ডিএনএকে কেন বংশগতির রাসায়নিক ভিত্তি বলা হয়?
ডিএনএকে বংশগতির রাসায়নিক ভিত্তি বলা হয়, কারণ জীবের সব বংশগত বৈশিষ্ট্যের তথ্য ডিএনএ অণুর মধ্যেই রাসায়নিকভাবে সঞ্চিত, সংরক্ষিত, অনুলিপিকৃত ও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পরিবাহিত হয়। অর্থাৎ যে অণুটি বাস্তবে “বংশগতির সব তথ্য বহন করে ও চালনা করে”, সেটিই ডিএনএ; তাই একে বংশগতির রাসায়নিক ভিত্তি বলা হয়।
ডিএনএকে বংশগতির রাসায়নিক ভিত্তি বলার কারণগুলো
-
ক্রোমোসোমে ডিএনএ ও জিনের অবস্থান
কোষের নিউক্লিয়াসে থাকা ক্রোমোসোম মূলত ডিএনএ ও প্রোটিন দিয়ে তৈরি। ক্রোমোসোমের নির্দিষ্ট অংশকে বলা হয় জিন, আর জিন আসলে ডিএনএরই ছোট ছোট অংশ। বংশগত বৈশিষ্ট্য জিনের মাধ্যমে বংশানুক্রমে যায়, তাই মূল বাহক ডিএনএ। -
ডিএনএতেই বংশগত তথ্যের কোড সঞ্চিত থাকে
ডিএনএ অণুতে চার ধরনের নিউক্লিওটাইড বেস (A, T, G, C) নির্দিষ্ট ক্রমে সাজানো থাকে। এই বেসের বিন্যাসই গঠন করে জিনগত “কোড”, যা দিয়ে চোখের রঙ, উচ্চতা, রক্তের গ্রুপ, এনজাইম ইত্যাদি অসংখ্য বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ রাসায়নিক বিন্যাসই বংশগত তথ্য। -
ডিএনএর অনুলিপি তৈরির (Replication) বিশেষ ক্ষমতা
ডাবল হেলিক্স গঠন ও A-T, G-C জোড়া বাঁধার নিয়মের কারণে ডিএনএ নিজেই নিজের হুবহু অনুলিপি (replica) তৈরি করতে পারে। ফলে কোষ বিভাজনের সময় প্রতিটি নতুন কোষে একই ডিএনএ চলে যায়; আবার গ্যামেট গঠনের সময়ও ডিএনএ সন্তানের দেহে পৌঁছে। তাই বংশগত তথ্য নষ্ট না হয়ে অক্ষুণ্ণভাবে প্রজন্মান্তরে সঞ্চারিত হয়। -
ডিএনএ প্রোটিন ও এনজাইম তৈরির “মাস্টার প্ল্যান”
ডিএনএর কোড অনুযায়ী mRNA তৈরি হয়, mRNA থেকে রাইবোজোমে প্রোটিন সংশ্লেষ হয়। এই প্রোটিনই এনজাইম, হরমোন, কাঠামোগত প্রোটিন ইত্যাদি হিসেবে কাজ করে—যা সরাসরি জীবের রূপ, গঠন ও বৈশিষ্ট্যে প্রকাশ পায়। অর্থাৎ ডিএনএ → প্রোটিন → বৈশিষ্ট্য, এই রাসায়নিক ধারাই বংশগত বৈশিষ্ট্য বাস্তবে প্রকাশ করে। -
ডিএনএর পরিবর্তন (Mutation) মানেই বংশগত পরিবর্তন
ডিএনএর বেসের ক্রমে পরিবর্তন (mutation) ঘটলে জিনের গঠন বদলে যায়, ফলে প্রোটিনের গঠন ও কাজ বদলে গিয়ে নতুন বৈশিষ্ট্য বা রোগ প্রকাশ পেতে পারে। এতে প্রমাণ হয়, বংশগত পরিবর্তনের মূল “রাসায়নিক স্থান”ও ডিএনএ। -
বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত জিনগত পদার্থ
ব্যাকটেরিয়ার ট্রান্সফরমেশন (Griffith, Avery) ও ব্যাকটেরিওফাজের (Hershey–Chase) পরীক্ষায় দেখা গেছে, প্রোটিন নয়, বরং ডিএনএ-ই জিনগত পদার্থ হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ জীবাণু ও ভাইরাসের ক্ষেত্রেও বংশগত তথ্যের রাসায়নিক বাহক ডিএনএ।
সব দিক বিচার করলে দেখা যায়, জীবদেহে বংশগত তথ্য যে অণুর রাসায়নিক গঠনে লেখা থাকে, যা নিজে নিজের অনুলিপি বানায়, প্রোটিন তৈরির নির্দেশ দেয়, পরিবর্তিত হলে বৈশিষ্ট্য বদলায়—সেই অণু হচ্ছে ডিএনএ। তাই ডিএনএকে যথার্থভাবেই “বংশগতির রাসায়নিক ভিত্তি” বলা হয়।