ব্যান্ডউইথ কী?

ব্যান্ডউইথ কী?

ব্যান্ডউইথ বলতে সাধারণত একটি নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে প্রেরিত বা গ্রহণযোগ্য ডেটার পরিমাণকে বোঝায়। এটি সাধারণত “বিট প্রতি সেকেন্ড” (bps) দ্বারা মাপা হয়। ব্যান্ডউইথের মান যত বেশি হয়, তত বেশি ডেটা অল্প সময়ে পাঠানো বা গ্রহণ করা যায়। সহজ ভাষায়, ব্যান্ডউইথ হলো একটি সড়কের মতো যেখানে গাড়ি চলাচল করে। সড়কটি যত প্রশস্ত হবে, তত বেশি গাড়ি একসাথে চলতে পারবে। তেমনই ব্যান্ডউইথের পরিমাণ বেশি হলে ডেটা ট্রান্সফার দ্রুত হয়।

ব্যান্ডউইথ প্রধানত দুটি ধরনের হতে পারে: ডাউনলোড ব্যান্ডউইথ এবং আপলোড ব্যান্ডউইথ। ডাউনলোড ব্যান্ডউইথ ইন্টারনেট থেকে আপনার ডিভাইসে ডেটা গ্রহণের ক্ষমতা, আর আপলোড ব্যান্ডউইথ আপনার ডিভাইস থেকে ইন্টারনেটের দিকে ডেটা পাঠানোর ক্ষমতা বোঝায়।

আরো পড়ুনঃ বাঙালি জাতির জনগোষ্ঠীর নৃগোষ্ঠীগত পরিচয়

ভয়েজ ব্যান্ড (Voice Band)

ভয়েজ ব্যান্ড হলো এমন একটি ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড, যা মূলত টেলিফোন সিস্টেমে মানুষের কণ্ঠস্বর প্রেরণ ও গ্রহণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ব্যান্ডে ফ্রিকোয়েন্সি পরিসর সাধারণত ৩০০ হার্জ থেকে ৩৪০০ হার্জের মধ্যে থাকে। টেলিফোনের মাধ্যমে কণ্ঠস্বর পৌঁছানোর জন্য এই ব্যান্ডটি যথেষ্ট কার্যকরী। তবে এটি সীমিত ব্যান্ডউইথের কারণে উচ্চ গুণমানের ডেটা বা ভিডিও ট্রান্সফারের জন্য উপযুক্ত নয়।

ভয়েজ ব্যান্ডের ব্যবহার

১. টেলিফোন সংযোগ: ভয়েজ ব্যান্ড মূলত টেলিফোন সংযোগে ব্যবহৃত হয়। সাধারণ ফোনে আমরা যে কথোপকথন করি, তা এই ব্যান্ডের মধ্যেই ঘটে। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে মানুষের কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক এবং স্পষ্ট শোনানো যায়।

২. ডায়াল-আপ ইন্টারনেট: ভয়েজ ব্যান্ডে এক সময় ডায়াল-আপ ইন্টারনেট ব্যবহৃত হতো। ডায়াল-আপ সংযোগের মাধ্যমে ইন্টারনেটের গতি অনেক ধীর ছিল, কারণ এই সংযোগে ব্যান্ডউইথ খুব কম। বর্তমানে এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপ্রচলিত।

৩. রেডিও যোগাযোগ: ভয়েজ ব্যান্ড কিছু রেডিও যোগাযোগে ব্যবহৃত হয়, যেমন AM রেডিও এবং অন্যান্য কিছু যোগাযোগ মাধ্যম যেখানে সাধারণ কথোপকথন ট্রান্সমিট করা হয়।

ভয়েজ ব্যান্ডের সুবিধা

  • স্বল্প ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন: ভয়েজ ব্যান্ডে কথোপকথন বা কণ্ঠস্বর প্রেরণ করতে খুব বেশি ব্যান্ডউইথের প্রয়োজন হয় না, যা এটি সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য করে তুলেছে।
  • টেলিফোনের জন্য যথেষ্ট: মানব কণ্ঠের ফ্রিকোয়েন্সি পরিসর ভয়েজ ব্যান্ডের মধ্যে পড়ে, ফলে এটি টেলিফোন কথোপকথনের জন্য আদর্শ।

ভয়েজ ব্যান্ডের অসুবিধা

  • সীমিত ডেটা প্রেরণ ক্ষমতা: ভয়েজ ব্যান্ডের সীমিত ব্যান্ডউইথের কারণে, এটি উচ্চ মানের অডিও, ভিডিও, বা বড় ডেটা ফাইল ট্রান্সফারের জন্য উপযুক্ত নয়।
  • পুরোনো প্রযুক্তি: বর্তমানে ভয়েজ ব্যান্ড খুব একটা ব্যবহৃত হয় না, কারণ আধুনিক যোগাযোগের জন্য ব্রডব্যান্ডের মতো উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে।

ব্রডব্যান্ড

ব্রডব্যান্ড হলো এমন একটি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি, যা উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহ করে। ব্রডব্যান্ডে একটি বড় ব্যান্ডউইথ পাওয়া যায়, যার ফলে অল্প সময়ে বেশি ডেটা ট্রান্সফার করা সম্ভব হয়। সাধারণত ব্রডব্যান্ড সংযোগ ডাউনলোড এবং আপলোড উভয় দিকেই উচ্চ গতির হয়। এটি ওয়াই-ফাই, অপটিক্যাল ফাইবার, এবং মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।

আরো পড়ুনঃ বাস টপোলজি কি?

ব্রডব্যান্ডের প্রকারভেদ

১. DSL (Digital Subscriber Line): এটি টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করে। যদিও টেলিফোন সংযোগের মাধ্যমেই এটি কাজ করে, তবুও ডায়াল-আপ সংযোগের তুলনায় এর গতি অনেক বেশি।

২. কেবল ব্রডব্যান্ড: কেবল টিভি লাইনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে। এটি উচ্চ গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করে এবং সাধারণত বেশিরভাগ ঘরোয়া এবং ব্যবসায়িক ইন্টারনেট সংযোগে ব্যবহৃত হয়।

৩. ফাইবার অপটিক ব্রডব্যান্ড: ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহ করা হয়। এটি ব্রডব্যান্ড সংযোগের সবচেয়ে দ্রুত মাধ্যম এবং উচ্চ ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করে, যা বড় আকারের ডেটা ট্রান্সফার, স্ট্রিমিং, এবং অনলাইন গেমিং-এর জন্য আদর্শ।

৪. মোবাইল ব্রডব্যান্ড: মোবাইল নেটওয়ার্ক যেমন ৪জি এবং ৫জি-এর মাধ্যমে উচ্চ গতির ইন্টারনেট প্রদান করা হয়। মোবাইল ব্রডব্যান্ড পোর্টেবল এবং মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে সহজে ব্যবহারযোগ্য।

ব্রডব্যান্ডের ব্যবহার

১. ইন্টারনেট ব্রাউজিং: ব্রডব্যান্ড উচ্চ গতির ইন্টারনেট প্রদান করে, যা ওয়েবসাইট ব্রাউজিং, ইমেইল পাঠানো, এবং বিভিন্ন অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারে কার্যকর।

২. ভিডিও স্ট্রিমিং: ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, এবং অন্যান্য ভিডিও স্ট্রিমিং সাইটে উচ্চ মানের ভিডিও দেখা যায়। এর মাধ্যমে HD বা ৪কে ভিডিও স্ট্রিমিং সহজে সম্ভব।

৩. অনলাইন গেমিং: উচ্চ গতির ব্রডব্যান্ড সংযোগ অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার গেমিংয়ের জন্য অপরিহার্য। এটি লো লেটেন্সি (Latency) প্রদান করে, যা গেম খেলার সময় ত্রুটিহীন এবং দ্রুত সংযোগ নিশ্চিত করে।

৪. ভিডিও কল এবং কনফারেন্স: ব্রডব্যান্ড সংযোগ ব্যবহার করে স্কাইপ, জুম, এবং গুগল মিটের মতো অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মাধ্যমে ভিডিও কল এবং ভিডিও কনফারেন্সিং করা যায়। এটি বিশেষ করে অফিসের মিটিং এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয়।

ব্রডব্যান্ডের সুবিধা

  • উচ্চ গতি: ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মাধ্যমে উচ্চ গতি পাওয়া যায়, যা ডেটা ট্রান্সফার, ভিডিও স্ট্রিমিং, এবং বড় ফাইল ডাউনলোডের জন্য আদর্শ।
  • নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ: ব্রডব্যান্ড সংযোগ সাধারণত ২৪/৭ উপলব্ধ থাকে, যা নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দেয়।
  • বিভিন্ন ডিভাইসে সংযোগ: ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করে একসাথে অনেক ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা যায়, যা বাড়িতে বা অফিসে নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুবিধা দেয়।

ব্রডব্যান্ডের অসুবিধা

  • খরচ: ব্রডব্যান্ড সংযোগের খরচ অনেক বেশি হতে পারে, বিশেষ করে ফাইবার অপটিক বা উচ্চ গতির মোবাইল ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে।
  • কভারেজ: কিছু এলাকায় ব্রডব্যান্ড সংযোগ ভালোভাবে পাওয়া যায় না, বিশেষ করে গ্রামীণ বা দূরবর্তী অঞ্চলে।
  • বাধ্যতামূলক হার্ডওয়্যার: ব্রডব্যান্ড ব্যবহারের জন্য রাউটার, মডেম, এবং অন্যান্য বিশেষ হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন হতে পারে, যা অতিরিক্ত খরচের কারণ হয়।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের জনসংখ্যা কাঠামোর বৈশিষ্ট্য

উপসংহার: ব্যান্ডউইথ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সংযোগের গতি এবং কার্যকারিতা নির্ধারণ করে। ভয়েজ ব্যান্ড প্রাথমিকভাবে টেলিফোন যোগাযোগে ব্যবহৃত হয়, যেখানে ব্রডব্যান্ড উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহ করে। আধুনিক যুগে ইন্টারনেট সংযোগ এবং বিভিন্ন অনলাইন কার্যক্রমে ব্রডব্যান্ড অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

Riya Akter
Riya Akter
Articles: 59