সতীদাহ প্রথা কখন, কে চালু করেন?
সতীদাহ প্রথা হলো এক ধরনের প্রথা যেখানে স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকে জীবিত অবস্থায় স্বামীর অগ্নিসংযোগে জ্বালিয়ে দেওয়া হতো। এটি মূলত প্রাচীন ভারতীয় সমাজের এক নিষ্ঠুর সামাজিক রীতি, যা নারীর ওপর অতিরিক্ত শোষণ ও সামাজিক নিয়মের নামে চাপ সৃষ্টি করতো। ইতিহাস অনুযায়ী সতীদাহ প্রথা শত শত বছর ধরে ভারতীয় সমাজে বিদ্যমান ছিল, বিশেষ করে রাজপরিবার ও উচ্চবর্ণের মধ্যে। তবে এটি কোনো এক ব্যক্তি বা সরকার বিশেষভাবে “চালু” করেনি, বরং সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
সতীদাহ প্রথা প্রাথমিকভাবে ধর্মীয় ও সামাজিক বিধান হিসেবে গৃহীত হয়েছিল, যেখানে শাসক ও সমাজের উচ্চবর্ণের মানুষরা স্ত্রীদের শুদ্ধতা এবং পুণ্য প্রদর্শনের অংশ হিসেবে এটি পালন করতেন। প্রাচীন কাহিনী ও ধর্মগ্রন্থে এই প্রথার উল্লেখ পাওয়া যায়, যেমন মহাভারত, পুরাণ এবং কিছু মধ্যযুগীয় রাজকাহিনী। তবে এটি সাধারণ জনগণের কাছে কোনো বাধ্যতামূলক আইন বা নিয়ম ছিল না, বরং সামাজিক রীতির অংশ হিসেবে প্রচলিত ছিল।
ব্রিটিশ শাসনের সময়, ১৮২৯ সালে বঙ্গপ্রদেশের গভর্নর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিক (Lord William Bentinck) এই প্রথা নিষিদ্ধ করেন। তিনি সামাজিক reformerদের সঙ্গে পরামর্শ করে এবং স্থানীয় আইন প্রণয়ন মাধ্যমে সতীদাহ বন্ধ করেন। এর আগে অনেক সমাজ সংস্কারক যেমন রাম মোহন রায় (Raja Ram Mohan Roy) এই প্রথার বিরুদ্ধে কাজ করেছিলেন। রাম মোহন রায় সতীদাহ প্রথার নৈতিক ও মানবিক বিপর্যয় তুলে ধরতেন এবং তাকে সমাজ থেকে বিলোপ করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন।
-
সতীদাহ প্রথা হলো স্ত্রীকে স্বামীর মৃত্যুর সময় অগ্নিসংযোগে জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রথা।
-
এটি কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি দ্বারা চালু হয়নি, বরং সামাজিক ও ধর্মীয় রীতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়।
-
প্রাথমিকভাবে রাজপরিবার ও উচ্চবর্ণের মধ্যে প্রথা প্রচলিত ছিল।
-
প্রথা বন্ধ করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন রাম মোহন রায়।
-
ব্রিটিশ শাসকের মাধ্যমে ১৮২৯ সালে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিক আইন প্রণয়ন করে সতীদাহ নিষিদ্ধ করেন।
| বিষয় | বিবরণ |
|---|---|
| প্রথার ধরন | স্ত্রীকে স্বামীর মৃত্যুতে অগ্নিসংযোগে জ্বালানো |
| শুরু ও প্রচলন | প্রাচীন ভারতীয় সমাজে, প্রধানত উচ্চবর্ণ ও রাজপরিবারে |
| সামাজিক ব্যাখ্যা | ধর্মীয় বিধান, স্ত্রীর পুণ্য ও শুদ্ধতা প্রদর্শনের অংশ হিসেবে |
| সংস্কারক ও বিরোধী | রাম মোহন রায় সমাজে প্রথার বিরুদ্ধে প্রচেষ্টা চালান |
| আইনগত বন্ধ | ১৮২৯ সালে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিক আইন প্রণয়ন করে প্রথা নিষিদ্ধ করেন |
সতীদাহ প্রথা কোনো এক ব্যক্তি চালু করেননি; এটি প্রাচীন সমাজের ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক ও ধর্মীয় রীতি ছিল। তবে সমাজ সংস্কারক ও ব্রিটিশ প্রশাসনের উদ্যোগে ১৮২৯ সালে এটি আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়, যা ভারতীয় সমাজে নারীর অধিকার এবং মানবিক নৈতিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।