শিক্ষাক্রম কী? শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী কী?

Avatar
calender 22-10-2025

শিক্ষাক্রম হলো একটি সংগঠিত শিক্ষাগত পরিকল্পনা, যার মাধ্যমে কোনো দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উদ্দেশ্য, বিষয়বস্তু ও শিক্ষণপদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। এটি শিক্ষার্থীদের মানসিক, সামাজিক ও নৈতিক বিকাশের পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করে।

এক কথায়, শিক্ষাক্রম শিক্ষার দিকনির্দেশনা প্রদান করে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের জন্যই একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি করে। নিচে শিক্ষাক্রম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।

  1. শিক্ষাক্রমের সংজ্ঞা: শিক্ষাক্রম হলো এমন একটি নকশা বা পরিকল্পনা, যেখানে শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্দেশ্য, বিষয়বস্তু, পাঠ্যবই, শিক্ষণ-পদ্ধতি ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নির্ধারিত থাকে। এটি স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষাদানের মূল কাঠামো হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

  2. শিক্ষাক্রমের মূল উপাদান:

    • উদ্দেশ্য: শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ নিশ্চিত করা।

    • বিষয়বস্তু: শিক্ষার মান অনুযায়ী পাঠ্যসূচি ও কার্যক্রম।

    • শিক্ষণপদ্ধতি: উপযুক্ত পদ্ধতিতে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন।

    • মূল্যায়ন: শেখার ফল যাচাই করার নির্ধারিত উপায়।

  3. শিক্ষাক্রমের গুরুত্ব:

    • এটি শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের পথ নির্দেশ করে।

    • শিক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট বিষয়ে সুশৃঙ্খলভাবে জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে।

    • শিক্ষকদের পাঠদানের ধারাকে সঠিকভাবে পরিচালিত করে।

    • জাতীয় উন্নয়ন ও মানবসম্পদ গঠনে ভূমিকা রাখে।

  4. শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য:

    • শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটানো।

    • নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম জাগানো।

    • জীবনের বাস্তব সমস্যার সমাধান করার দক্ষতা তৈরি করা।

    • সৃজনশীল চিন্তা, সহযোগিতা ও নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশ করা।

  5. শিক্ষাক্রমের উদ্দেশ্য:

    • মানবিক গুণাবলি বিকাশ: মানবতা, সহমর্মিতা ও সততা গঠন করা।

    • দক্ষ নাগরিক তৈরি: শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তোলা।

    • সামাজিক দায়িত্ববোধ সৃষ্টি: সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার অনুপ্রেরণা প্রদান।

    • সৃজনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্য: নতুন ধারণা ও উদ্ভাবনী চিন্তায় উৎসাহিত করা।

    • আজীবন শিক্ষার মানসিকতা গঠন: শিক্ষার্থীদের শেখার প্রতি আগ্রহ ধরে রাখা।

  6. শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচির পার্থক্য: শিক্ষাক্রম হলো বৃহত্তর কাঠামো, যেখানে শিক্ষা কার্যক্রমের সব দিক অন্তর্ভুক্ত থাকে। আর পাঠ্যসূচি হলো শিক্ষাক্রমের একটি অংশ, যেখানে নির্দিষ্ট বিষয়ের পাঠ্যবিষয়বস্তু উল্লেখ থাকে।

  7. জাতীয় শিক্ষাক্রমের উদাহরণ: বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও আচরণে পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে। এতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার প্রতিটি স্তরে বাস্তব জীবনভিত্তিক ও দক্ষতামুখী পাঠ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

  8. শিক্ষাক্রমের ফলাফল: একটি সুপরিকল্পিত শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র পরীক্ষার জন্য নয়, বরং বাস্তব জীবনের জন্য প্রস্তুত হয়। তারা সমাজ, দেশ ও মানবতার কল্যাণে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করে।

শিক্ষাক্রম হলো শিক্ষার নকশা, যার মাধ্যমে জাতি গঠনের ভিত্তি স্থাপন করা হয়। এর লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, নৈতিকতা ও দক্ষতার সমন্বয় ঘটিয়ে তাদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD