মুসলিমদের জাতির পিতা কে?

Avatar
calender 14-11-2025

মুসলিমদের জাতির পিতা হিসেবে পরিচিত মহান ব্যক্তি হলেন হজরত ইব্রাহিম (আঃ)। তিনি আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত একজন শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল, যিনি মানবজাতিকে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও মূর্তিপূজা থেকে বিরত থাকার শিক্ষা দিয়েছিলেন। ইসলামে তাঁকে বলা হয় “আবুল আম্বিয়া”, অর্থাৎ নবীদের পিতা, কারণ তাঁর বংশধরদের মধ্য থেকেই বহু নবী ও রাসুল পৃথিবীতে আগমন করেছেন।

  • জীবন ও জন্মস্থান:
    হজরত ইব্রাহিম (আঃ) জন্মগ্রহণ করেন প্রাচীন উর শহরে, যা বর্তমানে ইরাকের অংশ। তাঁর পিতা আজার ছিলেন মূর্তি নির্মাতা। ছোটবেলা থেকেই ইব্রাহিম (আঃ) বুঝতে পারেন যে মূর্তি মানুষকে সাহায্য করতে পারে না, তাই তিনি একমাত্র আল্লাহর উপাসনা শুরু করেন।

  • তাওহিদের প্রচার:
    তিনি মানুষের মাঝে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের বার্তা প্রচার করেন এবং মূর্তিপূজার বিরোধিতা করেন। ফলে তাঁকে সমাজের বিরোধিতা ও রাজা নমরূদের অত্যাচারের মুখোমুখি হতে হয়। আল্লাহ তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করার আদেশ দেন, কিন্তু আল্লাহর হুকুমে সেই আগুন তাঁর জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যায়।

  • কাবা নির্মাণ ও কুরবানি:
    আল্লাহর নির্দেশে তিনি তাঁর স্ত্রী হাজেরা (আঃ) ও সন্তান ইসমাইল (আঃ)-কে মরুপ্রান্তে রেখে যান, যেখানে পরবর্তীতে কাবা শরিফ নির্মিত হয়। পরে তিনি ও ইসমাইল (আঃ) একত্রে কাবা ঘর নির্মাণ করেন। এছাড়া ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর পুত্রকে কুরবানি দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি অসীম আনুগত্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, যার স্মৃতিতেই আজ ঈদুল আজহা পালন করা হয়।

  • ইসলামী ইতিহাসে গুরুত্ব:
    কুরআনে তাঁকে “খলিলুল্লাহ” বা “আল্লাহর বন্ধু” বলা হয়েছে। তাঁর বংশধরদের মধ্যেই জন্মগ্রহণ করেছেন হজরত মূসা (আঃ), ঈসা (আঃ) এবং সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তাই তাঁকেই মুসলিম উম্মাহর জাতির পিতা বলা হয়।

  • প্রভাব ও শিক্ষা:
    তাঁর জীবনের মূল বার্তা হলো — আল্লাহর আদেশের প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ, ধৈর্য ও ত্যাগ। তিনি একেশ্বরবাদী ধর্মগুলোর ভিত্তি স্থাপন করেন, যা ইসলাম, ইহুদিবাদ ও খ্রিষ্টধর্ম—এই তিন ধর্মেই প্রতিফলিত।

সবশেষে বলা যায়, হজরত ইব্রাহিম (আঃ) কেবল মুসলমানদের জাতির পিতা নন, বরং তিনি সমগ্র মানবজাতির জন্য এক অনন্য তাওহিদের দৃষ্টান্ত। তাঁর জীবন আমাদের শেখায় — আল্লাহর আদেশ মানাই প্রকৃত ঈমানের পরিচয়।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD