে যুক্ত হয়ে পলিমার গঠন করে, তাকে মনোমার বলে। -
মনোমার ও পলিমারের সম্পর্ক:
-
বহু মনোমার → রাসায়নিক বিক্রিয়া → পলিমার
-
উদাহরণ: বহু ইথিন (CH₂=CH₂) মনোমার → যুক্ত হয়ে → পলিইথিন (এক ধরনের প্লাস্টিক) হয়।
-
-
মনোমারের সাধারণ বৈশিষ্ট্য:
-
সাধারণত আকারে ছোট ও তুলনামূলকভাবে সরল গঠনবিশিষ্ট।
-
বেশিরভাগ মনোমারের মধ্যে ডাবল বন্ড বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ থাকে, যেগুলোর মাধ্যমে তারা পরস্পরের সাথে যুক্ত হতে পারে।
-
মনোমার একা থাকলে সাধারণত স্বাভাবিক ছোট জৈব যৌগের মতো আচরণ করে; কিন্তু পলিমারাইজেশন হলেই তার বৈশিষ্ট্য অনেক বদলে যায়।
-
-
প্রাকৃতিক মনোমার ও পলিমার উদাহরণ:
-
গ্লুকোজ → মনোমার; বহু গ্লুকোজ যুক্ত হয়ে → স্টার্চ (শ্বেতসার) বা সেলুলোজ (উদ্ভিদের কোষ প্রাচীরের গঠন) তৈরি করে।
-
অ্যামাইনো অ্যাসিড → মনোমার; বহু অ্যামাইনো অ্যাসিড যুক্ত হয়ে → প্রোটিন (যেমন: হিমোগ্লোবিন, এনজাইম ইত্যাদি) তৈরি হয়।
-
-
কৃত্রিম (সিন্থেটিক) মনোমার ও পলিমার উদাহরণ:
-
ইথিন (Ethene) → মনোমার; পলিমার → পলিইথিন (Polyethene)
-
ভিনাইল ক্লোরাইড (CH₂=CHCl) → মনোমার; পলিমার → PVC (Polyvinyl chloride)
-
স্টাইরিন → মনোমার; পলিমার → পলিস্টাইরিন (ফোম, প্লাস্টিক কাপ ইত্যাদি)।
-
-
মনোমারের ধরন (সহজভাবে):
-
একাই নিজে পলিমার গঠন করে:
-
যেমন: কেবল এক ধরনের ইথিন মনোমার → পলিইথিন (একজাতীয় মনোমার থেকে পলিমার)।
-
-
একাধিক ভিন্ন মনোমার মিলেও পলিমার গঠন করতে পারে (কোপলিমার):
-
যেমন: দুটি ভিন্ন মনোমার মিলেও নতুন বৈশিষ্ট্যের পলিমার তৈরি হতে পারে।
-
-
-
দৈনন্দিন জীবনে মনোমার–পলিমার সম্পর্কের প্রয়োগ:
-
প্লাস্টিক ব্যাগ → পলিইথিন → ইথিন মনোমার থেকে তৈরি।
-
PVC পাইপ, তারের কভার → ভিনাইল ক্লোরাইড মনোমার থেকে তৈরি পলিমার।
-
আমাদের শরীরের প্রোটিন → অ্যামাইনো অ্যাসিড মনোমার থেকে তৈরি।
-
সব মিলিয়ে, মনোমার হলো পলিমারের ছোট একক গঠন–ইটের মতো, আর পলিমার হলো সেই ইটগুলো (মনোমার) সারি সারি যুক্ত হয়ে বানানো “বড় দালান”—একটি বৃহৎ অণু।