শাস্তি ও দৃষ্টিবাদ কি

শাস্তি ও দৃষ্টিবাদ কি

ভূমিকা: শাস্তি ও দৃষ্টবাদ দুটি ভিন্নধর্মী ধারণা হলেও উভয়েরই মানবসমাজে গুরুত্ব অপরিসীম। শাস্তি হলো অপরাধমূলক কাজের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া, যা আইন বা বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া। অন্যদিকে, দৃষ্টবাদ (Positivism) হলো August Comte এর প্রদত্ত একটি সমাজতাত্ত্বিক ধারণা, যা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সমাজ ও তার গঠনব্যবস্থার বিশ্লেষণ করে।

শাস্তির সংজ্ঞা:

শাস্তি বলতে এমন এক প্রক্রিয়া বোঝায়, যার মাধ্যমে অপরাধীর বিরুদ্ধে শারীরিক, মানসিক বা আর্থিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়। সাধারণত আইন ও বিচারব্যবস্থা অনুযায়ী অপরাধীকে এই শাস্তি প্রদান করা হয়। শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে সমাজে শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং অপরাধীর শোধন করা হয়।

শাস্তির প্রামাণ্য সংজ্ঞা: 

১. ওয়াল্টার সি. রেকলেস:
তিনি বলেন, “শাস্তি বলতে শুধু রাষ্ট্র বা বিচারালয় কর্তৃক প্রদত্ত দণ্ড নয়, বরং সুসংগঠিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঘোষিত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাও শাস্তির অন্তর্ভুক্ত।”

২. কোহেন: তিনি বলেন, “শাস্তির মাধ্যমে মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রিত হয় এবং এর মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় থাকে।”

আরো পড়ুনঃ সমাজ সংস্কার কাকে বলে?

৩. David Garland: তিনি শাস্তিকে “আইনি প্রক্রিয়া” হিসেবে অভিহিত করেছেন, যার মাধ্যমে ফৌজদারি আইনের লঙ্ঘনকারীদের শাস্তি দেওয়া হয়।

শাস্তির ধরণ: বাংলাদেশে দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তির ধরণগুলো নিম্নরূপ: ১. মৃত্যুদণ্ড
২. যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
৩. সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড
৪. সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত
৫. জরিমানা

শাস্তির উদ্দেশ্য: শাস্তির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে: 

১. প্রতিশোধ: অপরাধীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণ। 

২. নিবারণ: অপরাধ প্রতিরোধের মাধ্যমে সমাজে শৃঙ্খলা রক্ষা। 

৩. প্রতিরোধ: অপরাধীকে ভবিষ্যতে অপরাধ করতে নিরুৎসাহিত করা। 

৪. সংশোধন: অপরাধীকে সংশোধন করে সমাজে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা।

দৃষ্টবাদ (Positivism):

দৃষ্টবাদ শব্দটি August Comte কর্তৃক প্রবর্তিত একটি সমাজতাত্ত্বিক ধারণা। এটি হলো বাস্তব জ্ঞান বা অভিজ্ঞতালব্ধ তথ্যের উপর ভিত্তি করে সমাজের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ। Comte বিশ্বাস করতেন যে, সমাজে প্রতিটি প্রপঞ্চ একটি বিশেষ নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ এবং এ নিয়মগুলোকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করা সম্ভব।

দৃষ্টবাদের মূল কথা: Comte এর মতে, সমাজের সবকিছুই বাস্তব এবং তা বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে বিচার-বিশ্লেষণ করা উচিত। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, অলৌকিক ব্যাখ্যা বা কল্পনা নয়, বরং বিজ্ঞান এবং অভিজ্ঞতালব্ধ তথ্যের মাধ্যমে সমাজের বাস্তবতাকে বিচার করতে হবে। এভাবেই সমাজের উন্নতি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়।

আরো পড়ুনঃ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস  বিফ সাজেশন

দৃষ্টবাদের গুরুত্ব: 

১. বাস্তবতার উপর ভিত্তি: দৃষ্টবাদ অভিজ্ঞতালব্ধ তথ্যের উপর নির্ভর করে, যা সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। 

২. বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি: দৃষ্টবাদে সমাজকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। 

৩. শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা: এই তত্ত্বের মাধ্যমে সমাজের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়।

উপসংহার: শাস্তি ও দৃষ্টবাদ উভয়ই সমাজে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শাস্তির মাধ্যমে অপরাধীদের সংশোধন ও প্রতিরোধ করা হয়, আর দৃষ্টবাদ সমাজকে বাস্তব প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করে সমাজের অগ্রগতি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করে। সুতরাং, উভয় ধারণাই সামাজিক প্রগতির ক্ষেত্রে অপরিহার্য।

Shihabur Rahaman
Shihabur Rahaman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 252