প্রাণীর বিভিন্নতার কারণ কী?
প্রাণীর বিভিন্নতার কারণ হলো পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, দেহগঠন, জিনগত পরিবর্তন, অভিযোজন এবং বিবর্তনজনিত প্রক্রিয়ার ভিন্নতা। এসব কারণের ফলে পৃথিবীর প্রাণীরা আকারে, গঠনে, আচরণে ও বাসস্থানে বৈচিত্র্য তৈরি করেছে। জীববিজ্ঞানে এই বৈচিত্র্যকে প্রাণীর বিভিন্নতা বা Animal Diversity বলা হয়।
প্রাণীর বিভিন্নতা বলতে কী বোঝায়?
প্রাণীর বিভিন্নতা বলতে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে পাওয়া প্রাণীদের গঠন, রং, আকার, আচরণ, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের পার্থক্যকে বোঝায়। একই পরিবেশেও ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে টিকে থাকে। এই বৈচিত্র্যই পৃথিবীর জীবজগৎকে সমৃদ্ধ করেছে।
পরিবেশগত পার্থক্য
পৃথিবীর তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টি, আলো এবং অন্যান্য পরিবেশগত উপাদান প্রাণীর গঠন ও আচরণকে প্রভাবিত করে।
-
ঠান্ডা অঞ্চলের মেরুভালুকের দেহে ঘন লোম ও চর্বির স্তর থাকে, যা তাপ ধরে রাখে।
-
মরুভূমির উট পানি সঞ্চয় করতে পারে এবং শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের বিশেষ ক্ষমতা রাখে।
-
জলাভূমির ব্যাঙ বা কুমির পানিতে ও স্থলে উভয় পরিবেশে মানিয়ে নিতে সক্ষম।
এভাবে পরিবেশ অনুযায়ী প্রাণীরা ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে, যা প্রাণীর বিভিন্নতার মূল কারণ।
খাদ্যাভ্যাসের ভিন্নতা
খাদ্যাভ্যাস প্রাণীর দেহগঠন ও আচরণ নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে।
-
তৃণভোজী প্রাণীর দাঁত চেপ্টা ও শক্ত, যা ঘাস বা পাতা কাটতে সাহায্য করে।
-
মাংসাশী প্রাণীর দাঁত ধারালো, যাতে মাংস ছিঁড়ে খেতে পারে।
-
পোকাভোজী বা ফলভোজী প্রাণীর দাঁত ও পরিপাকতন্ত্র খাদ্যের ধরন অনুসারে বিশেষভাবে মানিয়ে নেয়।
এই খাদ্যভেদ প্রাণীদের মধ্যে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে।
দেহগঠনের পার্থক্য
প্রাণীদের দেহগঠন ভিন্ন হওয়ার কারণে তাদের জীবনীশক্তি, চলাফেরা ও আচরণেও পার্থক্য দেখা যায়।
-
কেউ মেরুদণ্ডযুক্ত (ভার্টিব্রেট), কেউ মেরুদণ্ডহীন (ইনভার্টিব্রেট)
-
কেউ দুই পায়ে চলে, কেউ চার পায়ে, কেউ উড়ে বা সাঁতার কাটে
-
কারও শরীর নরম, কারও শক্ত খোলসযুক্ত
এ ধরনের গঠনগত পার্থক্যই প্রাণীর বৈচিত্র্যকে বিস্তৃত করে।
বিবর্তন ও জিনগত পরিবর্তন
জীবের জিনগত পরিবর্তন (Mutation) ও দীর্ঘকালীন বিবর্তন (Evolution) প্রাণীর রূপ ও আচরণে পরিবর্তন এনেছে।
-
বিবর্তনের মাধ্যমে সাধারণ জীব থেকে জটিল প্রাণী সৃষ্টি হয়েছে
-
একই প্রজাতির প্রাণীও জিনগত পরিবর্তনের ফলে ভিন্ন রূপ ধারণ করতে পারে
-
নতুন পরিবেশে টিকে থাকার জন্য কিছু প্রাণী নতুন বৈশিষ্ট্য অর্জন করে
এই পরিবর্তনগুলোই ধীরে ধীরে বিশাল প্রাণীবৈচিত্র্য তৈরি করেছে।
অভিযোজন বা Adaptation
অভিযোজন হলো পরিবেশের সাথে প্রাণীর মানিয়ে চলার ক্ষমতা।
যেমন—
-
মাছের ফুলকা পানিতে শ্বাস নিতে সাহায্য করে
-
পাখির ডানা উড়তে সহায়তা করে
-
গিরগিটির রং পরিবর্তন শিকার থেকে বাঁচতে সাহায্য করে
অভিযোজনজনিত এসব ভিন্নতা প্রাণীদের বৈচিত্র্যকে আরো বাড়িয়ে তোলে।
পৃথিবীতে প্রাণীর বিভিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে পরিবেশগত পার্থক্য, খাদ্যাভ্যাস, দেহগঠন, বিবর্তন, জিনগত পরিবর্তন ও অভিযোজনের কারণে। এই উপাদানগুলোর যৌথ প্রভাবে প্রাণীরা ভিন্ন ভিন্ন রূপ ও আচরণ নিয়ে পৃথিবীতে টিকে আছে, যা জীববিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।