জোনে ডাটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিভাবে করা যায়

জোনে ডাটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিভাবে করা যায়

ডেটা নিরাপত্তা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ডেটাকে অবাঞ্ছিত অ্যাক্সেস, ক্ষতি, পরিবর্তন বা চুরির হাত থেকে রক্ষা করা হয়। ডেটা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন স্তরের সুরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়, যাকে জোন-ভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলা হয়। এই জোন-ভিত্তিক ব্যবস্থা ডেটাকে বিভিন্ন সুরক্ষার স্তরে বিভক্ত করে এবং প্রতিটি স্তরের জন্য নির্দিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

জোন ভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

জোন ভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নেটওয়ার্ক এবং ডেটা নিরাপত্তাকে বিভিন্ন জোনে ভাগ করা হয়, যেখানে প্রতিটি জোনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এটি সাধারণত তিনটি প্রধান জোনে বিভক্ত করা যেতে পারে:

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশে পল্লী উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতাসমূহ

  1. প্রধান জোন (Core Zone):
    • এই জোনে ডেটার সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশগুলি রাখা হয়।
    • মূলত গুরুত্বপূর্ণ সার্ভার, ডেটাবেস এবং মূল তথ্য সংরক্ষণ করা হয়।
    • এই জোনে সুরক্ষা খুব শক্তিশালী এবং সীমিত অ্যাক্সেসের অনুমতি দেওয়া হয়।
  2. ডিএমজেড (Demilitarized Zone – DMZ):
    • ডিএমজেড হলো এমন একটি জোন যেখানে বহিরাগত ব্যবহারকারীরা কিছু নির্দিষ্ট সেবা যেমন ওয়েব সার্ভার, ইমেইল সার্ভার ইত্যাদি অ্যাক্সেস করতে পারে।
    • এটি মূল নেটওয়ার্কের বাইরে রাখা হয় এবং সীমিত এবং সুনির্দিষ্ট সুরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
  3. পেরিমিটার জোন (Perimeter Zone):
    • এটি নেটওয়ার্কের বাইরের অংশ, যেখানে ইন্টারনেটের সাথে সংযোগ স্থাপন করা হয়।
    • এই জোনে ফায়ারওয়াল, ইনট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম (IDS), এবং ইনট্রুশন প্রিভেনশন সিস্টেম (IPS) ব্যবহার করা হয়।

জোনে ডেটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:

১. ফায়ারওয়াল স্থাপন: ফায়ারওয়াল হলো নেটওয়ার্ক এবং ডেটার প্রথম স্তরের সুরক্ষা ব্যবস্থা। এটি বহিরাগত নেটওয়ার্ক থেকে আসা অবাঞ্ছিত ট্রাফিককে ব্লক করে এবং নেটওয়ার্কের ভেতরের তথ্যকে সুরক্ষিত রাখে। প্রতিটি জোনের মধ্যে ফায়ারওয়াল স্থাপন করা যেতে পারে, যাতে জোনগুলোর মধ্যে তথ্য বিনিময় নিয়ন্ত্রিত হয়।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়নে স্থানীয় সরকারের  ভূমিকা

২. অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা: প্রতিটি জোনের অ্যাক্সেসের জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম এবং সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তিরা বা সিস্টেম অ্যাক্সেস করতে পারবে তা নিশ্চিত করতে মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (MFA) এবং পাসওয়ার্ড নীতি ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩. এনক্রিপশন: ডেটাকে সুরক্ষিত রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো এনক্রিপশন। প্রতিটি জোনে থাকা ডেটা এনক্রিপ্ট করা উচিত, যাতে অবাঞ্ছিত অ্যাক্সেসের ক্ষেত্রে ডেটা ব্যবহার করা সম্ভব না হয়। এনক্রিপশন ডেটাকে এমন ফর্ম্যাটে রূপান্তরিত করে, যা শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যবহারকারীই ডিক্রিপ্ট করতে পারে।

৪. ইনট্রুশন ডিটেকশন এবং প্রিভেনশন সিস্টেম (IDS/IPS): পেরিমিটার এবং ডিএমজেড জোনে ইনট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম (IDS) এবং ইনট্রুশন প্রিভেনশন সিস্টেম (IPS) ব্যবহার করা যেতে পারে। IDS অননুমোদিত প্রবেশ শনাক্ত করে, আর IPS অননুমোদিত প্রবেশ ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

৫. রিস্ক এনালাইসিস এবং মনিটরিং: প্রতিটি জোনের জন্য নিয়মিত রিস্ক এনালাইসিস করা উচিত এবং কোথায় কোথায় নিরাপত্তার ফাঁকফোকর থাকতে পারে তা খুঁজে বের করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা দরকার, যাতে সন্দেহজনক কার্যকলাপ শনাক্ত করা যায়।

৬. বিভিন্ন ডেটা লেভেলের জন্য আলাদা সুরক্ষা: ডেটাকে বিভিন্ন লেভেলে ভাগ করে প্রত্যেক স্তরের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা দরকার। উদাহরণস্বরূপ, সংবেদনশীল ডেটা (যেমন পাসওয়ার্ড বা ব্যক্তিগত তথ্য) এবং সাধারণ ডেটার (যেমন পাবলিক ডেটা) জন্য ভিন্ন ভিন্ন এনক্রিপশন পদ্ধতি এবং অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রয়োগ করা যেতে পারে।

৭. ব্যাকআপ এবং রিকভারি সিস্টেম: ডেটা নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো নিয়মিত ব্যাকআপ সিস্টেম চালু রাখা। জোন ভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রতিটি জোনের গুরুত্বপূর্ণ ডেটার ব্যাকআপ নেওয়া উচিত। ব্যাকআপ ডেটা অন্য জোন বা অফসাইটে সংরক্ষণ করা যেতে পারে, যাতে কোনো আপদকালীন পরিস্থিতিতে দ্রুত পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়।

আরো পড়ুনঃ বায়োইনফরমেটিক্স কি?

উপসংহার: জোন ভিত্তিক ডেটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ডেটাকে বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত করে প্রতিটি স্তরের জন্য আলাদা সুরক্ষা প্রদান করে। এর মাধ্যমে একাধিক স্তরের সুরক্ষা তৈরি করা হয়, যা বহিরাগত আক্রমণ, অবাঞ্ছিত অ্যাক্সেস, এবং ডেটা চুরির হাত থেকে তথ্যকে সুরক্ষিত রাখে। ফায়ারওয়াল, এনক্রিপশন, অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ, IDS/IPS এবং নিয়মিত রিস্ক এনালাইসিসের মাধ্যমে প্রতিটি জোনকে নিরাপত্তার আওতায় রাখা সম্ভব।

Riya Akter
Riya Akter
Articles: 59