প্রোটোপ্লাজমকে জীবদেহের ভৌত ভিত্তি বলা হয় কেন?
প্রোটোপ্লাজমকে জীবদেহের ভৌত ভিত্তি বলা হয়, কারণ জীবদেহের সব জীবনীশক্তি, যেমন শ্বাসক্রিয়া, খাদ্যপরিবর্তন (বিপাক), বৃদ্ধি, প্রজনন, উত্তেজনা গ্রহণ–এই সবকিছুর মূল কেন্দ্র হলো প্রোটোপ্লাজম। যে অংশে প্রোটোপ্লাজম আছে, জীবনী প্রক্রিয়া সেখানে চলতে পারে; আর প্রোটোপ্লাজম নষ্ট হলে সেই অংশের জীবনক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যায়। তাই একে জীবনের ভৌত বা শারীরিক ভিত্তি বলা হয়।
প্রোটোপ্লাজমকে জীবদেহের ভৌত ভিত্তি বলার কারণ
-
কোষের মূল গঠন উপাদান
জীবের দেহ গঠনের ক্ষুদ্রতম একক হলো কোষ, আর প্রতিটি কোষের মূল অংশই প্রোটোপ্লাজম (সাইটোপ্লাজম + নিউক্লিয়াস)। অর্থাৎ দেহের যেখানেই জীবিত কোষ আছে, সেখানেই প্রোটোপ্লাজম আছে। -
সব জীবনী প্রক্রিয়ার কেন্দ্র
শ্বাসক্রিয়া, খাদ্য হজম ও বিপাক, শক্তি উৎপাদন, বর্জ্য পদার্থ গঠন ও নির্গমন, প্রোটিন সংশ্লেষ, কোষ বিভাজন – সবকিছুর রসায়নিক ক্রিয়া সংঘটিত হয় প্রোটোপ্লাজমে। তাই জীবনের সব কাজের বাস্তব ভৌত ক্ষেত্র হলো প্রোটোপ্লাজম। -
বৃদ্ধি ও প্রজননের স্থান
কোষ বিভাজন, ক্রোমোজোমের আচরণ, বংশগত বৈশিষ্ট্য বহন – এগুলো মূলত নিউক্লিয়াস ও আশেপাশের প্রোটোপ্লাজমে ঘটে। অর্থাৎ জীবের বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার–দুটোরই ভিত্তি প্রোটোপ্লাজম। -
উত্তেজনা গ্রহণ ও সাড়া প্রদানের ক্ষমতা
আলো, তাপ, স্পর্শ, রাসায়নিক পদার্থের মতো বিভিন্ন উত্তেজনা প্রোটোপ্লাজম গ্রহণ করে এবং তার ভিত্তিতেই কোষ প্রতিক্রিয়া দেখায়। কাজেই জীবের সংবেদনশীলতা ও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনের শারীরিক মাধ্যমও প্রোটোপ্লাজম। -
রাসায়নিক গঠন ও কার্যকরীতা
প্রোটোপ্লাজমে থাকে প্রোটিন, লিপিড, কার্বোহাইড্রেট, নিউক্লিয়িক অ্যাসিড, খনিজ লবণ ও পানি—যেগুলো দিয়ে এনজাইম, হরমোন, কাঠামোগত প্রোটিন ইত্যাদি গঠিত হয়। এই সব যৌগের কার্যকলাপ থেকেই জীবনের সব দৃশ্যমান লক্ষণ প্রকাশ পায়। -
প্রোটোপ্লাজম নষ্ট হলে জীবনী শক্তি নষ্ট হয়
কোনো কোষে প্রোটোপ্লাজম সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হলে, সেই কোষ আর জীবিত থাকে না। অর্থাৎ জীবন টিকে থাকার জন্য প্রোটোপ্লাজম অপরিহার্য, তাই একে জীবনের ভৌত ভিত্তি বলা খুবই যৌক্তিক।
শেষ কথা, প্রোটোপ্লাজমকে জীবদেহের ভৌত ভিত্তি বলা হয়, কারণ জীবের প্রতিটি জীবিত কোষ এর ওপর নির্ভরশীল, এবং জীবনের সকল মৌলিক ক্রিয়া–বৃদ্ধি, বিপাক, প্রজনন, উত্তেজনা গ্রহণ ও সাড়া–সবই প্রোটোপ্লাজমের মধ্যেই ঘটে। প্রোটোপ্লাজম ছাড়া জীবের কোনো অংশকে সত্যিকারের “জীবিত” বলা যায় না।