‘সত্তা’, ‘সত্ত্বা’ এবং ‘স্বত্ব’- এই তিনটি বানানের মধ্যে সঠিক কোনটির কী মানে?
‘সত্ত্বা’, ‘সত্তা’ এবং ‘স্বত্ব’-এর মধ্যে সঠিক বানান হলো ‘সত্তা’, যা জীবনের মৌলিক অস্তিত্ব, প্রাণ বা মূল স্বরূপ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। বাংলায় এই শব্দটি সাহিত্যিক, দার্শনিক ও দৈনন্দিন জীবনের প্রসঙ্গে ব্যবহার করা হয়, যেখানে কোনো ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তুর ভিতরের মৌলিক বৈশিষ্ট্য বা অস্তিত্বের প্রকৃতি প্রকাশ করতে হয়। ‘সত্তা’ শব্দের মাধ্যমে বোঝানো হয় যে কোনো বস্তুর ভেতরের প্রকৃত অস্তিত্ব, যা তার অস্তিত্বকে অন্যান্য বস্তু থেকে আলাদা করে। অন্যদিকে, ‘সত্ত্বা’ ভুল বানান হিসেবে গণ্য হয় এবং প্রায়শই টাইপিং বা লেখা ভুলের কারণে ব্যবহৃত হয়। ‘স্বত্ব’ শব্দটি সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ বহন করে, যা মালিকানা, অধিকার বা বৈধ অধিকার বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং, সঠিক অর্থ প্রকাশ ও ভাষার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ‘সত্তা’ শব্দটির ব্যবহার অপরিহার্য।
-
সত্তা: জীবনের মূল স্বরূপ, অস্তিত্ব, প্রাণ বা ব্যক্তি/বস্তুর মৌলিক বৈশিষ্ট্য বোঝায়।
-
সত্ত্বা: ভুল বানান; প্রামাণ্য অভিধানে নেই।
-
স্বত্ব: মালিকানা, অধিকার বা বৈধ অধিকার বোঝায়, ‘সত্তা’-এর সঙ্গে অর্থগত মিল নেই।
| শব্দ | বানান | অর্থ | ব্যবহার ক্ষেত্র |
|---|---|---|---|
| সত্তা | সঠিক | অস্তিত্ব, প্রাণ, মূল স্বরূপ | দার্শনিক আলোচনায়, সাহিত্য, নৈতিক ও সামাজিক বৈশিষ্ট্য বোঝাতে |
| সত্ত্বা | ভুল | — | সাধারণত বানান ভুল বা টাইপিং এর কারণে |
| স্বত্ব | সঠিক, ভিন্ন শব্দ | অধিকার, মালিকানা, বৈধ অধিকার | আইনি প্রসঙ্গ, মালিকানা বা অধিকার সংক্রান্ত আলোচনা |
বাংলা সাহিত্য ও দার্শনিক গ্রন্থে সত্তা শব্দের ব্যবহার বহুবার লক্ষ্য করা যায়। দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে, সত্তা হলো জীবন, অস্তিত্ব এবং মানুষের মৌলিক প্রকৃতির ধারণা। এটি কেবল শারীরিক বা ভৌত অস্তিত্ব বোঝায় না, বরং মানসিক, নৈতিক, সামাজিক ও নৈতিক দিককেও অন্তর্ভুক্ত করে। উদাহরণস্বরূপ, বলা হয়, “মানুষের সত্তা তার নৈতিকতা, চিন্তা-ভাবনা ও সামাজিক মূল্যবোধে নিহিত,” যা বোঝায় যে মানুষের অস্তিত্ব কেবল শারীরিক নয়, বরং তার মানসিক ও নৈতিক বৈশিষ্ট্য দ্বারা তার অস্তিত্বের প্রকৃতি নির্ধারিত হয়।
‘সত্ত্বা’ শব্দটি লেখালিখিতে সাধারণত ভুল বানান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অনেক সময় লেখক বা শিক্ষার্থী টাইপিং বা বানান ভুলের কারণে এই শব্দটি লিখে ফেলেন, যা সঠিক নয়। বিশেষত, প্রামাণ্য অভিধান ও সাহিত্যিক প্রবন্ধে এই বানানকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে গণ্য করা হয় না। তাই, শিক্ষাগত বা সাহিত্যিক লেখালিখিতে এটির ব্যবহার এড়ানো উচিত।
‘স্বত্ব’ শব্দটি সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ বহন করে। এটি সাধারণত আইনি ও প্রশাসনিক প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয় এবং বোঝায় কোনো বস্তু বা সম্পত্তির বৈধ অধিকার বা মালিকানা। উদাহরণস্বরূপ, “এই সম্পত্তির স্বত্ব সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে,” এখানে বোঝানো হয়েছে যে আইনগত অধিকার সরকারের হাতে রয়েছে। এটি ‘সত্তা’ শব্দের অর্থের সাথে মিল রাখে না। সুতরাং, সাহিত্যিক, দার্শনিক বা দৈনন্দিন কথোপকথনে এই দুটি শব্দকে বিভ্রান্তিকরভাবে ব্যবহার করা উচিত নয়।
বাংলা সাহিত্য ও দর্শনের বিভিন্ন দৃষ্টান্তে ‘সত্তা’ শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও অন্যান্য সাহিত্যিকের রচনায় মানুষ, প্রকৃতি বা বস্তুসমূহের সত্তা বোঝাতে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, রবীন্দ্রনাথের রচনায় বলা হয়েছে, “প্রকৃতির সত্তা মানব জীবনের নৈতিকতা ও চিন্তাশক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত,” যা বোঝায় যে মানুষের এবং প্রকৃতির অস্তিত্বের মৌলিক বৈশিষ্ট্য একে অপরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
শিক্ষাগত প্রয়োগেও ‘সত্তা’ শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ। নৈতিক শিক্ষা, দর্শন, সাহিত্য ও জীবনের মূল্যবোধ বোঝাতে এটি অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ, দর্শনের আলোচনায় বলা হয়, “মানব সত্তা তার নৈতিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধের সমন্বয়ে গঠিত,” যা মানুষের মৌলিক অস্তিত্ব ও ব্যক্তিত্বের ধারণা স্পষ্ট করে।