বিশ্বায়ন কি?
বিশ্বায়ন কি – সংক্ষেপে বলতে গেলে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, তথ্যপ্রবাহ ও প্রযুক্তি যখন একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে, তখন সেই প্রক্রিয়াকে বিশ্বায়ন বলা হয়। এর ফলে পণ্য, সেবা, পুঁজি, শ্রম, জ্ঞান ও ধারণা দেশসীমা পেরিয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশ্ব এক ধরনের “গ্লোবাল ভিলেজে” পরিণত হয়।
বিশ্বায়নের সংজ্ঞা ও মূল ধারণা
বিশ্বায়ন শব্দটির মূল ইংরেজি রূপ Globalization।
সহজ ভাষায় এর অর্থ হলো—
-
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগের বিস্তার
-
সীমান্ত পেরিয়ে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও তথ্য আদান–প্রদানের স্বাধীনতা বৃদ্ধি
-
প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে দেশগুলোর পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি
এভাবে বিশ্বায়ন আধুনিক বিশ্বকে একটি সমন্বিত ব্যবস্থায় রূপ দেয়, যেখানে কোনো দেশ একা বিচ্ছিন্ন থেকে চলতে পারে না।
বিশ্বায়নের প্রধান বৈশিষ্ট্য
অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য
-
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি
-
বহুজাতিক কোম্পানির (MNCs) প্রভাব বিস্তার
-
মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারণা শক্তিশালী হওয়া
-
বৈদেশিক মুদ্রা আয়, আউটসোর্সিং, রেমিট্যান্স ইত্যাদির গুরুত্ব বৃদ্ধি
যোগাযোগ ও প্রযুক্তি
-
ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া, মোবাইল নেটওয়ার্কের বিস্ফোরক বৃদ্ধি
-
ই–কমার্স, অনলাইন শিক্ষা, ফ্রিল্যান্সিংয়ের মতো নতুন পেশা ও কাজের ধরন
-
তথ্য ও জ্ঞান কয়েক সেকেন্ডে এক দেশ থেকে আরেক দেশে পৌঁছে যাওয়া
সাংস্কৃতিক দিক
-
এক দেশের সিনেমা, গান, ফ্যাশন অন্য দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া
-
খাবার, পোশাক, জীবনধারা ও বিনোদনে বহুজাতিক প্রভাব
-
একই সঙ্গে স্থানীয় সংস্কৃতিকে রক্ষা ও বিকাশের চ্যালেঞ্জ তৈরি হওয়া
বাংলাদেশে বিশ্বায়নের প্রভাব
ইতিবাচক প্রভাব
-
তৈরি পোশাক, আইটি সেক্টর, ফ্রিল্যান্সিং ইত্যাদিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি
-
বিদেশি প্রযুক্তি, জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের সুযোগ
-
বৈদেশিক বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্সের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
-
আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ প্রসারিত হওয়া
নেতিবাচক চ্যালেঞ্জ
-
স্থানীয় শিল্প অনেক সময় বিদেশি পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারা
-
সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঝুঁকি
-
অর্থনৈতিক বৈষম্য ও ধনী–গরিব ব্যবধান বৃদ্ধি
-
বহুজাতিক কোম্পানির অতিরিক্ত প্রভাবের কারণে নীতি–নির্ধারণে চাপ সৃষ্টি
সব মিলিয়ে, বিশ্বায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা বিশ্বের দেশগুলোকে অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও তথ্যপ্রবাহের মাধ্যমে আরও কাছে এনে দেয়। সঠিক নীতি, দক্ষ মানবসম্পদ ও শক্তিশালী নিজস্ব সংস্কৃতি বজায় রাখতে পারলে বিশ্বায়নকে একটি দেশের উন্নয়নের শক্তিশালী সুযোগে পরিণত করা সম্ভব।