জীব কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি?

Avatar
calender 17-11-2025

জীব কাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী – সংক্ষেপে বলতে গেলে, যে সত্তা কোষ দ্বারা গঠিত এবং শ্বাস-প্রশ্বাস, পুষ্টি গ্রহণ, বৃদ্ধি, প্রজনন ও সাড়া দেওয়া ইত্যাদি জীবনক্রিয়া সম্পাদন করতে পারে, তাকে জীব বলে। একাডেমিক বই ও চাকরির পরীক্ষায় সাধারণত জীবকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়—উদ্ভিদজীব ও প্রাণিজীব।

জীব কাকে বলে?

জীব হলো এমন সকল সত্তা, যাদের দেহ এক বা একাধিক কোষ নিয়ে গঠিত এবং যারা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নির্দিষ্ট জীবনচক্র অতিক্রম করে। তারা পরিবেশ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে, শক্তি উৎপন্ন করে, বড় হয় এবং নতুন জীবের জন্ম দেয়।
জীবের সংজ্ঞা বুঝতে কিছু বিষয় বিশেষভাবে মনে রাখা জরুরি:

  • জীবনক্রিয়া সম্পাদনের সক্ষমতা: জীব অবশ্যই পুষ্টি গ্রহণ, শ্বাস-প্রশ্বাস, বিপাক ক্রিয়া, বর্জ্য নির্গমন, বৃদ্ধি ও প্রজননের মতো ধারাবাহিক জীবনক্রিয়া সম্পাদন করে। এই ক্রিয়াগুলো না থাকলে তাকে জীব বলা যায় না।

  • উদ্দীপনার প্রতি সাড়া দেওয়া: আলো, তাপ, শব্দ, স্পর্শ বা রাসায়নিক উদ্দীপনা পেলে জীব কোনো না কোনোভাবে সাড়া দেয়। যেমন, আলো পেলে গাছের ডাল ও পাতা আলোর দিকে ঝুঁকে যায়, আবার মানুষ গরম জিনিস স্পর্শ করলে হাত সরিয়ে নেয়।

  • নির্দিষ্ট জীবনচক্র: জীবের জন্ম, বৃদ্ধি, পরিপক্বতা, বার্ধক্য ও মৃত্যু—এই ধাপগুলোকে জীবনচক্র বলে। প্রতিটি জীব এই ধাপগুলো অতিক্রম করে, যা অজীব পদার্থের ক্ষেত্রে দেখা যায় না।

জীবের গঠন ও বৈশিষ্ট্য
গঠনগত বৈশিষ্ট্য

  • কোষ দ্বারা গঠিত দেহ: প্রতিটি জীবের দেহ এক বা একাধিক কোষ নিয়ে গঠিত। কোনো কোনো জীব যেমন ব্যাকটেরিয়া এককোষী, আবার মানুষ, গাছ, পোকা, মাছ ইত্যাদি অগণিত কোষ নিয়ে গঠিত বহুকোষী জীব।

  • জিন ও বংশগত বৈশিষ্ট্য: জীবের কোষে উপস্থিত জিনের মাধ্যমে এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে রং, গঠন, উচ্চতা, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি বংশগত গুণ চলে যায়। এটি প্রমাণ করে যে জীবের নিজস্ব বংশগত পরিচয় থাকে।

ক্রিয়াগত বৈশিষ্ট্য

  • বিপাক ক্রিয়া (Metabolism): জীবের দেহে খাদ্য ভেঙে শক্তি উৎপন্ন হওয়া ও নতুন উপাদান গঠনের সব মিলিয়ে বিপাক ক্রিয়া বলা হয়। এই ক্রিয়াই জীবকে সক্রিয় রাখে, কাজ করার শক্তি দেয় এবং দেহ গঠনে সাহায্য করে।

  • শ্বাস-প্রশ্বাস ও শক্তি উৎপাদন: জীব বাইরের পরিবেশ থেকে অক্সিজেন নিয়ে খাদ্য ভেঙে শক্তিতে রূপান্তর করে। কেউ বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন নেয়, কেউ পানির দ্রবীভূত অক্সিজেন ব্যবহার করে।

  • প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি: প্রতিটি জীব কোনো না কোনো উপায়ে নিজের মতো নতুন জীব সৃষ্টি করে। কেউ যৌন প্রজননের মাধ্যমে, কেউ অযৌন প্রজননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। এর ফলে প্রজাতির অস্তিত্ব টিকে থাকে।

জীব কত প্রকার ও কী কী?

একাডেমিক পাঠ্যক্রম ও চাকরির পরীক্ষায় জীবকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়—উদ্ভিদজীবপ্রাণিজীব

উদ্ভিদজীব

উদ্ভিদজীব হলো সেই সব জীব, যারা সাধারণত স্থির থাকে এবং সূর্যালোকের সাহায্যে নিজেরাই খাদ্য তৈরি করে।

  • স্বপোষী বৈশিষ্ট্য: উদ্ভিদ কোষে ক্লোরোপ্লাস্ট নামক অংশ থাকে, যেখানে ক্লোরোফিলের সাহায্যে সূর্যালোক, পানি ও কার্বন ডাইঅক্সাইড থেকে খাদ্য তৈরি হয়—একে প্রকাশ-সংস্লেষণ বলে। ফলে উদ্ভিদ অন্যের ওপর নির্ভর না করে নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করতে পারে।

  • কোষপ্রাচীরের উপস্থিতি: উদ্ভিদ কোষের চারদিকে শক্ত কোষপ্রাচীর থাকে, যা তাদের দেহকে দৃঢ় করে ও নির্দিষ্ট আকার দেয়।

  • উদাহরণ: আমগাছ, নারিকেল গাছ, ধানের গাছ, ঘাস, লতা-পাতা, শৈবাল ইত্যাদি সবই উদ্ভিদজীবের অন্তর্ভুক্ত।

প্রাণিজীব

প্রাণিজীব হলো সেই সব জীব, যারা সাধারণত চলাচল করতে সক্ষম এবং খাদ্যের জন্য অন্য জীবের ওপর নির্ভরশীল।

  • পরপোষী বৈশিষ্ট্য: প্রাণিজীব নিজেরা খাদ্য তৈরি করতে পারে না। তারা উদ্ভিদ বা অন্য প্রাণী খেয়ে খাদ্য সংগ্রহ করে। তাই তাদের পরপোষী বলা হয়।

  • চলাচল ও স্নায়ুতন্ত্র: অধিকাংশ প্রাণিজীব দৌড়ানো, উড়া, সাঁতার কাটা বা হামাগুড়ি দেওয়ার মাধ্যমে স্থান পরিবর্তন করতে পারে। অনেক প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্র উন্নত হওয়ায় তারা দ্রুত উদ্দীপনা বুঝে সাড়া দিতে পারে।

  • উদাহরণ: মানুষ, গরু, ছাগল, বিড়াল, মাছ, পাখি, পোকা, ব্যাঙ ইত্যাদি প্রাণিজীবের উদাহরণ।

সংক্ষেপে, জীব হলো সেই সকল সত্তা, যারা কোষ দ্বারা গঠিত এবং শ্বাস-প্রশ্বাস, পুষ্টি গ্রহণ, বৃদ্ধি, প্রজনন ও সাড়া দেওয়ার মতো জীবনক্রিয়া সম্পাদন করতে পারে। একাডেমিকভাবে জীবকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়—উদ্ভিদজীব ও প্রাণিজীব। জীবের বৈশিষ্ট্য ও শ্রেণিবিন্যাস ভালোভাবে বুঝতে পারলে জীববিজ্ঞানের ভিত্তিমূলক অংশ সহজে আয়ত্ত করা যায়।

আরো পড়ুনঃ মানুষ কাকে বলে?

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD