১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইনের বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব ও তাৎপর্য

১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইনের বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ভূমিকা: ইংল্যান্ডের ইতিহাসে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য প্রথম সরকারিভাবে প্রণীত আইন। এই আইনটি প্রাক-শিল্প যুগে দারিদ্র্য দূরীকরণ, ভবঘুরে প্রতিকার, এবং দুস্থ ব্যক্তিদের সাহায্যপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া প্রণয়ন করে। এর ফলে সমাজের দরিদ্র শ্রেণির মানুষদের পুনর্বাসন, সাহায্য প্রদান, এবং ভিক্ষাবৃত্তিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করা হয়।

আরো পড়ুনঃ দান সংগঠন সমিতি কি?

১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইনের বৈশিষ্ট্য

  1. সমন্বিত আইন: ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন পূর্ববর্তী ১৩৪৯ থেকে ১৫৯৭ সালের মধ্যে প্রণীত আইনের সমন্বিত রূপ। পূর্ববর্তী অসংগঠিত ও অপর্যাপ্ত আইনগুলোকে একত্রিত করে দরিদ্র আইনটি একটি সুসংহত কাঠামো তৈরি করে।
  2. শ্রমভিত্তিক পুনর্বাসন: এই আইনের অধীনে, সক্ষম দরিদ্রদের সংশোধনাগারে বা দরিদ্রাগারে কাজ করতে বাধ্য করা হতো। দরিদ্র মানুষদের অলস বা অকর্মণ্য থাকা নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। এভাবে তারা কর্মে নিয়োজিত থেকে সমাজে অবদান রাখতে সক্ষম হতো।
  3. পারিবারিক দায়িত্ব: সচ্ছল আত্মীয়-স্বজনসম্পন্ন দরিদ্রদের সাহায্যপ্রাপ্তির অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। এই আইনের মাধ্যমে সক্ষম সদস্যদের পারিবারিক দায়িত্ব পালনের জন্য বাধ্য করা হয়, যাতে তাদের নির্ভরশীল আত্মীয়রা সমাজের বোঝা হয়ে না ওঠে।
  4. অক্ষমদের জন্য স্থানীয় সহায়তা: অক্ষম বা দরিদ্র ব্যক্তিদের জন্য স্থানীয় প্যারিস বা এলাকার মানুষদের সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়। স্থানীয় পর্যায়ে সমাজের দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে দরিদ্রদের সেবা নিশ্চিত করা হয়।
  5. আবেদন প্রক্রিয়া: আইনের অধীনে সাহায্যপ্রাপ্তির জন্য দরিদ্রদের আবেদন করতে হতো। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দরিদ্রদের অবস্থান যাচাই করে তাদের জন্য সহায়তা প্রদান করা হতো।
  6. ওভারসিয়ার নিয়োগ: দরিদ্র আইন কার্যকর করার জন্য স্থানীয় বিচারক বা ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে ওভারসিয়ার নিয়োগ করা হতো, যারা দরিদ্রদের সাহায্যের বিষয়টি তত্ত্বাবধান করতেন।
  7. বাসিন্দা শর্ত: এই আইনের অধীনে, সাহায্যপ্রাপ্তির জন্য দরিদ্রদের প্যারিসের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার শর্ত ছিল। কমপক্ষে তিন বছর ধরে একই এলাকায় বসবাস করা প্রয়োজন ছিল।
  8. দরিদ্রদের শ্রেণিবিন্যাস: দরিদ্র মানুষদের তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল: সক্ষম দরিদ্র, অক্ষম দরিদ্র, এবং নির্ভরশীল বালক-বালিকা। তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হয়েছিল।
  9. করারোপ: দরিদ্রদের সাহায্য এবং পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করতে বিভিন্ন ধরনের করারোপের ব্যবস্থা ছিল। এই করের মাধ্যমে দরিদ্রদের পরিচালনার খরচ জোগাড় করা হতো।
  10. আইনভঙ্গের শাস্তি: এই আইনের অধীনে যারা আইন লঙ্ঘন করত তাদের জন্য জরিমানার ব্যবস্থা ছিল। এটি দরিদ্রদের সাহায্য দেওয়ার প্রক্রিয়াকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করত।

আরো পড়ুনঃ মানব ইতিহাসে শিল্প বিপ্লবের প্রভাব

১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

  1. সাহায্য ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা: এই আইন দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেয়। এটি ভিক্ষাবৃত্তিরোধ এবং সামাজিক সমস্যা মোকাবেলার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  2. অলস ও অকর্মণ্য শ্রেণির সংখ্যা হ্রাস: এই আইনের ফলে সমাজের অকর্মণ্য ও অলস মানুষের সংখ্যা হ্রাস পায়। সংশোধনাগারে কাজ করার মাধ্যমে কর্মক্ষম দরিদ্ররা সমাজে অংশগ্রহণ করতে পারত।
  3. স্থানীয় সেবা প্রদান: প্যারিস বা স্থানীয় এলাকার ভিত্তিতে দরিদ্রদের সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এর ফলে স্থানীয় জনগণ সরাসরি দরিদ্রদের সাহায্য করতে সক্ষম হয় এবং স্থানীয় সম্পদের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা সম্ভব হয়।
  4. সমাজকর্ম পদ্ধতির বিকাশ: ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন সমাজকর্ম পদ্ধতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাজসেবামূলক কার্যক্রমগুলিকে সরকারিভাবে পরিচালনার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হয়।
  5. দারিদ্র্য বিমোচন: এই আইনের অধীনে দরিদ্র মানুষদের জন্য পুনর্বাসন এবং ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। এর ফলে দরিদ্র মানুষরা সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে মুক্তি পায় এবং তাদের পুনর্বাসনের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
  6. সুষ্ঠু পরিচালনা: আইনটি বাস্তবায়নের জন্য ওভারসিয়ারদের মাধ্যমে দরিদ্রাগার পরিচালনা করা হতো, যা সুষ্ঠু ও সুসংগঠিত প্রশাসনিক কাঠামো প্রদান করেছিল।
  7. পূর্ণাঙ্গ দরিদ্র আইন: ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন পূর্ববর্তী ৪২টি আইনের সমন্বয়ে তৈরি একটি পূর্ণাঙ্গ আইন, যা দরিদ্রদের কল্যাণে নির্দিষ্ট কাঠামো এবং সুস্পষ্ট নিয়ম তৈরি করেছিল।
  8. সরকারের দায়িত্ব: এই আইনের মাধ্যমে দরিদ্রদের কল্যাণে সরকার সরাসরি ভূমিকা রাখতে শুরু করে। এটি সমাজে দরিদ্রদের জন্য সরকারি সহায়তার প্রথম সরকারি উদ্যোগ।
  9. সামাজিক দায়িত্ববোধ: এ আইনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে দায়িত্ববোধ সৃষ্টি হয়। সমাজের অন্য সদস্যদের প্রতি সহানুভূতি এবং দায়িত্ব পালন করতে মানুষকে অনুপ্রাণিত করা হয়।
  10. সম্পদের সদ্ব্যবহার: স্থানীয় ওভারসিয়ারদের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় সম্পদ ব্যবহার করে দরিদ্রদের জন্য অর্থনৈতিক সমাধান তৈরি করা হতো, যা দারিদ্র্য মোকাবিলায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

আরো পড়ুনঃ দারিদ্রের দুষ্টুচক্র কাকে বলে

উপসংহার: ১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন দারিদ্র্য বিমোচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ইতিহাসে স্মরণীয়। যদিও এ আইন দারিদ্র্যের মূল কারণগুলো নিরসনের জন্য স্থায়ী কর্মসূচি গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল, তবে এটি দরিদ্রদের সুরক্ষা এবং পুনর্বাসনে একটি কার্যকরী পদক্ষেপ ছিল।

Shihabur Rahaman
Shihabur Rahaman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 252