কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি বলা হয় কেন?

Avatar
calender 17-11-2025

কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি বলা হয়, কারণ তাঁর সাহিত্য ও সঙ্গীতে স্বাধীনতা, সাম্য, মানবতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা এমন শক্তভাবে প্রকাশ পেয়েছে, যা বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের সঙ্গে সরাসরি মিলে যায়। তিনি শোষিত মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন এবং রাষ্ট্রীয়ভাবেও তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

কাজী নজরুল ইসলাম: জাতীয় কবির সংক্ষিপ্ত পরিচয়

কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯–১৯৭৬) বাংলা ভাষার এক অনন্য প্রতিভা। তিনি একসঙ্গে ছিলেন কবি, গীতিকার, সুরকার, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। তাঁর বিপুল রচনা ভাণ্ডারে বিদ্রোহ, মুক্তি, সাম্য, প্রেম ও মানবতার আহ্বান একাকার হয়ে গেছে। তাই “জাতীয় কবি” উপাধি শুধু সম্মান নয়, বাস্তবতারই প্রতিফলন।

স্বাধীনতা ও বিদ্রোহের কণ্ঠস্বর

নজরুলকে প্রথমে পরিচিত করে “বিদ্রোহী কবি” উপাধি।

  • তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ ব্রিটিশবিরোধী চেতনার আগুন জ্বালিয়েছিল।

  • তিনি সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও সব ধরনের শোষণের বিরুদ্ধে সরাসরি গর্জে উঠেছেন।

  • তাঁর কবিতা ও গান যুব সমাজকে স্বাধীনতা ও ন্যায়ের সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে।

শোষণ–বঞ্চনার বিরুদ্ধে কবিতা ও গান

  • ‘দারিদ্র্য’, ‘সাম্যবাদী’, ‘মানবতা’ প্রভৃতি রচনায় গরিব–বঞ্চিত মানুষের পক্ষ নিয়ে কলম ধরেছেন।

  • নিপীড়িত মানুষের দুঃখকে তিনি জাতির সামগ্রিক দুঃখ হিসেবে দেখেছেন।

  • এ কারণে তিনি শুধু সাহিত্যিক নন, বরং জাতির অধিকার-কণ্ঠ হয়ে উঠেছেন।

সাম্য, মানবধর্ম ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা

নজরুলের সবচেয়ে বড় শক্তি তাঁর সাম্যের দর্শনমানবধর্ম

  • তিনি ধর্মকে বিভেদের নয়, মিলনের শক্তি হিসেবে দেখেছেন।

  • তাঁর লেখায় হিন্দু–মুসলিম–সকল মানুষের সমান মর্যাদার কথা উঠে আসে।

হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের বার্তা

  • নজরুল একদিকে লিখেছেন ইসলামী গান, হামদ–নাত;

  • অন্যদিকে শিব, কৃষ্ণ, কালীকে নিয়েও অসংখ্য গীত ও কবিতা রচনা করেছেন।

  • এই মিশ্র চেতনা বাঙালি জাতির অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রচিন্তা গঠনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

জাতীয় সংগ্রাম ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নজরুল

  • ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তাঁর গান ও কবিতা ছিল অনুপ্রেরণার উৎস।

  • পরবর্তীতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও নজরুলগীতি স্বাধীনতার চেতনা জাগিয়ে রাখে।

  • বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পেছনে যে মানসিক ও সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি, তার অন্যতম চালিকাশক্তি নজরুলের সাহিত্য।

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও জাতীয় সত্তার প্রতীক

  • স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে মর্যাদা দেয়।

  • তাঁর রচনা আজ পাঠ্যপুস্তক, সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অপরিহার্য অংশ।

  • জাতির স্বাধীনতা, ন্যায়, সাম্য ও মানবতার স্বপ্নকে তিনি যে ভাষা দিয়েছেন, সেটাই তাঁকে প্রকৃত অর্থে জাতীয় কবি বানিয়েছে।

কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি বলা হয়, কারণ তিনি বাঙালি জাতির স্বাধীনতা, সাম্য, মানবতা ও অসাম্প্রদায়িকতার শ্রেষ্ঠ কণ্ঠস্বর। শোষণবিরোধী বিদ্রোহ, ধর্মীয় সম্প্রীতি, মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণা এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি—সব মিলিয়ে তিনি বাংলাদেশের সম্মিলিত জাতীয় সত্তার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।

আরো পড়ুনঃ কাজী নজরুল ইসলামকে বিদ্রোহী কবি বলা হয় কেন?

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD