'ডাইপোল মোমেন্ট' কাকে বলে?

Avatar
calender 08-11-2025

ডাইপোল মোমেন্ট হলো এমন একটি পরিমাপ, যা একটি অণু বা পরমাণুর মধ্যে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আধানের (positive and negative charge) বিচ্ছিন্নতা বা দূরত্বের মাত্রা প্রকাশ করে। এটি মূলত একটি ভেক্টর রাশি, যার দিক থাকে ঋণাত্মক আধান থেকে ধনাত্মক আধানের দিকে। কোনো অণুতে যদি ইলেকট্রন বন্টন অসমান হয় এবং এর ফলে এক প্রান্ত ধনাত্মক ও অপর প্রান্ত ঋণাত্মক হয়ে পড়ে, তবে ঐ অণুকে বলা হয় পোলার মলিকিউল এবং সেই বৈশিষ্ট্যের পরিমাণগত মানকেই বলা হয় ডাইপোল মোমেন্ট (Dipole Moment)

অণুতে ডাইপোল মোমেন্ট থাকার অর্থ হলো অণুটি বৈদ্যুতিকভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বা পোলার (polar) প্রকৃতির। বিপরীতে, যেসব অণুতে ইলেকট্রন বণ্টন সমান থাকে এবং আধানের কেন্দ্র এক জায়গায় থাকে, সেগুলোকে বলা হয় নন-পোলার (non-polar), এবং তাদের ডাইপোল মোমেন্টের মান শূন্য হয়। ডাইপোল মোমেন্ট পদার্থবিজ্ঞানের পাশাপাশি রসায়নেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, কারণ এটি কোনো অণুর পোলারিটি, আন্তঃঅণু আকর্ষণ বল, দ্রাব্যতা এবং রাসায়নিক ক্রিয়াশীলতা সম্পর্কে ধারণা দেয়।

• ডাইপোল মোমেন্ট মূলত একটি পরিমাপের একক, যা দ্বারা বোঝানো হয় আধান ও আধানের মধ্যবর্তী দূরত্বের গুণফল।
• এটি μ (মিউ) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
• সূত্র অনুযায়ী, μ = q × d, যেখানে
q = আধানের মান (Coulomb-এ)
d = আধানের মধ্যবর্তী দূরত্ব (মিটার-এ)
μ = ডাইপোল মোমেন্ট (Coulomb-meter বা সাধারণত Debye-তে প্রকাশিত হয়)।
• ১ ডিবাই (Debye) = 3.336 × 10⁻³⁰ Coulomb-meter

উদাহরণ:
জলের (H₂O) অণুতে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের মধ্যে ইলেকট্রন বন্টন অসমান। অক্সিজেন অধিক ইলেকট্রোনেগেটিভ হওয়ায় ইলেকট্রন নিজের দিকে টেনে নেয়, ফলে অক্সিজেন প্রান্ত হয় ঋণাত্মক এবং হাইড্রোজেন প্রান্ত হয় ধনাত্মক। এতে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে আধান বিচ্ছিন্নতা ঘটে এবং জলের অণুতে একটি ডাইপোল মোমেন্ট সৃষ্টি হয়। এজন্যই জল একটি পোলার মলিকিউল, যার ডাইপোল মোমেন্ট প্রায় 1.85 D (Debye)

অন্যদিকে, কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂) অণুতে আধানের বন্টন সমানভাবে দুই দিকে ঘটে, ফলে দুটি ডাইপোল মোমেন্ট একে অপরকে বাতিল করে দেয়। তাই CO₂ অণু নন-পোলার, অর্থাৎ এর ডাইপোল মোমেন্ট শূন্য

ডাইপোল মোমেন্ট সম্পর্কে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য—
• এটি ভেক্টর রাশি, অর্থাৎ এর মান ও দিক দুটোই আছে।
• অণুর জ্যামিতি বা আকৃতির ওপর ডাইপোল মোমেন্ট নির্ভর করে।
• দুটি ভিন্ন ধরণের বন্ধনযুক্ত যৌগে (যেমন HCl, NH₃, H₂O) ডাইপোল মোমেন্টের মান বেশি হয়।
• ডাইপোল মোমেন্ট বেশি হলে যৌগের পোলারিটিদ্রাব্যতা বেশি হয়, বিশেষত পোলার দ্রাবকে।
• এর সাহায্যে অণুর আকৃতি নির্ধারণ করাও সম্ভব, যেমন লিনিয়ার (CO₂) বা বেন্ট (H₂O) আকৃতি নির্ণয়ে।

ডাইপোল মোমেন্টের মানের উদাহরণসহ তুলনা:

অণুর নাম ডাইপোল মোমেন্ট (Debye) অণুর প্রকৃতি
HCl 1.03 পোলার
H₂O 1.85 পোলার
NH₃ 1.47 পোলার
CO₂ 0 নন-পোলার
CH₄ 0 নন-পোলার

ডাইপোল মোমেন্টের মান যত বেশি, অণুর ধনাত্মক ও ঋণাত্মক প্রান্তের পার্থক্য তত বেশি হয়। এর ফলে অণুগুলোর মধ্যে আকর্ষণ বল বৃদ্ধি পায়, যা দ্রবণীয়তা, স্ফুটনাঙ্ক ও গলনাঙ্কের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।

রসায়নে ডাইপোল মোমেন্ট ব্যবহৃত হয়—
• অণুর পোলারিটি নির্ণয় করতে
মলিকিউলার স্ট্রাকচার বা জ্যামিতি যাচাই করতে
ইলেকট্রোনেগেটিভিটি পার্থক্য বিশ্লেষণে
রাসায়নিক বন্ধন শক্তি ও আকার নির্ধারণে

সার্বিকভাবে বলা যায়, ডাইপোল মোমেন্ট হলো একটি পরিমাপক রাশি, যা কোনো অণুর ভেতরে বিদ্যমান ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আধানের দূরত্বের পরিমাণ নির্দেশ করে। এটি অণুর পোলারিটি, রাসায়নিক আচরণ, দ্রাব্যতা ও গঠনগত বৈশিষ্ট্য বোঝার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অণুর ভেতরে ইলেকট্রন বণ্টনের ভারসাম্য যত কম, ডাইপোল মোমেন্ট তত বেশি—এই সূত্রেই গড়ে ওঠে অণুর বৈদ্যুতিক চরিত্র ও রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার মূল ভিত্তি।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD