পেশা কাকে বলে?

পেশা কাকে বলে?

ভূমিকা: পেশা হলো এমন একটি কার্যকলাপ যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি বিশেষায়িত জ্ঞান, দক্ষতা এবং নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সমাজের উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য পেশাগত দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পায়ন ও শহরায়নজনিত সমস্যাগুলোর সমাধানে এবং জীবনের বিভিন্ন দিক পরিচালনা করার জন্য পেশাভিত্তিক কার্যকলাপ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সমাজে প্রতিটি পেশার নিজস্ব মানদণ্ড ও নীতিমালা থাকে, যা পেশার শ্রেষ্ঠত্ব এবং পেশাজীবীদের নৈতিক মানদণ্ডের উপর নির্ভর করে।

পেশার অর্থ ও সংজ্ঞা:

পেশার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Profession’ ল্যাটিন শব্দ ‘Professor’ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ ‘to make a public declaration’, অর্থাৎ একটি সর্বজনীন ঘোষণা প্রদান করা। পেশা হল এমন একটি কাজ বা সেবা যা জীবিকা নির্বাহের জন্য করা হয়, এবং যার জন্য একজন ব্যক্তি বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে। পেশা সাধারণত একজন ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং দক্ষতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় এবং এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পরিচালিত হয়।

পেশার সংজ্ঞা:

Dictionary of Social Welfare এর মতে, “Profession is an occupation based upon specialized education, skills and techniques governed by general principles of action and a special code of ethics.” অর্থাৎ, পেশা হলো বিশেষায়িত শিক্ষা, দক্ষতা ও কৌশল ভিত্তিক একটি কাজ, যা সাধারণ মূলনীতি এবং বিশেষ নৈতিক মানদণ্ড দ্বারা পরিচালিত হয়।

A. E. Genn তাঁর ‘Dictionary of Management’ গ্রন্থে বলেন, “Profession is a calling in which one professes to have acquired specialized knowledge which is used either in instructing, guiding or advising others.” অর্থাৎ, পেশা হলো এমন একটি কার্যকলাপ যেখানে একজন পেশাজীবী অন্যদের শিক্ষাদান, নির্দেশনা বা পরামর্শ দেওয়ার জন্য বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জন করেন।

আরো পড়ুনঃ সমাজকর্ম গবেষণা কাকে বলে?

সামাজিক বিজ্ঞানের অভিধান-এর মতে, পেশা হলো নৈপুণ্যতা ভিত্তিক এবং বৃদ্ধিদীপ্ত কৌশল দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত বৃত্তি।

পেশার বৈশিষ্ট্য:

পেশার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা এটিকে অন্য যেকোনো কাজ বা বৃত্তির চেয়ে আলাদা করে তুলে। পেশার বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

  1. বিশেষায়িত জ্ঞান ও দক্ষতা: একজন পেশাজীবীকে তার পেশাগত কাজে দক্ষ হতে হয় এবং সেই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষ জ্ঞান ও শিক্ষা অর্জন করতে হয়। যেমন একজন চিকিৎসককে তার কাজের জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে হয়।
  2. নৈতিক মানদণ্ড: প্রতিটি পেশারই নির্দিষ্ট নৈতিক মানদণ্ড থাকে, যা পেশাজীবীদেরকে তাদের কাজের ক্ষেত্রে সঠিক পথ অনুসরণ করতে সহায়তা করে। পেশাজীবীরা এই মানদণ্ড অনুযায়ী কাজ করেন এবং তাদের কাজের মাধ্যমে সমাজে সঠিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করেন।
  3. সেবা প্রদান: পেশাজীবীদের মূল লক্ষ্য হলো সেবা প্রদান। তারা তাদের দক্ষতা ও জ্ঞানের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে এবং মানুষের জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করে। যেমন, চিকিৎসক রোগীদের সুস্থ করে তোলেন এবং আইনজীবী আইনি সমস্যার সমাধান করেন।
  4. উন্নত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: পেশাগত কাজের জন্য একজন পেশাজীবীকে উন্নত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। প্রতিটি পেশার জন্য নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা আবশ্যক। যেমন, একজন ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে প্রকৌশল বিষয়ে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়।
  5. পেশাগত মানসিকতা: পেশাজীবীদের পেশাগত দায়িত্ব এবং নৈতিক মানদণ্ড মেনে চলার মানসিকতা থাকতে হয়। একজন পেশাজীবী তার কাজের ক্ষেত্রে যত্নশীল এবং সঠিক দায়িত্ব পালন করতে সচেষ্ট থাকে।
  6. জীবিকা নির্বাহের উপায়: পেশা হলো জীবিকা নির্বাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। একজন পেশাজীবী তার পেশার মাধ্যমে আয় করে জীবন ধারণ করেন। পেশা শুধুমাত্র সেবা প্রদানের কাজ নয়, এটি আর্থিক সুরক্ষার একটি মাধ্যমও।
  7. সমাজের প্রতি দায়িত্ব: একজন পেশাজীবী শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আয় বা সাফল্যের জন্য কাজ করেন না; তিনি সমাজের উন্নয়নের জন্যও কাজ করেন। পেশাজীবীরা তাদের জ্ঞান ও দক্ষতার মাধ্যমে সমাজের কল্যাণে কাজ করে থাকেন এবং মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকেন।

পেশার গুরুত্ব:

পেশা একটি দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেশাজীবীদের সঠিক দক্ষতা ও জ্ঞানের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। একজন পেশাজীবীর কাজের মান নির্ভর করে তার দক্ষতা, নৈতিকতা এবং সমাজের প্রতি তার দায়িত্ববোধের উপর। পেশা শুধুমাত্র আয়ের উৎস নয়, এটি সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতারও একটি মাধ্যম।

আরো পড়ুনঃ সমষ্টি সংগঠন কাকে বলে? 

উপসংহার: পেশা হলো বিশেষায়িত জ্ঞান ও দক্ষতার উপর ভিত্তি করে পরিচালিত একটি কাজ বা সেবা, যা জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি সমাজের কল্যাণে অবদান রাখে। একজন পেশাজীবী তার দক্ষতা, নৈতিক মানদণ্ড এবং সেবামূলক দায়িত্ববোধের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা পালন করেন। পেশাজীবী হওয়া মানে শুধুমাত্র অর্থ উপার্জন করা নয়, বরং সমাজের উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা।

Shihabur Rahaman
Shihabur Rahaman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 252