দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা হলো একটি পরিকল্পিত ও সমন্বিত প্রক্রিয়া যা প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য গৃহীত কার্যক্রমের একটি ধারা। এটি একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনার চক্র যার মাধ্যমে দুর্যোগের আগাম প্রস্তুতি থেকে শুরু করে, দুর্যোগের সময় সাড়া প্রদান এবং পরবর্তী পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, ভূমিকম্প, সাইক্লোন ইত্যাদির পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ যেমন রাসায়নিক বিপর্যয়, যুদ্ধ ও দাঙ্গা সম্পর্কিত পরিস্থিতিগুলোতেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রয়োগ করা হয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য:

১. ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করা:
দুর্যোগের সময় জীবন, সম্পদ এবং পরিবেশের যে ক্ষতি হয়ে থাকে, তা কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা করা হয়।

  1. দ্রুত ত্রাণ ও পুনর্বাসন:
    দুর্যোগের পর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে দ্রুত ত্রাণ পৌঁছানো ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হয়।
  2. পুনরুদ্ধার ও পুনর্নির্মাণ কার্যক্রম:
    দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত অঞ্চল পুনরুদ্ধার ও পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়।

আরো পড়ুনঃ সমাজ সংস্কার কাকে বলে?

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা চক্রঃ

দুর্যোগ প্রতিরোধ, দুর্যোগ প্রশমন এবং দুর্যোগের পূর্বপ্রস্তুতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মুখ্য উপাদান। সুতরাং দুর্যোগকে কার্যকরভাবে মোকাবিলার লক্ষ্যে দুর্যোগপূর্ব সময়েই ব্যবস্থাপনার বেশি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। দুর্যোগ সংঘটনের পরপরই এর ব্যবস্থাপনার অন্যান্য উপাদানের মধ্যে রয়েছে সাড়াদান, পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন।

অতীতে দুর্যোগে সাড়াদানকেই সম্পূর্ণ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলে ধরে নেয়া হতো। সব মিলিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা চক্রের উপাদান ৬টি।

durjok bebostapona kake bole

প্রতিরোধঃ দুর্যোগকে সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকর ভূমিকা রাখে। কাঠামো ও অকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যেমনঃ বেড়িবাঁধ তৈরি, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, পাকা ও মজবুত ঘরবাড়ি তৈরি, নদী খনন ইত্যাদি। প্রশিক্ষণ, গণসচেতনতা ইত্যাদি অকাঠামোগত প্রতিরোধ।

প্রশমনঃ দুর্যোগর ক্ষয়ক্ষতি যথাসম্ভব কমিয়ে আনার প্রচেষ্টাই হচ্ছে দুর্যোগ প্রশমন। শক্ত অবকাঠামো নির্মাণ, কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় লোক স্থানান্তর, শস্য বহুমুখীকরণ ইত্যাদি প্রশমনের অন্তর্ভুক্ত।

পূর্বপ্রস্তুতিঃ দুর্যোগ পূর্বপ্রস্তুতি বলতে দুর্যোগ পূর্ব সময়ে এর ঝুঁকি কমানোর ব্যবস্থাসমূহকে বোঝায়। আগে থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ও জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিতকরণ, দুর্যোগ সংক্রান্ত পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ ড্রিল বা ভূমিকা অভিনয় এবং রাস্তাঘাট, যানবাহন, বেতার যন্ত্র ইত্যাদি দুর্যোগ পূর্বপ্রস্তুতির অন্তর্ভুক্ত।

সাড়াদানঃ দুর্যোগের পরপরই উপযুক্ত সাড়াদানের প্রয়োজন হয়। রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে দ্রুত সাড়াদান দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতিকে কমিয়ে আনে।

আরো পড়ুনঃ মানব ইতিহাসে শিল্প বিপ্লবের প্রভাব

পুনরুদ্ধারঃ পুনরুদ্ধার বলতে নিরাপদ স্থানে অপসারণ, তল্লাশি ও উদ্ধার, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন  কার্যক্রমকে বোঝায়।

উপসংহার: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া, যা মানুষকে দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করে এবং সমাজে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।

Shihabur Rahaman
Shihabur Rahaman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 252