পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয় কাকে?
পৃথিবীর ফুসফুস হিসেবে পরিচিত আমাজন বন পৃথিবীর পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় অপরিসীম ভূমিকা রাখে। বিশাল এই বৃষ্টিবন শুধু অক্সিজেন উৎপাদনেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং বৈশ্বিক জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পরিবেশগত স্থিতিশীলতার কেন্দ্রেও পরিণত হয়েছে। তাই একে মানবদেহের ফুসফুসের মতোই পৃথিবীর অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিচে আমাজন বনকে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হওয়ার কারণগুলো তালিকা আকারে সহজ ভাষায় তুলে ধরা হলো।
-
আমাজন বন পৃথিবীর মোট অক্সিজেনের প্রায় ২০% উৎপাদন করে, যা মানব ও প্রাণীর জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিশাল বৃক্ষরাজি দিনে কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন নিঃসরণ করে পরিবেশকে বসবাসযোগ্য রাখে।
-
এই বনকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কার্বন সিংক বলা হয়। গাছপালা বিশাল পরিমাণ কার্বন ধরে রেখে বাতাসে কার্বন–ডাই–অক্সাইডের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, ফলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও জলবায়ু পরিবর্তনের গতি ধীর হয়।
-
বিশ্বের এক–তৃতীয়াংশের বেশি ট্রপিক্যাল রেইনফরেস্ট আমাজনে অবস্থিত, যা পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখে। বনের আর্দ্রতা, বাষ্পীভবন ও বৃষ্টিপাতের চক্র দক্ষিণ আমেরিকাসহ অন্যান্য অঞ্চলের আবহাওয়া স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
-
আমাজন বনে আছে ৩০ লক্ষেরও বেশি উদ্ভিদ, কীটপতঙ্গ ও প্রাণীর প্রজাতি, যার বেশিরভাগই পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। এত বড় জীববৈচিত্র্য শুধু পরিবেশগতভাবে নয়, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, পরিবেশ রক্ষা এবং ওষুধ আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
-
এই বনকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক ফিল্টার। গাছের শিকড় ও মাটি নদী ও ঝর্ণার পানি বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে। আমাজন নদীর পানি প্রবাহ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম, এবং এ বন সেই পানি ব্যবস্থাকে সুসংহত রাখে।
-
বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণে আমাজনের প্রভাব অসাধারণ। বনের আর্দ্রতা ও বাষ্পীভবন প্রক্রিয়া অঞ্চলজুড়ে নিয়মিত বৃষ্টি সৃষ্টি করে, যা কৃষি, নদী–ব্যবস্থা ও মানুষের জীবনধারায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
-
আমাজন বনকে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয় কারণ এটি পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে প্রাকৃতিক ভূমিকা পালন করে, যেমন মানবদেহে ফুসফুস অক্সিজেন–কার্বন বিনিময়ের মাধ্যমে শরীরের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখে।
-
পৃথিবীর বহু আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবন–জীবিকা এই বনের ওপর নির্ভরশীল। তারা এখান থেকে খাদ্য, পানি, ঔষধি উদ্ভিদ এবং বেঁচে থাকার উপকরণ সংগ্রহ করে, যা মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির দীর্ঘকালীন সম্পর্কের প্রমাণ বহন করে।
-
আমাজন বন আগুন, বন–নিধন, কৃষিকাজ ও নগরায়নের কারণে ক্রমশ হুমকির মুখে পড়ছে। এই বন ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু, বৃষ্টিপাত, জীববৈচিত্র্য এবং অক্সিজেন উৎপাদন মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে।
সব মিলিয়ে আমাজন বন পৃথিবীর পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখার একটি মূল কেন্দ্র। অক্সিজেন উৎপাদন, কার্বন শোষণ, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে একে যথার্থভাবেই “পৃথিবীর ফুসফুস” বলা হয়।