প্রেষণা কি, প্রেষণা বলতে কী বোঝ?

প্রেষণা হলো এমন এক মানসিক ও ব্যবস্থাপনাগত প্রক্রিয়া যা মানুষের ভিতরে কর্মে আগ্রহ, উদ্যম ও দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলে। এটি মূলত কোনো ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য উদ্দীপিত করে এবং তার অন্তর্নিহিত শক্তিকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।
আধুনিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় প্রেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি কর্মীদের মধ্যে কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করে, কর্মদক্ষতা বাড়ায় এবং প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
প্রেষণার সংজ্ঞা: এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যবস্থাপক বা নেতা কর্মীদেরকে নির্দিষ্ট কাজের প্রতি অনুপ্রাণিত করে। এর মাধ্যমে কর্মীর অন্তর্নিহিত ইচ্ছা জাগিয়ে তাকে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যে কাজ করতে উৎসাহিত করা হয়।
প্রেষণার মূল উদ্দেশ্য: কর্মীদের মধ্যে এমন মানসিক অবস্থা তৈরি করা যাতে তারা নিজেদের দায়িত্বকে আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করে এবং সর্বোচ্চ দক্ষতা প্রদর্শন করে। এতে কর্মীর ব্যক্তিগত লক্ষ্য ও প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য একসূত্রে মিলিত হয়।
প্রেষণার প্রয়োজনীয়তা: শুধুমাত্র কর্মদক্ষতা বা জ্ঞান থাকলেই কাজের ফলাফল ভালো হয় না; কর্মীর মনোযোগ, আগ্রহ ও উদ্যমও দরকার। প্রেষণা এই মানসিক প্রস্তুতি তৈরি করে যা কর্মক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পারফরম্যান্সে সহায়তা করে।
প্রেষণার ধরন: সাধারণভাবে দুই প্রকার প্রেষণা দেখা যায় —
অভ্যন্তরীণ প্রেষণা (Intrinsic Motivation): নিজের তৃপ্তি, আত্মসন্তোষ বা আগ্রহ থেকে কাজ করার মানসিক উদ্দীপনা।
বাহ্যিক প্রেষণা (Extrinsic Motivation): বেতন, পদোন্নতি, পুরস্কার বা স্বীকৃতির মতো বাহ্যিক উপাদান দ্বারা অনুপ্রাণিত হওয়া।-
প্রেষণার উপাদান: সফল প্রেষণার জন্য কিছু মূল উপাদান প্রয়োজন যেমন — পুরস্কার ব্যবস্থা, প্রশংসা, ইতিবাচক কর্মপরিবেশ, কর্মের স্বীকৃতি, এবং উন্নতির সুযোগ।
-
প্রেষণার প্রভাব: যথাযথ প্রেষণা কর্মীর আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, কর্মে সন্তুষ্টি আনে এবং কাজের মান উন্নত করে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানেও এক ধরনের ইতিবাচক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।
-
প্রেষণার ভূমিকা ব্যবস্থাপনায়: একজন দক্ষ ব্যবস্থাপক জানেন কীভাবে কর্মীদের মানসিক চাহিদা ও পেশাগত আকাঙ্ক্ষা বোঝা যায়। তিনি তাদের যথাযথভাবে অনুপ্রাণিত করে প্রতিষ্ঠানকে সাফল্যের পথে পরিচালিত করেন।
সবশেষে বলা যায়, প্রেষণা শুধু কর্মীদের কাজের গতি বাড়ানোর উপায় নয়, বরং এটি প্রতিষ্ঠান ও কর্মীর পারস্পরিক সম্পর্কের সেতুবন্ধন। যখন কর্মীরা প্রেষিত হয়, তখন তারা শুধু কাজই করে না—তারা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে নিজেদের অবদান রাখতে গর্ববোধ করে।
এইভাবে, প্রেষণা হলো এক অভ্যন্তরীণ শক্তি যা মানুষকে কর্মে উদ্বুদ্ধ করে এবং লক্ষ্য অর্জনের পথে অনুপ্রেরণা যোগায়।