সুশাসন কি?
সুশাসন (Good Governance) হলো এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা যেখানে শাসন প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, এবং জনগণের অধিকার ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। এটি একটি আদর্শ শাসন পদ্ধতি যেখানে শাসক ও শাসিতের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকে, গণতন্ত্রের চর্চা হয়, এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত থাকে। সুশাসনকে সাধারণভাবে উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কারণ এটি সমাজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সম্পদের কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে।
সুশাসনের বৈশিষ্ট্য:
১. আইনের শাসন (Rule of Law): সুশাসনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। এতে সকল নাগরিকের সমান অধিকার ও দায়িত্ব রয়েছে এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
আরো পড়ুনঃ কুমিল্লা মডেল কি?
২. স্বচ্ছতা (Transparency): সুশাসনের ক্ষেত্রে সকল শাসন কার্যক্রম স্বচ্ছ হতে হবে। জনগণ যেন সরকারের কাজের তথ্য সহজেই পেতে পারে, এটি নিশ্চিত করা হয়।
৩. জবাবদিহিতা (Accountability): শাসকগোষ্ঠীকে তাদের কর্মের জন্য জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য একটি কার্যকর বিচার ব্যবস্থা এবং স্বাধীন মিডিয়ার প্রয়োজন।
৪. জনগণের অংশগ্রহণ (Participation): সুশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। সমাজের প্রত্যেক সদস্য, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
৫. দুর্নীতির প্রতিরোধ (Anti-Corruption): সুশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো দুর্নীতির প্রতিরোধ এবং সুশাসনের প্রতিটি স্তরে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সুশাসনের প্রামাণ্য সংজ্ঞা:
বিশ্বব্যাংক সুশাসনকে বর্ণনা করেছে এমন একটি প্রক্রিয়া হিসেবে, যার মাধ্যমে একটি দেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সম্পদের কার্যকর ও সুষম ব্যবস্থাপনা করা হয়। এটি এমন একটি ব্যবস্থার প্রতিফলন, যেখানে শাসকেরা তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে উন্নয়নের জন্য একটি সুষম ও কার্যকর পরিবেশ তৈরি করেন।
UNDP এর মতে, “শাসন হলো অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কর্তৃত্বের চর্চা যার মাধ্যমে একটি দেশের সকল স্তরের কার্যাবলী পরিচালনা করা যায়।”
আরো পড়ুনঃ সমাজ বিজ্ঞান পরিচিতি বিগত সালের প্রশ্ন
ম্যাককরনী বলেছেন, “সুশাসন বলতে বোঝায় রাষ্ট্রের সঙ্গে সুশীল সমাজের, সরকারের সঙ্গে শাসিত জনগণের, শাসকের সঙ্গে শাসিতের সম্পর্ক।” অর্থাৎ সুশাসন শুধু শাসকের দায়িত্ব নয়, শাসিতের অধিকারও এর অন্তর্ভুক্ত।
সুশাসনের প্রধান লক্ষ্য:
১. দুর্নীতি হ্রাস করা: দুর্নীতির অবসান সুশাসনের প্রধান লক্ষ্য। সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দুর্নীতি কমিয়ে প্রশাসনকে স্বচ্ছ এবং দক্ষ করা সম্ভব হয়।
২. সংখ্যালঘুদের মতামতকে বিবেচনা করা: সমাজের নিপীড়িত, সংখ্যালঘু এবং উপেক্ষিত মানুষের কণ্ঠস্বর সুশাসনে গুরুত্ব পায়।
৩. গণতন্ত্রের সুরক্ষা: সুশাসনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক কাঠামো মজবুত হয়। জনগণের মতামত ও চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করা হয়।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থার উপর ইসলাম ধর্মের প্রভাব
উপসংহার: সুশাসন একটি সমাজের সার্বিক উন্নয়নের প্রধান চালিকা শক্তি। এটি কেবলমাত্র রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে ন্যায়বিচার, সমতা, এবং শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।