প্রতিষ্ঠান কি, প্রতিষ্ঠান বলতে কী বোঝ?

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব, তাই সমাজের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে মানুষ কিছু নির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি করেছে। এই কাঠামো বা সংগঠনগুলোই হলো প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান এমন একটি সংগঠিত ব্যবস্থা যার মাধ্যমে সমাজে নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণ করা হয়। পরিবার, বিদ্যালয়, ধর্মীয় কেন্দ্র, সরকার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি—সবই একেকটি প্রতিষ্ঠান।
অর্থ: প্রতিষ্ঠান হলো এমন একটি সংগঠিত কাঠামো যেখানে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে মানুষ একত্রিত হয়ে কাজ করে। এটি সমাজের স্থিতিশীলতা ও উন্নতির জন্য অপরিহার্য।
উৎপত্তি: মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, প্রয়োজন ও আচরণের ধারাবাহিকতা থেকেই প্রতিষ্ঠানের জন্ম। সমাজে শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।
উদ্দেশ্য: প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজের চাহিদা পূরণ করা। যেমন—পরিবার মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটায়, বিদ্যালয় শিক্ষা দেয়, সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য:
-
প্রতিষ্ঠানের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে।
-
এটি নিয়ম, নীতি ও রীতিনীতির ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়।
-
এখানে কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের একটি নির্দিষ্ট কাঠামো থাকে।
-
প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দীর্ঘস্থায়ী ও স্থিতিশীল হয়।
-
এতে সদস্যদের মধ্যে সমন্বয় ও পারস্পরিক নির্ভরতা থাকে।
প্রকারভেদ: প্রতিষ্ঠান সাধারণত দুই প্রকার—
-
আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান: যেখানে নির্দিষ্ট নিয়ম, কাঠামো ও কর্তৃত্ব থাকে (যেমন—বিদ্যালয়, সরকার, ব্যাংক)।
-
অনানুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান: যেখানে সম্পর্ক অনানুষ্ঠানিকভাবে গড়ে ওঠে (যেমন—পরিবার, বন্ধু মহল, আত্মীয়তা)।
সমাজে প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা:
-
সমাজে শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
-
মানুষকে সামাজিক নিয়ম শেখায়।
-
পারস্পরিক সহযোগিতা ও যোগাযোগ বৃদ্ধি করে।
-
অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত ও নৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে।
-
নতুন প্রজন্মকে সমাজে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।
উদাহরণ: পরিবার একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান, যা মানুষকে ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ ও নৈতিকতা শেখায়। বিদ্যালয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যা জ্ঞান দেয়। রাষ্ট্র বা সরকার হলো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, যা আইন ও প্রশাসন পরিচালনা করে।
গুরুত্ব: প্রতিষ্ঠান ছাড়া সমাজ টিকে থাকতে পারে না। এটি সমাজের প্রতিটি সদস্যকে নিয়মিত, সুশৃঙ্খল ও সহযোগিতামূলক জীবনের দিকে পরিচালিত করে।
প্রতিষ্ঠান হলো সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি সমাজের কাঠামোকে দৃঢ় করে, মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখে। তাই বলা যায়, প্রতিষ্ঠান সমাজজীবনের প্রাণ।