হযরত মুহাম্মদ সাঃ কত বছর বয়সে নবুওয়াত লাভ করেন?

Avatar
calender 15-11-2025

হযরত মুহাম্মদ (সা.) ৪০ বছর বয়সে নবুওয়াত লাভ করেন। এই বয়সেই আল্লাহতায়ালা তাঁকে সমগ্র মানবজাতির জন্য শেষ নবী ও রাসুল হিসেবে মনোনীত করেন এবং প্রথম ওহি নাযিলের মাধ্যমে নবুওয়াতের দায়িত্ব প্রদান করেন। মক্কার নিকটবর্তী হেরা গুহায় রমজান মাসের এক রাতে এই মহান ঘটনা সংঘটিত হয়, যা ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মোড় পরিবর্তনের সূচনা।

নবুওয়াত লাভের সঠিক বয়স ও সময়

  • হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম হয় মক্কায় আামুল ফীল অর্থাৎ হাতির বছর।

  • দীর্ঘ বাল্য ও যৌবনজীবনে তিনি সত্যবাদী, আমানতদার ও ন্যায়পরায়ণ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

  • ঠিক ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুওয়াত প্রাপ্ত হন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে নবী ও রাসুলের দায়িত্ব পান।

  • এ সময় তিনি মানুষের মধ্যে অতুলনীয় চরিত্র ও বিশুদ্ধ জীবনের জন্য “আল-আমীন” নামে পরিচিত ছিলেন।

হেরা গুহায় প্রথম ওহি নাযিল

  • নবুওয়াতের আগে তিনি প্রায়ই হেরা গুহায় একাকী ইবাদত ও ভাবনা-চিন্তায় মগ্ন থাকতেন

  • এক রাতে গুহায় অবস্থানকালে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) তাঁর কাছে আগমন করেন।

  • জিবরাইল (আ.) প্রথমে তাঁকে “اقرأ (ইক্বরা)” তথা “পড়” বলে সম্বোধন করেন।

  • এরপর সূরা আলাক-এর প্রথম কয়েকটি আয়াত নাযিল হয়, আর এইভাবেই প্রথম ওহি নাযিলের মাধ্যমে নবুওয়াত শুরু হয়।

  • এই ঘটনাই তাঁর নবুওয়াত লাভের আনুষ্ঠানিক সূচনা হিসেবে গৃহীত।

৪০ বছর বয়স কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল

  • ৪০ বছরকে পরিপক্ব বুদ্ধি ও জীবন-অভিজ্ঞতার পূর্ণতা হিসেবে ধরা হয়।

  • এই বয়স পর্যন্ত তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য, পারিবারিক জীবন, সামাজিক নেতৃত্ব—সব ক্ষেত্রেই মানুষের আস্থা অর্জন করেছিলেন।

  • মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস পুঁজি করেই তিনি ঈমান, তাওহিদ ও নৈতিকতার দাওয়াত শুরু করেন।

  • অনেক আলেমের মতে, এই বয়সে মানুষ নিজের চরিত্র, চিন্তা ও বিচারে স্থিরতা ও পরিণতিতে পৌঁছায়, তাই অধিকাংশ নবী-রাসুলও এ বয়সের কাছাকাছি সময়ে নবুওয়াত পেয়েছেন বলে উল্লেখ আছে।

নবুওয়াত লাভের পর জীবনের ধারা

  • নবুওয়াত প্রাপ্তির পর প্রথম তিন বছর তিনি গোপনে ইসলামের দাওয়াত দেন।

  • খুব অল্প কিছু ঘনিষ্ঠ মানুষ—খাদিজা (রা.), আলী (রা.), আবু বকর (রা.) প্রমুখ ব্যক্তি প্রথম ইসলামে দীক্ষিত হন।

  • ধীরে ধীরে তিনি প্রকাশ্যে তাওহিদের দাওয়াত শুরু করলে কুরাইশদের বিরোধিতা তীব্র হয়ে ওঠে।

  • তবুও তিনি ধৈর্য, ন্যায় ও করুণার সাথে ইসলামের দাওয়াত চালিয়ে যান, যা তাঁর নবুওয়াতি জীবনের স্বভাবিক বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে।

ইসলামের ইতিহাসে এই বয়সের ঘটনাটির গুরুত্ব

  • ৪০ বছর বয়সে নবুওয়াত লাভের মধ্য দিয়েই কুফর ও জাহেলিয়াতমুক্ত এক নতুন যুগ শুরু হয়।

  • মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, নারী-পুরুষের সম্মান, সুশাসন, দয়া, পরোপকার—সব কিছুর পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টান্ত তাঁর জীবন থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়।

  • কোরআন নাযিল, সুন্নাহ ও তাঁর বাস্তব জীবনচর্চার মূল ভিত্তিই হলো এই নবুওয়াত লাভের ঘটনা।

  • তাই “হযরত মুহাম্মদ (সা.) কত বছর বয়সে নবুওয়াত লাভ করেন” – এই প্রশ্ন শুধু তথ্য নয়, বরং ইসলামি ইতিহাসের একটি মূল সন্ধিক্ষণ মনে করিয়ে দেয়।

সারসংক্ষেপ

সবশেষে, স্পষ্টভাবে বলা যায়—হযরত মুহাম্মদ (সা.) ৪০ বছর বয়সে নবুওয়াত লাভ করেন। এই বয়সে তিনি চরিত্র, চিন্তা ও অভিজ্ঞতায় এমন উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন যে, আল্লাহ তাঁকে সমগ্র মানবজাতির জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে মনোনীত করেন। হেরা গুহায় প্রথম ওহি নাযিলের ঘটনা শুধু তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসের এক মহান মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা। তাই নবীর বয়স, নবুওয়াত লাভের স্থান ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানা প্রত্যেক মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীর জন্য অত্যন্ত জরুরি।

আরো পড়ুনঃ মুসলিমদের জাতির পিতা কে?

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD