সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ

সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ

ভূমিকা: সমাজকর্ম হল একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশাদার কার্যক্রম, যার মাধ্যমে ব্যক্তি, দল এবং সমষ্টিকে সাহায্য করে তাদের নিজস্ব সম্পদ, বুদ্ধিমত্তা ও সামর্থ্যের দ্বারা নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম করে তোলা হয়। সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য হল সমাজের প্রতিটি মানুষের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। এটি কুসংস্কার, দারিদ্র্য, অজ্ঞতা, এবং সামাজিক সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:

সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমাজের উন্নয়ন ও সমস্যার সমাধানে নিবেদিত। Skidmore and Thackary সমাজকর্ম সম্পর্কে বলেছেন, “The aim of social work is to improve and enhance social functioning.” National Association of Social Workers (NASW) সমাজকর্মের জন্য চারটি প্রধান লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সেগুলো হলো:

১. সমস্যা সমাধান, উপযোজন এবং ক্ষমতার উন্নয়ন: সমাজের মানুষদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য উপযুক্ত ক্ষমতা ও দক্ষতার বিকাশ ঘটানো সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য।

আরো পড়ুনঃ সমাজ সংস্কার কাকে বলে?

২. সম্পদ, সেবা ও সুযোগের সাথে মানুষের সংযোগ ঘটানো: মানুষকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সেবা ও সুযোগের সাথে যুক্ত করা সমাজকর্মের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।

৩. কার্যকরী ও মানবীয় সেবা ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করা: মানবীয় সেবা ও সমর্থনমূলক কার্যক্রমকে আরো দক্ষ ও কার্যকরী করার মাধ্যমে সমাজের কল্যাণ নিশ্চিত করা সমাজকর্মের অন্যতম উদ্দেশ্য।

৪. সামাজিক নীতির বিকাশ ও উন্নয়ন: সমাজের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক নীতি গঠন এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে সমাজকর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ:

১. সামাজিক কুসংস্কার দূরীকরণ: সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কার মানুষের উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে। সমাজকর্ম এই ধরনের কুসংস্কার দূর করে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজের সার্বিক উন্নয়ন সাধন করে।

২. প্রয়োজনীয় সম্পদের ব্যবস্থা: সমাজের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ সরবরাহ করা সমাজকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। সমাজের প্রতিটি স্তরে সম্পদ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে সমস্যার কার্যকরী সমাধান করা হয়।

৩. জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা: সমস্যা সমাধানের জন্য জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমাজকর্ম এই অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে, যাতে সমস্যা সমাধানে সবাই সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে।

আরো পড়ুনঃ সমাজ সংস্কার কাকে বলে?

৪. মানবসম্পদের উন্নয়ন: মানুষকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা সমাজকর্মের একটি প্রধান লক্ষ্য। মানুষের মেধা, দক্ষতা ও সামর্থ্যের উন্নয়ন ঘটিয়ে তাদের সার্বিক উন্নয়ন করা সমাজকর্মের উদ্দেশ্য।

৫. সমন্বয় সাধন করা: সরকারি ও বেসরকারি সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে সমাজের সর্বাধিক কল্যাণ নিশ্চিত করা হয়। সমন্বয়হীন প্রচেষ্টায় সুফল পাওয়া সম্ভব নয়, তাই সমন্বয় সাধন করা জরুরি।

৬. জাতীয় উন্নয়ন: সমাজের প্রতিটি স্তরের উন্নয়নের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা সমাজকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। এটি দেশের সার্বিক অগ্রগতি নিশ্চিত করে।

৭. পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন: মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়ে সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখাই সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য। এটি সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহায়ক।

৮. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান: সমাজের সমস্যার বৈজ্ঞানিক সমাধান নিশ্চিত করে সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধান করা সমাজকর্মের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। বৈজ্ঞানিক উপায়ে সমস্যার সমাধান করা হলে সমাজের স্থায়ী উন্নয়ন সম্ভব হয়।

আরো পড়ুনঃ সামাজিক গবেষণার প্রয়োজনীয়তা


উপসংহার: সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য হল সমাজের প্রতিটি মানুষের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। এটি সামাজিক সমস্যার বৈজ্ঞানিক সমাধান, মানবসম্পদের উন্নয়ন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজের উন্নয়ন সাধন করে।

Shihabur Rahaman
Shihabur Rahaman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 252