হিসাববিজ্ঞানের স্বর্ণসূত্র বলা হয় কাকে?
হিসাববিজ্ঞানের স্বর্ণসূত্র বলা হয় “প্রত্যেক ডেবিটের বিপরীতে একটি ক্রেডিট থাকে”—এই মৌলিক নীতিকে। অর্থাৎ, কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনে যখনই একটি হিসাবের মধ্যে অর্থ যোগ হয় (ডেবিট), তখন অন্য একটি হিসাব থেকে সমপরিমাণ অর্থ কমে যায় (ক্রেডিট)। এই দ্বৈত রেকর্ড বা Double Entry System-এর মূল ভিত্তিই হলো হিসাববিজ্ঞানের এই স্বর্ণসূত্র।
এই সূত্রের মূল উদ্দেশ্য হলো লেনদেনের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা এবং প্রতিটি আর্থিক ঘটনার দুই দিক—গ্রহণ (Debit) ও প্রদান (Credit)—একসঙ্গে রেকর্ড করা। এর মাধ্যমে ভুল বা প্রতারণার সম্ভাবনা অনেক কমে যায় এবং হিসাবের নির্ভুলতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়।
-
এই সূত্রটি প্রথম উদ্ভাবন করেন লুকা পাসিওলি (Luca Pacioli), যিনি “হিসাববিজ্ঞানের জনক” নামে পরিচিত।
-
সূত্রটি হিসাবরক্ষণের ভিত্তি হিসেবে Double Entry System-এর জন্ম দেয়।
-
এটি ব্যালেন্স বা ভারসাম্য বজায় রাখে, যাতে মোট ডেবিট সর্বদা মোট ক্রেডিটের সমান থাকে।
-
ব্যবসায়ের সম্পদ (Assets), দায় (Liabilities) ও মূলধন (Capital)-এর সমীকরণও এই সূত্রের উপর দাঁড়িয়ে আছে।
-
স্বর্ণসূত্র অনুযায়ী, “Debit the receiver, Credit the giver”, “Debit what comes in, Credit what goes out” এবং “Debit all expenses and losses, Credit all incomes and gains”—এই তিনটি উপনিয়ম অনুসরণ করা হয়।
| শ্রেণি | ডেবিটের নিয়ম | ক্রেডিটের নিয়ম | উদাহরণ |
|---|---|---|---|
| ব্যক্তিগত হিসাব (Personal Account) | যে গ্রহণ করে তাকে ডেবিট করা হয় | যে প্রদান করে তাকে ক্রেডিট করা হয় | রাহিমকে নগদ দিলে → রাহিম (Dr.), নগদ (Cr.) |
| বস্তুনিষ্ঠ হিসাব (Real Account) | যা আসে তাকে ডেবিট করা হয় | যা যায় তাকে ক্রেডিট করা হয় | ফার্নিচার কেনা হলে → ফার্নিচার (Dr.), নগদ (Cr.) |
| নামমাত্র হিসাব (Nominal Account) | ব্যয় ও ক্ষতিকে ডেবিট করা হয় | আয় ও লাভকে ক্রেডিট করা হয় | বেতন প্রদান → বেতন (Dr.), নগদ (Cr.) |
এই সূত্রের তাৎপর্য হলো—একটি লেনদেন কখনো একদিক থেকে একপাক্ষিক নয়; প্রতিটি আর্থিক কার্যক্রমের দুটি দিক রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো প্রতিষ্ঠান ১০,০০০ টাকার পণ্য বিক্রি করে, তবে তার নগদ বৃদ্ধি পায় (ডেবিট) এবং পণ্যের মজুদ হ্রাস পায় বা বিক্রয় আয়ের হিসাব বৃদ্ধি পায় (ক্রেডিট)।
হিসাববিজ্ঞানের এই স্বর্ণসূত্র ব্যবসায়ের সব ধরনের হিসাবের ভিত্তি তৈরি করে। এটি না থাকলে ব্যালেন্স শীট, আয়ের হিসাব, বা নগদ প্রবাহ বিবৃতি সঠিকভাবে তৈরি করা সম্ভব হতো না। স্বর্ণসূত্রের মাধ্যমে প্রতিটি লেনদেনের সঠিক প্রতিফলন ঘটে, যার ফলে ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়।
অতএব বলা যায়, “প্রত্যেক ডেবিটের বিপরীতে একটি ক্রেডিট থাকে”—এই নীতিই হিসাববিজ্ঞানের প্রাণ বা স্বর্ণসূত্র। এটি হিসাববিজ্ঞানের সেই মৌলিক ভিত্তি যা পুরো হিসাব পদ্ধতিকে সঠিক, নির্ভুল ও বৈজ্ঞানিক রূপ দেয়।