ডুরখেইমের যান্ত্রিক সংহতি ও জৈবিক সংহতির পার্থক্য আলোচনা করো।
ভূমিকা: ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুরখেইম (1858-1917) সামাজিক সংহতির দুটি আলাদা ধারা নিয়ে কাজ করেছেন, যেগুলো হলো যান্ত্রিক সংহতি এবং জৈবিক সংহতি। সমাজের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কাজের ধরন এবং সামাজিক সম্পর্কও পরিবর্তিত হয়। ডুরখেইমের মতে, প্রাক-শিল্পায়িত সমাজগুলোতে যান্ত্রিক সংহতি বিদ্যমান ছিল, যেখানে মানুষ প্রায় একই ধরনের কাজ করত এবং একই ধরনের সংস্কৃতি, বিশ্বাস ও আচরণ অনুসরণ করত।
অন্যদিকে, শিল্পায়িত সমাজে জৈবিক সংহতি দেখা যায়, যেখানে মানুষের কাজ, জীবনধারা ও চিন্তাধারায় বৈচিত্র্য থাকে এবং সমাজের সদস্যরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।
আরো পড়ুনঃ মানব ইতিহাসে শিল্প বিপ্লবের প্রভাব
পার্থক্যসূচক সারণি:
যান্ত্রিক সংহতি | জৈবিক সংহতি |
সমাজের ধরন: প্রাক-শিল্পায়িত ও স্বাভাবিক সমাজ। | সমাজের ধরন: শিল্পায়িত ও আধুনিক সমাজ। |
শ্রমবিভাজন: শ্রমবিভাজন কম থাকে, মানুষ একই ধরনের কাজ করে। | শ্রমবিভাজন: শ্রমবিভাজন বেশি থাকে, মানুষ ভিন্ন ভিন্ন কাজ করে। |
সামাজিক বন্ধনের ভিত্তি: সাদৃশ্য ও অভিন্ন বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে। | সামাজিক বন্ধনের ভিত্তি: পারস্পরিক নির্ভরতার উপর ভিত্তি করে। |
সামাজিক নিয়ন্ত্রণ: বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ, যেমন প্রথা ও আইনের মাধ্যমে। | সামাজিক নিয়ন্ত্রণ: অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ, যেমন মূল্যবোধ ও নৈতিকতার মাধ্যমে। |
সামাজিক বিরোধ: শারীরিক সংঘর্ষ ও বাহ্যিক বিরোধ দেখা যায়। | সামাজিক বিরোধ: রাজনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ বিরোধ দেখা যায়। |
সামাজিক পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া: সামাজিক পরিবর্তনের প্রতি প্রতিরোধমূলক মনোভাব। | সামাজিক পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া: সামাজিক পরিবর্তনকে সহজে গ্রহণ করা। |
সামাজিক ঐক্য: এককতা ও সাদৃশ্যের উপর ভিত্তি করে। | সামাজিক ঐক্য: বৈচিত্র্য ও পারস্পরিক নির্ভরতার উপর ভিত্তি করে। |
সংহতির ধরন: স্বাভাবিক ও ঐতিহ্যবাহী। | সংহতির ধরন: জটিল ও আধুনিক। |
আরো পড়ুনঃ নারী কল্যাণ ও সংস্কারক হিসেবে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা
উপসংহার: ডুরখেইমের যান্ত্রিক সংহতি এবং জৈবিক সংহতি সমাজের উন্নয়ন ও পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত দুটি ভিন্ন সংহতি। যান্ত্রিক সংহতি মূলত প্রাক-শিল্পায়িত সমাজে দেখা যায়, যেখানে সাদৃশ্য বেশি এবং শ্রমবিভাজন কম। অন্যদিকে, জৈবিক সংহতি আধুনিক শিল্পায়িত সমাজে দেখা যায়, যেখানে বৈচিত্র্য বেশি এবং পারস্পরিক নির্ভরতা সমাজের প্রধান ভিত্তি। এই দুটি সংহতি সমাজের বিবর্তনের ধারায় পরিবর্তিত হয় এবং সমাজের গঠন ও কার্যপ্রণালীকে প্রভাবিত করে।