মানুষ কাকে বলে?
মানুষ হলো এমন এক সৃষ্টিজীব, যে বিবেক, জ্ঞান, বুদ্ধি, নৈতিক বোধ ও স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি নিয়ে জীবনযাপন করে। অন্য প্রাণীর মতো শুধু খাওয়া–ঘুমানো–বংশবিস্তারই তার কাজ নয়; মানুষ চিন্তা করে, ভালো–মন্দ বিচার করে, সুন্দর–কুৎসিত আলাদা করে, নিজেকে ও সমাজকে বদলাতে পারে। তাই মানুষকে সাধারণভাবে বলা যায় – বিবেকবান, সামাজিক ও দায়িত্বশীল জীব।
মানুষ কাকে বলে – মূল বৈশিষ্ট্যগুলো
-
বিবেক ও নৈতিক বোধসম্পন্ন জীব
মানুষ ভালো–মন্দ, ন্যায়–অন্যায়, হালাল–হারাম, উপকারী–অপকারী ইত্যাদি বিষয় বিবেক দিয়ে বিচার করতে পারে। ভুল করলে অনুশোচনা হয়, সঠিক কাজ করলে তৃপ্তি পায় – এই নৈতিক অনুভূতি মানুষকে অন্য প্রাণী থেকে আলাদা করে। -
বুঝতে ও চিন্তা করতে সক্ষম
মানুষ বুদ্ধি ও জ্ঞান ব্যবহার করে অভিজ্ঞতা থেকে শেখে, কারণ–ফল বিশ্লেষণ করে, পরিকল্পনা করে, ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে পারে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা, প্রযুক্তি, সভ্যতা – সবই মানুষের এই চিন্তাশক্তির ফল। -
ভাষা ব্যবহারকারী ও যোগাযোগক্ষম জীব
মানুষ ভাষার মাধ্যমে কথা, লেখা, প্রতীক ব্যবহার করে অনুভূতি, জ্ঞান, ভাবনা একে–অপরের সঙ্গে ভাগ করে নেয়। ভাষা মানুষের সংস্কৃতি, সাহিত্য ও জ্ঞানের ভাণ্ডারকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দেয়। -
সামাজিক ও সম্পর্কনির্ভর সত্তা
মানুষ একা থাকতে পারে না; পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র – এসবের মধ্যে থেকেই বাঁচে। সহযোগিতা, সহমর্মিতা, দায়িত্ববোধ, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব – এসব মানসিক গুণ মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে প্রকাশ করে। -
দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিমূলক জীব
মানুষ শুধু নিজের জন্য নয়, পরিবার, সমাজ ও পরিবেশের প্রতিও দায়িত্বশীল। কাজের জন্য সে ঈশ্বর, সমাজ এবং নিজের বিবেকের কাছে জবাবদিহি অনুভব করে। এ কারণে মানুষকে অনেক সময় “দায়িত্বশীল সৃষ্টিজীব” বলা হয়। -
আত্মসচেতন ও অর্থ অনুসন্ধানকারী জীব
মানুষ নিজের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করে – “আমি কে?”, “কোথা থেকে এসেছি?”, “কোথায় যাচ্ছি?”, “জীবনের উদ্দেশ্য কী?” – এ ধরনের প্রশ্ন করার আত্মসচেতন ক্ষমতা অন্য প্রাণীর নেই। ধর্ম, দর্শন, নীতি ও মূল্যবোধের অনুসন্ধানও এখান থেকেই শুরু।
শেষ কথা, মানুষ কাকে বলে—তার সহজ উত্তর হলো: যে জীব জ্ঞান, বিবেক, নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ ও সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে সচেতনভাবে জীবন যাপন করে, তাকেই মানুষ বলা হয়। শুধু শারীরিক গঠন দিয়ে নয়, বরং তার চিন্তা, চরিত্র, আচরণ ও নৈতিকতার মধ্য দিয়েই মানুষের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ পায়।
আরো পড়ুনঃ পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয় কাকে?