আপেক্ষিক আর্দ্রতা কাকে বলে?
আপেক্ষিক আর্দ্রতা আমাদের দৈনন্দিন আবহাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা বায়ুর আর্দ্রতার পরিমাণ বুঝতে সাহায্য করে। বায়ুতে কতটুকু জলীয়বাষ্প রয়েছে এবং নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বায়ু সর্বোচ্চ কতটুকু জলীয়বাষ্প ধারণ করতে পারে—তার তুলনা থেকেই এই ধারণা তৈরি হয়। ফলে আপেক্ষিক আর্দ্রতা যত বেশি হয়, বায়ু তত বেশি স্যাঁতসেঁতে মনে হয় এবং মানবদেহে তাপমাত্রার অনুভূতিও তত পরিবর্তিত হয়। নিচে বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হলো।
-
আপেক্ষিক আর্দ্রতা হল জলীয়বাষ্পের অনুপাত, যেখানে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপে বায়ুতে বিদ্যমান জলীয়বাষ্পের পরিমাণকে বায়ুর সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতার সাথে তুলনা করা হয়। অর্থাৎ, বায়ু যে সর্বোচ্চ পরিমাণ জলীয়বাষ্প ধারণ করতে পারে তার মধ্যে বাস্তবে যতটুকু রয়েছে—তার শতকরা মানই আপেক্ষিক আর্দ্রতা।
-
বায়ুর তাপমাত্রা আপেক্ষিক আর্দ্রতাকে সরাসরি প্রভাবিত করে। তাপমাত্রা বাড়লে বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা বাড়ে, ফলে একই পরিমাণ জলীয়বাষ্প থাকলেও আপেক্ষিক আর্দ্রতা কমে যায়। বিপরীতে তাপমাত্রা কমলে বায়ু কম জলীয়বাষ্প ধারণ করতে পারে এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেড়ে যায়।
-
আপেক্ষিক আর্দ্রতা সাধারণত শতকরা হারে প্রকাশ করা হয়, যেমন—৭০% আপেক্ষিক আর্দ্রতা মানে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বায়ু তার মোট ধারণক্ষমতার ৭০% বাষ্প ধারণ করেছে। যদি তা ১০০%-এ পৌঁছে যায়, তবে বায়ু সম্পৃক্ত বা saturated বলে গণ্য হয় এবং তখন সহজেই কুয়াশা, শিশির বা বৃষ্টির সৃষ্টি হতে পারে।
-
আপেক্ষিক আর্দ্রতার প্রধান সূত্রটি এমন:
আপেক্ষিক আর্দ্রতা = (বায়ুতে বিদ্যমান জলীয়বাষ্প / বায়ুর সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা) × ১০০
এই সূত্রের মাধ্যমে আবহাওয়াবিদরা সহজেই একটি অঞ্চলের আর্দ্রতার পরিমাণ নির্ধারণ করেন। -
উচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতার প্রভাব মানবদেহে স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়। যখন আর্দ্রতা বেশি থাকে, তখন ঘাম দ্রুত বাষ্পীভূত হতে পারে না। ফলে শরীর স্বাভাবিকভাবে ঠান্ডা হতে পারে না এবং গরম আরও বেশি অনুভূত হয়। এজন্য ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কখনো কখনো ৪০ ডিগ্রির মতো গরম লাগে যদি আর্দ্রতা বেশি থাকে।
-
কম আপেক্ষিক আর্দ্রতা বায়ুকে শুষ্ক করে তোলে, যা ত্বক ও গলার শুষ্কতা, সামান্য ঠান্ডায় বেশি অনুভব হওয়া, বা কাঠের জিনিসপত্রে ফাটল ধরার মতো প্রভাব ফেলতে পারে। শীতকালে আর্দ্রতা কম থাকে, তাই তখন বায়ু তুলনামূলক শুষ্ক মনে হয়।
-
কৃষি, আবহাওয়া পূর্বাভাস, পরিবেশ এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবন—সব ক্ষেত্রেই আপেক্ষিক আর্দ্রতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৃষকরা ফসলের জল দেওয়া, রোগ নিয়ন্ত্রণ বা মাঠের কাজের সময় নির্ধারণে আর্দ্রতার তথ্য বিবেচনা করে। পরিবেশবিদরা বায়ুদূষণ ছড়ানোর প্রবণতা বিশ্লেষণেও আর্দ্রতা ব্যবহার করেন।
-
আপেক্ষিক আর্দ্রতা পরিমাপের যন্ত্রকে হাইগ্রোমিটার বলা হয়। আধুনিক ডিজিটাল আবহাওয়া স্টেশনগুলোতে এই পরিমাপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা হয় এবং তা实时ভাবে পূর্বাভাসে ব্যবহৃত হয়।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, আপেক্ষিক আর্দ্রতা হলো নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপে বায়ুতে থাকা জলীয়বাষ্পের পরিমাণ এবং বায়ুর সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতার অনুপাত, যা বায়ুর স্যাঁতসেঁতে বা শুষ্কতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।